Select Page

সফল প্রয়াস ‘ক্যাফে ডিজায়ার’

সফল প্রয়াস ‘ক্যাফে ডিজায়ার’

ক্যাফে ডিজায়ারে যেহেতু এক গল্প থেকে আরেক গল্পে সুচারুভাবে মুভমেন্ট ঘটেছে, একটা টান সবসময়েই ছিল যদিও ফিল্মের শুরুতে হুক করার মতো কিছুই নেই …

অনেকদিন পর কাজের বাইরে একাধারে বসে কোনো বাংলাদেশি কনটেন্ট দেখতে পারলাম। একটা নির্দিষ্ট থিমের ওপর মাল্টিপল স্টোরিলাইনকে মিলিয়ে মিশিয়ে গড়া ওয়েব ফিল্মটা যদি এন্থলজি হতো, তাইলে এটা সম্ভব হতো না হয়ত। কারণ তখন প্রতিটা গল্পের নির্মাণ আরও ভালো হতে হতো। যেহেতু এক গল্প থেকে আরেক গল্পে সুচারুভাবে মুভমেন্ট ঘটেছে, একটা টান সবসময়েই ছিল যদিও ফিল্মের শুরুতে হুক করার মতো কিছুই নেই। তাই নিশ্চিত ছিলাম না দেখা হবে কিনা। কিন্তু এত ডেলিশিয়াস কাস্ট আর গল্প জানার আগ্রহ রয়েই যায়।

৫-৬টা গল্পের মধ্যে সেরাটাকেই ওরা জমিয়ে রেখেছে দ্বিতীয় ভাগের জন্য (সানজিদা প্রীতি ও শ্যামল মওলা)। সম্পূর্ণ গাড়ির ভেতর কথোপকথন নির্ভর শর্ট ফিল্ম বাংলাদেশে কেউ এত ভালো পেরেছে কিনা জানা নেই। সম্ভব হয়েছে সানজিদা প্রীতির জন্য। হতে পারে আমি বায়াস, আর শ্যামল মওলাকে একইধরনের চরিত্রে প্রচুর দেখেছি। তাই প্রীতির কথা আলাদাভাবে বলতে হয়। তার মতো গুণী অভিনেত্রীরা কম কাজ করলে হঠাৎ হঠাৎ ঠিক যে ধরনের রোল করে সবাইকে তার ক্লাস বুঝিয়ে দিতে পারে, ঠিক তেমন একটা রোল! শ্যামল মওলা বরাবরের মতই ভালো। এই একটা গল্পের জন্যই এই গড়পড়তা ফিল্মটি দেখা যায়।

ক্যাফে ডিজায়ার; পরিচালক: রবিউল আলম রবি; চিত্রনাট্য: শিবব্রত বর্মন ও রবিউল আলম রবি; অভিনয় আজাদ আবুল কালাম, ইন্তেখাব দিনার, সোহেল মন্ডল, তমা মির্জা, খাইরুল বাশার, শ্যামল মাওলা, সানজিদা প্রীতি, সারিকা সাবরিন, আইশা খান, ফারহানা হামিদ, প্রিয়ন্তী উর্বী, প্রিয়াম অর্চি, বায়েজিদ হক জোয়ারদার; প্লাটফর্ম: চরকি

অথচ প্রথম ঘণ্টায়ও গল্পগুলা মন্দ ছিল না, বিশেষ করে দৌড়ের গল্পে নতুন মেয়েটা নজর কেড়েছে। কিন্তু ওর গল্পের ক্লাইম্যাক্সে কী হলো বুঝলাম না, হুট করে শেষ হয়ে গেল যেন। সারিকার গল্পটাও ভালো ছিল, কিন্তু অভিনয় আর রাইটিং বেশ বোরিং। আমার মনে হয় না খায়রুল বাশার ওই চরিত্রটা ধরতে পেরেছেন। এখানে সোহেল মণ্ডল হতে পারতেন। কারণ সোহেল মণ্ডলকে যেই চরিত্র দেয়া হয়েছে, সেখানে তার গেট আপে নতুনত্ব নেই, যেন কাস্টিং ডিরেক্টর ওই চ্যালেঞ্জটাই দিতে চায়নি তাদের। অথচ সোহেল খায়রুলের চরিত্রে আরও বেশি স্কোপ পেত।

সোহেলের গল্পটা অনেক লেন্থি এবং কিছুটা প্রেডিক্টেবল। ফিনালেটা জমজমাট হলেও আগে সুড়সুড়ি আরো কমানো যেত, ইনোভেটিভ কিছু করা যেত। দ্বিতীয় ভাগে তমা-সোহেল আর প্রীতি-শ্যামলের গল্প দুইটা একসাথে ছিল বিধায় ড্রয়িং রুমে পরিবার নিয়ে বসে দেখতেও বেগ পেতে হয়েছে। গাড়ির গল্পটার লেভেলে আরেকটা গল্প থাকলে বেটার হতো। মনে হয়না একটা আরেকটাকে যথেষ্ট কমপ্লিমেন্ট করতে পেরেছে।

যাই হোক, দিনার-আয়েশা’র গল্পটা মজার। কিছু ক্রিয়েটিভ চয়েজও মন্দ লাগেনি। কিন্তু দিনারকে ওই চরিত্রটায় নিতে পারিনি। ওই দৃশ্যগুলা আরেকটু স্বতঃস্ফূর্ত কাউকে নেয়া যেত, বা আরো বুদ্ধি খাটিয়ে বিশ্বাসযোগ্য করা যেত। হয়নি যেন। একদমই ওয়েস্টেড হয়েছেন আজাদ আবুল কালাম। জাত অভিনেতা জাতের গল্প পেলেন না। পুরানো আরমান পারভেজ তো পুরাই ক্যামিও। কিছুই পাননি।

আবহ সঙ্গীত সেরা। মেঘদলের শোয়েব ভাই আবারও প্রমাণ করেছেন he is the best music director working right now in BD। একটা মিউজিক আছে মাঝে প্রায় মন্টাজের মত কয়েক মিনিট বাজতে থাকে, ওটা Spotify তে পেলে প্রায়ই শোনা যেত।

সব মিলিয়ে ‘ক্যাফে ডিজায়ার’ সফল প্রয়াসই মনে হয়েছে। আবার একই সাথে Missed Opportunity। গতানুগতিক কনটেন্টের মাঝে প্রোডাকশান ও নির্মাণের দিক থেকে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। পরিচালনা, সম্পাদনা, স্ক্রিনপ্লে’র গাঁথুনি আরো অনেক ভালো করা যেত বলেই নেতিবাচক রিভিউ এসেছে অনেক। এই দেশে অভিনয় আর লেখনীর যেই খরা, সেখানে এমন ensemble cast ফিল্ম ভালো একটা আইডিয়া। আমার মনে হয় না, এক গল্প নিয়ে দর্শক ধরে রাখার নির্মাণশৈলী এখনো হয়েছে। কিছু টাইপকাস্ট এভয়েড এবং আরো বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় বের করে নিতে পারলে করতে পারলে সামনে আরো ভালো করা সম্ভব।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

সিনিয়র কন্টেন্ট এক্সেকিউটিভ, বঙ্গ বিডি। সাবটাইটেল ও অনুবাদ আমার পেশা। শখে মুভি রিভিউ করি।

মন্তব্য করুন