Select Page

সাড়ে তিন ঘণ্টার অনুশোচনা ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’

সাড়ে তিন ঘণ্টার অনুশোচনা ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’

ওটিটি প্লাটফর্ম, বড়পর্দায়— এমনকি ছোটপর্দায় ভালো কিছু এসেছে শুনলে আগ্রহ নিয়ে দেখি। এই দেখাটা যতটা না বিনোদনের জন্য, তার চেয়ে বেশি একটা সমালোচনা লেখার জন্য। ইতোপূর্বে বাংলাদেশের নির্মিত চলচ্চিত্র, ওয়েব সিরিজ নিয়ে বেশ কিছু পাঠকপ্রিয় রিভিউ লিখেছি। সেই মানসে সাম্প্রতিক বহুল আলোচিত ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ দেখলাম। প্রথমে এক কথায় বলি; জাস্ট গার্বেজ!

মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের মাদক কারবারি চক্রের ফ্লেভার দিয়ে গল্প শুরু করেছিল ঠিক, কিন্তু প্রথম দৃশ্যপটের পরপরই গল্প ড্রাগ মাফিয়ার দিক থেকে সরে গিয়ে একটা সাধারণ গৃহস্থ ঘরের চার দেয়ালে লোভ ও কামের নৈমিত্তিক ক্যাচালে ঢুকে গেছে। এরপর না হয়েছে ক্রাইম থ্রিলার, অ্যাকশন থ্রিলার বা রোম্যান্টিক জনরার কিছু।

গল্পের গরু গাছে পর্যন্ত উঠতে শুনেছি, কিন্তু কাহিনিকার ও পরিচালক শিহাব শাহীন তার ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’-এ গরুকে আকাশে ওড়াতে চেষ্টা করেছেন, তাও আবার বিনা পাখনাতেই।

আরো পড়ুন: মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন- বেটার দ্যান সিন্ডিকেট

সাড়ে তিন ঘণ্টার সিরিজের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে গোটা গল্পে কোনো টুইস্ট ছিল না। শুরু থেকে নিস্তরঙ্গ নদীর স্রোতের মতো গল্প শেষের দিকে গড়িয়ে গেছে। কোথাও কোনো বাঁক ছিল না, দর্শককে আলোড়িত করার মতো, চমকে দেয়ার মতো একটা ধাক্কাও না। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি ইতিবাচক কোনো মেসেজ নেই। না বলার মতো কাহিনি ছিল, না চিত্রনাট্যের কিছু হয়েছে, না ছিল কারো চোখে পড়ার মতো কোনো অভিনয়।

বলা হচ্ছে, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ শিহাব শাহিনের ওয়েব সিরিজ ‘সিন্ডিকেট’-এর স্পিন-অফ। ‘সিন্ডিকেট’ বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের স্ক্যাম নিয়ে কিছু একটা বানাতে গিয়ে অতিমাত্রায় ব্যর্থ। সেই সিরিজটির একটি চরিত্র অ্যালেন স্বপনের একটি দর্শকপ্রিয় ডায়ালগ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ দিয়ে এই স্পিন-অফের নামকরণ।

‘সিন্ডিকেট’ ও ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’-এর প্রথমটি ব্যাংকিং সেক্টর, দ্বিতীয়টি ড্রাগমাফিয়া চক্র নিয়ে করতে চেয়েছিলেন শিহাব শাহীন। তবে ব্যাংকিং স্ক্যাম ও ড্রাগ নেটওয়ার্ক; কোনোটিতেই তার যথেষ্ট দখল না থাকা ও পর্যাপ্ত গবেষণার অভাবে দুটি সিরিজের একটিও ‘কিছুই হয়নি’।

স্ক্রিনটাইম খুব কম হলেও জাদু চরিত্রে সেন্টুর অভিনয় কিছুটা ভালো লেগেছে। নাসির উদ্দিন খান বরাবরই ভালো অভিনয় করেন। নাম চারিত্রে তিনি সাবলীল, তবে আলাদা করে বলার মতো কিছু ছিল না। শামসুর রহমান রতনের স্ত্রী ও পরবর্তীতে অ্যালেন স্বপনের রক্ষিতা শায়লার মতো নেতিবাচক ও অপ্রধান একটা চরিত্রে মিথিলার মতো বড় একজন শিল্পীকে কাস্ট করা নির্মাতার পাশাপাশি অভিনেত্রীর জন্যও অবিবেচনাপ্রসূত মনে হয়েছে।

সব মিলিয়ে ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ পয়সা উসুল তো দূরে থাক, সাড়ে তিনটি ঘণ্টা নষ্ট করার অনুশোচনায় নিজের মাথার চুল নিজে ছেঁড়ার মতো একটা ওয়েব সিরিজ।

রেটিং: ২/১০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

রহমান বর্ণিল

"বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী"

মন্তব্য করুন