Select Page

সালতামামি: গল্প-নির্ভর সিনেমার বছর ১৯৯৪

সালতামামি: গল্প-নির্ভর সিনেমার বছর ১৯৯৪

দেশীয় চলচ্চিত্রের সামগ্রিক নিরিখে সাদামাটা বছর বলে উল্লেখ করা হয় ১৯৯৪ সালকে। উল্লেখযোগ্য তেমন ঘটনা না থাকলেও ব্যবসায়ে স্থবিরতায় কিছুটা হলেও শংকিত ছিল নির্মাতা। ছায়াছন্দ ম্যাগাজিনের জন্য সৈয়দ আওলাদ হোসেনের লেখা পর্যালোচনায় বলা হয়, অন্যান্য বছরের তুলনায় ব্যবসাসফল ছবির সংখ্যা এবার কিছুটা বেশী হলেও আহামরি গোছের ব্যবসা খুব একটা হয়নি। হাতে গোনা কটি ছবি সুপার-ডুপারহিট হয়েছে। সুপারহিট ছবির সংখ্যাও খুব একটা বেশি নয়। আর হিট ছবি বলে বিবেচিত হয়েছে যেগুলো সেগুলোর ব্যবসা ‘মার্ক’-এর ওপরে পৌঁছায়নি।

আরো বলা হয়, খুব বেশী আশাবাদ বলে আনতে পারেনি কিছু বড় মাপের ছবিও। বড় তারকারাও এ বছর অত্যন্ত কষ্টের সঙ্গে সাফল্যের মুখ দেখেছেন।

১৯৯৪ সাল শুরু হয়েছিল আবুল হোসেন খোকন পরিচালিত ‘মহাগ্যাঞ্জাম’ ও নূরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‌‘ঝড় তুফান’ ছবির মধ্য দিয়ে। শেষ হয়েছে আবুল খায়ের বুলবুল পরিচালিত ‘মীর জাফর’ ও এজে মিন্টুর ‘প্রথম প্রেম’ দিয়ে। মোট ৭৫টি ছবি মুক্তি পায়, আগের বছর ১৯৯৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭৭।

এই ৭৫টি ছবির মধ্যে সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত এবং শাবানা, আলমগীর, বাপ্পারাজ ও লিমা অভিনীত ‘ব্যারিস্টার’। এরপরে রয়েছে দেওয়ান পরিচালিত ও শাবানা, জসীম, দিতি ও সোহেল চৌধুরী অভিনীত ‘কালিয়া’। অনেকের মতে, ‘কালিয়া’র ব্যবসা ‘জজ ব্যারিস্টার’-এর বেশি। কিন্তু ছায়াছন্দ চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে ‘জজ ব্যারিস্টার’কে প্রথম স্থান দেয়। এরপর রয়েছে বছরের সবচেয়ে আলোচিত ও সর্বকনিষ্ট পরিচালক ইস্পাহানি আরিফ জাহানের ‘বিদ্রোহী বধূ’। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী শাবানা, আলমগীর, মৌসুমী ও বাপ্পারাজ অভিনীত এ ছবি যে গতিতে এগোচ্ছে তাতে এর ব্যবসা ‘জজ ব্যারিস্টার’ ও ‘কালিকা’কে ছাড়িয়ে যাবে বলে ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে বলা হয়।

ছায়াছন্দের সালতামামি অনুসারে ১৯৯৪ সালের ব্যবসাসফল ছবির তালিকায় রয়েছে- ডন, আখেরী রাস্তা, তুমি আমার, আত্ম অহংকার, অপরাজিত নায়ক, সবার উপর মা, কমান্ডার, বন্ধু বেঈমান, চরম আঘাত, ঘৃণা, সিপাহী, শক্তি পরীক্ষা, ডিসকো ড্যান্সার, অন্তরে অন্তরে, দুনিয়ার বাদশা, শাসন, বিক্ষোভ, সুজন সখি, ঘাতক, মৃত্যুদণ্ড প্রমুখ। সবচেয়ে হতাশ করেছে অবলম্বন, আজকের বাদশা, চোরের ছেলে, মাটির দুর্গ, জুলুমের বদলা, নাগ-পঞ্চমী ইত্যাদি। বেশ কিছু বড় মাপের ছবি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। যার মধ্যে আছে সোহরাব রুস্তম, দুঃসাহস, দেশপ্রেমিক ও স্নেহ। এ চারটি ছবিই বড় তারকা ও বড় বাজেটের।

এ বছর মুক্তি পায় সরকারি অনুদানে নির্মিত হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’। এ সিনেমা নিয়ে সালতামামি বলা হয়, হতাশ করেছে জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের অনুদানপ্রাপ্ত ছবি ‘আগুনের পরশমনি’। অবশ্য হুমায়ূন আহমেদের লেখা ও মুস্তাফিজুর রহমান পরিচালিত ‘শঙ্খনীল কারাগার’ অসম্ভব ব্যবসা করেছে। ছবির ব্যবসা অনেককে ঈর্ষান্বিত করে তুলেছিল। মজার কথা হচ্ছে, পত্রপত্রিকায় অনেকে এ ছবিতে ১৯৯৪ সালের উল্লেখ করলেও এটি ১৯৯২ সালের ছবি ও অনেকগুলো বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল।

ডন ছবিতে কবিতা ও রুবেল

পুরো বছরের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সৈয়দ আওলাদ হোসেন বলেন, বিদায়ী বছরটি ছিল ফোক ছবির জন্য বেদনার। খুব বেশি ফোক ছবি নির্মিত হয়নি এ বছর। তবে যে কটি মুক্তি পেয়েছে সেগুলো ব্যবসার নিরিখে সুবিধা করতে পারেনি। এ বছরের ছবির বেলায় যে বিষয়টি বেশি দেখা গেছে সেটি হলো ‘গল্প’। ছবির গল্প ভালো থাকলেই ছবি চলেছে। তারকা কিংবা পরিচালকের নামমূল্য এবার ততটা জুত আনতে পারেনি।

ব্যবসাসফল সেরা ১০ ছবি- জজ ব্যারিস্টার (দেলোয়ার জাহান ঝন্টু), কালিয়া (দেওয়ান নজরুল), বিদ্রোহী বধূ (ইস্পাহানী আরিফ জাহান), ডন (এ জে রানা), আখেরী রাস্তা (সোহানুর রহমান সোহান), আত্ম অহংকার (রায়হান মুজিব), তুমি আমার (জহিরুল হক), অপরাজিত নায়ক (আলমগীর কুমকুম), সবার উপরে মা (ফারুক হোসেন) ও কমান্ডার (শহীদুল ইসলাম খোকন)।

এ বছর তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে সফল শাবানা। তার অভিনীত তিনটি সিনেমা সুপার-ডুপারহিট রয়েছে। অন্যদের মধ্যে সোহেল রানা, আলমগীর, জসিম, ইলিয়াস কাঞ্চন ও রুবেল অন্যান্য বছরের মতো নিজেদের অবস্থান বজায় রেখেছেন। নতুনদের মধ্যে ছবির ব্যবসায় অবদান রেখেছেন সালমান শাহ ও ওমর সানী। মান্না, অমিত হাসান, আমিন খান, সোহেল চৌধুরী ও আলীরাজের জন্য সাদামাটা হলেও উত্তরণ ঘটেছে বাপ্পারাজের। নায়িকাদের মধ্যে দিতি ও মৌসুমী ছিলেন উল্লেখযোগ্য অবস্থানে। তাদের চাহিদা অন্যদের চেয়ে বেশি ছিল। চম্পা বাণিজ্যিক ছবির তুলনায় প্যারালাল সিনেমায় বেশি ঝুঁকে পড়ায় এ বছর দিতির কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। অঞ্জুর অবস্থা আশাব্যঞ্জক নয়। নূতনেরও একই অবস্থা। সুচরিতা, রোজিনা নিখোঁজ। এদের তুলনায় অরুণা বিশ্বাস ও কবিতার অবস্থা ভালো। শাবনাজের ফিরে আসা চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। শাহনাজ ও সোনিয়া চরিত্রের দাবি মিটিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এ বছর উল্লেখযোগ্য নতুন কোনো তারকা নেই। আগের বছরের সুপারফ্লপ শাবনূর ‘দুনিয়ার বাদশা’র বদৌলতে সুপারহিট তারকা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।  


Leave a reply