সিনেমার নাম কেন ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’?
নামি নাটক ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’-এর মাধ্যমে সিনেমা জগতে নাম লিখিয়েছেন।এর মাধ্যমেই চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটছে ছোটপর্দার অভিনেত্রী শার্লিন ফারজানার। তার সঙ্গে সহশিল্পী হিসেবে বড়পর্দায় নায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটছে ইমতিয়াজ বর্ষণের। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে শুটিং পর্ব।
সিনেমাটির নাম নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এক ফেসবুক পোস্টে তার ব্যাখ্যা দিলেন নির্মাতা—
“সিনেমার নাম প্রকাশের পর থেকে সর্বাধিক যেই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি, সে হলো ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ মানে কি? আমার কাছে ঊনপঞ্চাশ বাতাস মানে অসম্পুর্ণ প্রশ্বাস। কিন্তু এটি কোন আভিধানিক অর্থ নয়, এটি আমার চলচ্চিত্রের ভাবার্থ। এই ধরনের অনুভূতি ব্যাখাতীত হলেও একটু ব্যখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা যাক। ধরুন আপনি বেঁচে আছেন তাই দম নেন, কিন্তু সেটি পরিপূর্ণ হয় না, কারণ আপনার বাকি প্রশ্বাসটুকু আপনার ভালবাসার মানুষের কাছে আছে। আপনারা একসাথে দম নিলেই কেবল সেটা পরিপূর্ণ হয়, জীবনের স্বাদ পাওয়া যায়। যৌথতায় বিশ্বাসের এই জাতীয় ধারণায় এক ধরনের যুক্তিহীন পাগলামি আছে বৈকি! তো এই হলো মোটা দাগে আমার তরফ থেকে নামের ব্যখ্যা।
কিন্তু যেহেতু আভিধানিক ব্যখ্যা ছাড়া আমরা কোন কিছু মেনে নিতে প্রস্তুত নই। তাই এবার খানিকটা আভিধানিক ব্যখ্যা দেওয়া যাক—
‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ শিরোনামটি ধার করেছি ‘ঊনপঞ্চাশ বায়ূ’ বাগধারা থেকে। যার আভিধানিক অর্থ পাগলামি। ভারতীয় পৌরাণিক বৃত্তান্ত থেকে বাংলায় ব্যবহৃত ‘ঊনপঞ্চাশ বায়ু’ পদের উদ্ভব। ‘উন’ আর ‘পঞ্চাশ’ শব্দের সমন্বয়ে ‘ঊনপঞ্চাশ বায়ু’ পদের সৃষ্টি। ঋগ্বেদ সংহিতায় বর্ণিত ‘মরুৎগণ’ হলেন ঝঞ্চার দেবতাদের একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী। এরা সংখ্যায় ঊনপঞ্চাশজন, অর্থাৎ ঊণপঞ্চাশৎ মরুৎ। মরুৎ ও বায়ু সমার্থক করে বাংলায় ঊনপঞ্চাশবায়ু কথাটির ব্যবহার হয়, আর বায়ূর সমার্থক হলো বাতাস। ঊনপঞ্চাশজন ঝঞ্ঝার দেবতা একসঙ্গে কোনো কাজে বা কোনো কিছু করতে গেলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতো। তাঁরা কাজ করার সময় করেই যেত, ভালোমন্দ, ক্ষতি-লাভ কিছুই চিন্তা করত না। কারও মাথায় ভয়ানক গণ্ডগোল হলে, মেজাজ বিগড়ে গেলে কোনো কারণে সেও ‘ঊনপঞ্চাশ মরুৎ’ এর মতো ভয়ানক কর্মকাণ্ড শুরু করে দিতে পারে। এজন্য কারও মাথায় ভয়ানক গণ্ডগোল বুঝাতে ‘ঊনপঞ্চাশবায়ু চড়েছে’ কথাটির ব্যবহার করা হতো। যা আস্তে আস্তে পাগলামি অর্থ ধারণ করে। কারণ এমন বিবেচনাহীন কর্মকাণ্ড কোনো পাগল ছাড়া কেউ তো করতে পারে না।
বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান [পরিমার্জিত সংস্করণ ডিসেম্বর ২০০০-এর অষ্টাদশ পুনর্মুদ্রণ: জানুয়ারি ২০১৫] বায়ুরোগের অর্থ লিখেছে: ‘উন্মাদ রোগ; ক্ষিপ্ততা বা পাগলামি রোগ; বাতিক।’বায়ু শব্দটির অর্থে যদি পাগলামি নিহিতই থেকে থাকে, তাকে উনপঞ্চাশ গুণ বাড়িয়ে দিলে সে কী প্রচণ্ড ও প্রলয়ংকরী হয়ে উঠতে পারে তা সহজে অনুমেয়।”