সিনেমার ‘সমালোচক কেনা-বেচা’ নিয়ে অনলাইনে তর্ক
বাংলা চলচ্চিত্রের প্রচার-প্রসারে অনলাইন গণমাধ্যমের পাশাপাশি ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। সমালোচনা, আলোচনা বা তথ্য আদান-প্রদানে হয়ে ওঠেছে বিকল্প প্লাটফর্ম। এদিকে নির্মাতাদের নজর পড়েনি তা নয়। সেই কারণেই অনেক সময় ‘সিনেমার প্রচারণাকারী’ ও ‘সমলোচক’ একই লেভেলে নেমে যাচ্ছেন।
এই নিয়ে ফেসবুকে সোমবার গুরুত্বপূর্ণ একটি স্ট্যাটাস দিলেন দেশের অন্যতম সংবাদপত্র কালের কণ্ঠের বিনোদন বিভাগের প্রধান দাউদ হোসাইন রনি। আর তার সেই লেখার প্রেক্ষিতে আলোচনাও জমে ওঠেছে বেশ।
লেখাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে বিএমডিবি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
“প্রসঙ্গ : সমালোচক কেনা-বেচা ।
২০১০-২০১৩ সময় পর্যন্ত পত্রিকায় নিয়মিতভাবে চলচ্চিত্রের ব্যবচ্ছেদ [Bebochchhed] করতাম। এই অপ্রিয় কাজটি করে প্রচুর মানুষের ভালোবাসা পেয়েছিলাম। সে সময়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা ব্লগে বাংলা চলচ্চিত্রের সমালোচনা হতো না বললেই চলে। হলিউড-বলিউডসহ ইরানি-কোরিয়ান মুভির সমালোচনাই চোখে পড়ত বেশি।
পুরনো বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে গবেষণামূলক লেখালিখি হলেও সমসাময়িক ছবিগুলোকে সমালোচনার যোগ্য মনে করতেন না অনেকে। ‘ক্ষ্যাত’ উপাধি পাওয়ার ভয়ে অনেকেই এড়িয়ে চলতেন। দু-একজন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কিছু একরৈখিক সমালোচনা অবশ্য লিখতেন। এমন সময় পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ব্যবচ্ছেদ’ ফেসবুকে জায়গা করে নেওয়ায় অনেকেই সাহস পেলেন। ‘আমার দেশ’-এ প্রকাশিত মাহফুজুর রহমানের সমালোচনাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ব্লগ, ফেসবুকে একের পর এক সমসাময়িক বাংলা ছবির সমালোচনা আসতে শুরু করলো। পরবর্তীতে অনেকেই এই ট্রেন্ডে সামিল হয়েছেন।
চারদিকে প্রচুর সমালোচক তৈরি হয়ে গেলো। এদের বেশিরভাগের সঙ্গেই আমার সখ্য হয়েছে। সবার গঠনমূলক সমালোচনা কিন্তু বিফলে যায়নি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অনেক অপ্রয়োজনীয় ‘ট্র্যাডিশন’ ভেঙে সত্যি সত্যি বেরিয়ে এসেছেন কিছু মূলধারার নির্মাতা।
এবার আসি মূল কথায়। যে কারণে পোস্টটি লিখতে হলো…
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যারা চলচ্চিত্র সমালোচনা করছেন, তাদের একটা কমিউনিটি গড়ে উঠেছে। আর এই কমিউনিটির দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন নির্মাতা-প্রযোজকরা। ছবির প্রিমিয়ারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হচ্ছেন এই সমালোচকরা। ছবির প্রচারণায়ও সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়ছেন তারা। মাস ছয়েক ধরে এই প্রবণতা বেশ চোখে পড়ছে। আর এর প্রভাব পড়েছে সমালোচনায়। দলবেঁধে প্রায় একই রকমের প্রশংসা পাচ্ছে কিছু ছবি। আবার কিছু ছবিকে সচেতনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। একটা ছবি আমার ভালো লাগতেই পারে, কিন্তু একজন সমালোচক হিসেবে আমি চাইব না অন্য সমালোচকদেরও একই রকম ভালো লাগুক। মতপার্থক্য থাকা ভীষণ জরুরি।
আমি জানি, এই স্ট্যাটাস পড়ে অনেকেই আমার ওপর রেগে যাবেন। কিন্তু চোখ বন্ধ করে একবার নিঃস্বার্থভাবে ভেবে দেখলে আপনি সত্যিই আমার ওপর রাগ করতে পারবেন না।
সমালোচনা সবাই করতে পারে না, সমালোচনা করতে পারাটা একটা বিশেষ গুণ। আপনার এই গুণটিকে হেফাজতে রাখুন, লোভ আর স্বার্থের উর্ধ্বে রাখুন।
চলচ্চিত্রের সামগ্রিক উন্নতিতে আপনার অবদান রাখুন।”