
সিনেমা হিসেবে কতটা ‘ইনসাফ’ হলো
সিনেমা: ইনসাফ; পরিচালক: সঞ্জয় সমাদ্দার; অভিনয়ে: শরিফুল রাজ, তাসনিয়া ফারিন, মিশা সওদাগর, মোশারফ করিম।

‘ইনসাফ’ শুধু একটি শব্দ নয় ! এটি একটি জীবনবোধ !
ইনসাফের পোস্টার ফেসবুকে পরিচিত করার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল এই লাইনটি। বড়পর্দায় চলচ্চিত্রটির চিত্রায়ন দেখে মনে হলো দুটো চ্যালেঞ্জ ভালোই ভুগিয়েছে পরিচালককে। প্রথমত বাজেট সংকট, দ্বিতীয়ত ফ্রেমিং পরিকল্পনা। প্রথমটি বাধ্য করেছে পরিচালককে মিড আর ক্লোজ শটে নির্ভর করতে যেন সেট নির্মানে কিছুটা খরচ কমানো যায়। দ্বিতীয়টির আলাপে আসবো একটু পরে…
সিনেমা ও সাহিত্যতে ইনসাফকে আরেকটা সুন্দর নামে ডাকা হয়, “পোয়েটিক জাস্টিস”। এর দ্বারা বোঝায় এমন সুবিচার, যে বিচারের মাধ্যমে অপরাধী উপযুক্ত শাস্তি পাবে এবং সৎ ব্যক্তি ন্যায্য পুরস্কার পাবে। ইনসাফের পথে এগোতে পরিচালক তার প্লটে মোটা দাগে দুটো ডাইমেনশন তৈরি করেছেন। একমাত্রায় একজন বিসিএস ক্যান্ডিডেটের শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার, অন্যটিতে দুটো প্রতিদ্বন্দ্বী সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রতিদ্বন্দ্বীতা।
এটা কি আট পর্বের সিরিজ যে.. বিল্ডআপ..বিল্ডআপ..এটা সিনেমা
পরিচালক বিল্ডআপকে অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় এতে সময়ের অপব্যবহার করেন নি। ফলাফল সিনেমায় মোশনের ঝড়ে ইমোশনের “ই” স্রেফ উড়ে গিয়েছে। এতোটাই ফাস্ট মুভিং যে পর্দার পাত্র-পাত্রীদের সাথে দর্শকদের আত্মিক সম্পর্ক হওয়া স্পেসটুকু নেই। এখানেই ইনসাফের সবচাইতে বড় ব্যর্থতা।
এবার আসি শুরুর দ্বিতীয় আলাপে। মেট্রোপলিটন পুলিশের লোকেরা জেলা পুলিশের ইউনিফর্ম গায়ে কিংবা এএসপির ইউনিফর্মে তিন তারকা – ফ্রেমকে বিশ্বাসযোগ্য করা নিয়ে হোমওয়ার্কের অভাব ছাড়া কিইবা বলা যায় একে!! এর সাথে ডাবিং এর গোলমাল, শটের ইনকন্সিস্টেন্সি – তা এমনই যে এক দৃশ্যে যে গাড়িতে করে পুলিশে আসে পরের দৃশ্যে তা নিয়ে সন্ত্রাসীরা পালায়। চরিত্রদের মধ্যে মুখোমুখি কনভারসেশন আর শট-রিভার্স শটের অতিব্যবহার চলচ্চিত্রটির গতিতে একঘেয়েমি এনেছে। একটা ওয়াইড ক্যামেরার শট ছিল ওটাতে আবার ব্যাকগ্রাউন্ড মনে হয়েছিল ফেইক। ভিএফএক্স যাচ্ছে তাই। কস্টিউম আর প্রস্থেটিক আরো মনোযোগ দাবী করে।
ছবিতে স্বস্তির বাতাস ছিল শরিফুল রাজের অভিনয়। অন্তত তিনটে আলাদা রুপে পর্দায় ধরা দিয়েছেন রাজ। তিনটে চরিত্রের হাইট আলাদা, হাইট অনুযায়ী রাজের অভিনয়ও ছিল তিনটি আলাদা স্কেলে। বিশেষত চিত্রশিল্পী আর গ্যাংস্টার দুটো রুপকে খুব ভালোভাবে আলাদা করেছেন রাজ। একশন দৃশ্যগুলোতে বেশ সাবলীল লেগেছে রাজকে।
তাসনিয়া ফারিনকে পর্দায় দেখতে সুন্দর লেগেছে। কস্টিউম ঠিকঠাক ক্যারি করেছেন। ইন্ট্রোডাকশন সিন আর একশনে ফারিনের চাইতে ভালো কোন কাস্ট মাথায় আসেনি। এই শুরুর চমকটা পুরো সিনেমা জুড়ে ছিল না, এর জন্য বেশি দায় অবশ্যই যিনি চরিত্রটা লিখেছেন তারই।
মিশা সওদাগর তাঁর চরিত্রে হাঁসফাঁস করেছেন, কমিকগুলো কাজে দেয়নি। ফজলুর রহমান বাবু যেন ইদানিং একই রকম চরিত্রই করছেন সব সিনেমায়। মোশারফ করিমকে ভিন্নরুপে দেখা গিয়েছে কিন্তু চরিত্র খুব সম্ভবত সাবপ্লটকে জোড়া দেওয়ার জন্যই বানানো।
তবে সিনেমা নির্মানশৈলীতে একটা জিনিস নজরে এসেছে, তিনটে প্রধান চরিত্রের ইন্ট্রোডাকশনে তিনটে আলাদা বিজিএমের ব্যবহার। এছাড়াও কালার গ্রেডিং eye soothing, ক্যামেরার steady. একশন দৃশ্য দুই-একটা ছাড়া বাকিগুলো বাস্তবসম্মত লেগেছে।
ইনসাফ চরিত্রগুলোকে কারো যদি সিভিয়ার মুড সুইং এর শিকার বলে মনে হয় তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। ইনসাফ যেন যতদ্রুত সম্ভব পোয়েটিক জাস্টিসে পৌঁছানোর তাড়াতে ছিল। তবে একশন আর ভায়োলন্সের সিনে ইনসাফ আনন্দ দেবে। আর শেষে দর্শকদের যেন ছোট্ট একটা চমক আছে, সেই চমক না হয় হলে গিয়ে ভাঙ্গুক।