Select Page

সিরাজ হায়দার: কত ছবিতে কত রূপ

সিরাজ হায়দার: কত ছবিতে কত রূপ

কত ছবিতে যে অভিনয় করেছেন তার সংখ্যা বের করা কঠিন। তিনি কত যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারও হিশাব দিতে বেগ পেতে হবে। জজ, ব্যারিস্টার, নেতা, কাঠমোল্লা, ডাক্তার, পুলিশ, নায়ক-নায়িকার বাবা বা কখনো খলনায়ক। তার চরিত্রের ভেরিয়েশন অনেক। পছন্দের অভিনেতা।

বলছি আমাদের ছবির সুপরিচিত অভিনেতা সিরাজ হায়দারের কথা। শুধু ছায়াছবির নয় বেতার, টিভি, মঞ্চের অভিনেতা। মূল নাম খন্দকার ইমদাদুল হক। জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, মুন্সিগঞ্জে। মারা যান ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি, ঢাকায়। সহকারী পরিচালক ছিলেন জল্লাদের দরবার, অঙ্গীকার, জীবন নিয়ে জুয়া ছবিতে। ‘আদম ব্যাপারী’ নামে একটি ছবির পরিচালক ছিলেন। প্রথমদিকের উল্লেখযোগ্য ছবি খোকন সোনা, আইন আদালত ইত্যাদি।

পেশাদার অভিনেতার সব গুণই সিরাজ হায়দারের মধ্যে ছিল। তাঁর কণ্ঠ বলিষ্ঠ। দূর থেকে শোনা যায় এমন। অভিনয়ে নিজস্বতা আছে।

মনে পড়ে ‌আখেরি মোকাবেলা’ ছবিতে শাবানা-জসিমকে হাসপাতাল থেকে পালানোর সময় বাধা দেয়ার মুহূর্তটি। ভণ্ড ডাক্তার ছিলেন ছবিতে। বিষভরা ইনজেকশন জসিমকে পুশ করতে গেলে জসিমই উল্টো পুশ করে দেয় তাকে। তড়পাতে তড়পাতে মারা যায়। মারা যাবার আগে বিষের ক্রিয়ায় ছটফটানির অভিনয় জীবন্ত ছিল।

‌‘নরপিশাচ’ ছবিতে হুমায়ুন ফরীদির সাথে যোগ দিয়ে রোজী আফসারীকে সামাজিকভাবে ছোট করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। কাঠমোল্লার পরিচয় দিয়ে চরিত্রহীন রূপটা দেখায়। রোজী বটি চালিয়ে দেয় সিরাজ হায়দারের গলায়।

নেতার ভূমিকায় অনেক ছবিতে ছিলেন। ‘ভালোবাসা কারে ক’’ ছবিতে রিয়াজ তাকে খুন করার হিস্যা নেয়। দৌড় করিয়ে ছুরি চালিয়েও দেয় পেটে। নেতার ভূমিকাতেও অসাধারণ তিনি। যৌথ প্রযোজনার ‘মনের মাঝে তুমি’ ছবিতেও তাকে দেখা গেছে নেতার ভূমিকায়। পূর্ণিমার বাবা দুলাল লাহিড়ী তাকে সমীহ করত।

পুলিশের ভূমিকায় অনেক ছবিতে ছিলেন। মান্নার ‘পারলে ঠেকাও’ ছবিতে মান্নাকে যন্ত্রমানব করার উদ্যোগ তিনিই নেন এবং মান্নার সাথে তাকেও যন্ত্র পরে কথা বলতে হত ডাক্তারের পরামর্শমতো। বেশ ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার ছিল। পুলিশের চরিত্রে নেতা বা গডফাদারের তোষামোদী ও ঘুষ খাওয়ায় তাকে ওস্তাদ দেখা যেত।

‘মনে রেখো আমায়’ ছবিতে প্রধান খলনায়ক ছিলেন। রং করা চুলে কিছুটা স্টাইলিশ ছিলেন। ববিতার শত্রুর ভূমিকায় দেখা গেছে।

জজ ব্যারিস্টারের ভূমিকায় অনেক ছবিতে ছিলেন। ব্যারিস্টারের ভূমিকায় সৎ/অসৎ দুইভাবেই দেখা গেছে।

পজিটিভ রোলেও অনেক ছবিতে ছিলেন তবে নেগেটিভ রোলে তিনি বেশি শক্তিশালী।

অনেক লম্বা সময় কাজ করেছেন সেসূত্রে অনেক বড় বড় আর্টিস্টের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার আছে। প্রায় দুটি প্রজন্ম দেখার অভিজ্ঞতা তার আছে।

এ অভিনেতা আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন তার অসংখ্য কাজ দিয়ে।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন