![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
সুপারহিট ছবির সুপারহিট নায়ক ওয়াসিম
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2019/03/wasim_bmdb_image.jpg?resize=857%2C575&ssl=1)
ছবিতে সুচরিতার সাথে যে তরুণটিকে দেখতে পাচ্ছেন তাঁর নাম ওয়াসিম। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের সোনালি সময়ের যারা দর্শক তাঁদের কাছে ওয়াসিম নামটি খুবই পরিচিত ও প্রিয় একটি নাম। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের ব্যবসা সফল ছবির তালিকা হিসাব করলে যে নামটি চিরকাল সেরা ১০ এর সফল নায়কের তালিকায় থাকবেন তিনি হলেন ওয়াসিম।
সেই সাদাকালো , আংশিক রঙিন ও রঙ্গিন তিন রকমের বাণিজ্যিক বিনোদনধর্মী অসংখ্য সুপারহিট ছবির নায়ক হলেন ওয়াসিম অথচ যার কথা এই প্রজন্মের সিনেমা দর্শকরা জানে না এমনকি তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে অনলাইনে নেই ওয়াসিম সম্পর্কে কোন তথ্য।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2019/03/wasim3_bmdb_image.jpg?resize=920%2C648&ssl=1)
১৯৫০ সালের ২৩ মার্চ চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন ওয়াসিম। মুল নাম মেসবাহ উদ্দিন। ১৯৬৮ সালে সুঠাম দেহের অধিকারী ওয়াসিম পূর্ব পাকিস্তানের ‘বডি বিল্ডার’ হিসেবে ‘মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান ‘ খেতাব অর্জন করেন । স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে পরিচালক মহসিনের ‘রাতের পর দিন ‘ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আগমন করেন। উল্লেখ্য যে ‘রাতের পর দিন ‘ প্রথম চুক্তি করা চলচ্চিত্র হলেও সর্বপ্রথম মুক্তি পায় এস এম শফির ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’। সেই সুত্রে ওয়াসিমের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি হলো শফির ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2019/03/wasim_bmdb_image1.jpg?resize=800%2C484&ssl=1)
প্রথম ছবিতেই লম্বা চওড়া সুঠাম দেহের অধিকারি ওয়াসিম দর্শকদের মন জয় করে নেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। রাজ্জাক, আলমগির, সোহেল রানা ত্রয়ীর সাথে সাথে ওয়াসিমও এগিয়ে যান দুর্দান্তভাবে।
ওয়াসিমকে আমি প্রথম দেখি ৫/৬ বছর বয়সে ফখরুল হাসান বৈরাগীর ‘নূরী’ ছবিতে। যদিও এরও আগে ওয়াসিমকে দেখলেও আমার মনে নেই। কিন্তু হলে ছবি দেখা বুঝতে শেখার পর নূরী ছবিতেই প্রথম ওয়াসিমকে দেখি যার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন অঞ্জনা। আমার এখনও মনে আছে সাদাকালো এই ছবিটা দেখতে সপরিবারে সিলেটের অবকাশ সিনেমা হলে গিয়েছিলাম। আমরা হলে ঢোকার সামান্য আগেই ছবি শুরু হয়েছে। আমরা যখন লাইটম্যানের লাইট দিয়ে আসন খুঁজছি তখন পর্দায় ভয়ংকর এক তুফান/ টর্নেডো দেখাচ্ছিল যা ছিল ছবিরই গল্পের অংশ। আমি তো তুফান দেখে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেছি। আব্বার হাত শক্ত করে ধরেছি। এই ঝড়েই শিশু নূরী [অঞ্জনা] হারিয়ে যায় যা দিয়ে ছবির মুল গল্প শুরু।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2019/03/wasim_bmdb_image2.jpg?resize=800%2C533&ssl=1)
এরপর সাদাকালো আরও কিছু ছবিতে ওয়াসিমকে দেখি যার মধ্যে দেওয়ান নজরুলের দোস্ত দুশমন, আসামী হাজির, ওস্তাদ সাগরেদ, ধর্ম আমার মা, ফখরুল হাসান বৈরাগীর লুটেরা, শফি বিক্রমপুরির রাজদুলারী, জহিরুল হকের প্রাণ সজনী আর রঙ্গিন যুগে এস এম শফির দি রেইন, এফ কবিরের সওদাগর, নরম গরম, ইবনে মিজানের চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, কবির আনোয়ারের দিনকাল ছবিগুলোতে ভালো লেগেছিল।
তবে আমার কাছে ওয়াসিম সবচেয়ে প্রিয় ‘আসামী হাজির’ ছবির ডাকাত জগনু ও সহজ সরল প্রেমিক মজনু চরিত্রে। এ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে ওয়াসিম গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ওয়েস্টার্ন প্যাটার্নের আসামী হাজিরে ওয়াসিমের স্টাইলটা তখনকার সময়ের তরুনদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। আমি ও আমার পাশের বাসার বন্ধু রনি মিলে আসামী হাজির ছবির ডাকাত জগনু [ওয়াসিম] ও ধর্মা [জসিম] সেজে খেলা করতাম।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2019/03/wasim_bmdb_image-1.jpg?resize=1080%2C613&ssl=1)
পরিবার ছাড়া যখন একা একা বন্ধুদের নিয়ে ছবি দেখা শিখেছি তখন ওয়াসিমের ক্যারিয়ার শেষের দিকে সেই কারণে জমজমাট ওয়াসিমকে পাইনি। রাজ্জাক, আলমগীর সোহেল রানা, জসিমকে তখনও দুর্দান্ত রূপে পেলেও ওয়াসিমকে পাইনি। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে পোশাকি বা ফোক ছবি ব্যাতিত ওয়াসিমের চাহিদা পরতির দিকে থাকে তাই ৯০ দশকে আলমগীর সোহেল রানা, জসিম, কাঞ্চন বক্সঅফিস কাঁপালেও ওয়াসিম সেইভাবে আর পারেননি।
১৯৯৫ সালের দিকে ওয়াসিম ‘নয়া তুফান’ নামে একটি ছবি প্রযোজনা করেছিলেন যা ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়। এরপর ওয়াসিম আর কোন ছবি প্রযোজনা করেছিলেন কিনা জানিনা ।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2019/03/wasim_bmdb_image3.jpg?resize=800%2C1081&ssl=1)
ওয়াসিম মূলত ক্যারিয়ারের প্রথম ১০ বছরে সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছিলেন এবং তার ৯৫% সুপারহিট ছবিগুলোও সেই সময়ের। আসলে ওয়াসিম ছিলেন সম্পূর্ণ বিনোদনধর্মী ছবির অভিনেতা যার ফলে বিকল্পধারার ছবিতে ওয়াসিম’কে পাওয়া যায়নি। পোশাকি, ফোক ফ্যান্টাসি ছবিতেই ওয়াসিমের সাফল্য বেশি।খলনায়ক হিসেবে জসিমের যতগুলো সফল ছবি তার বেশির ভাগেই ওয়াসিম আছেন। ওয়াসিম ও জসিমের রসায়নটা ছিল দুর্দান্ত।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2019/03/wasim4_bmdb_image.jpg?resize=837%2C637&ssl=1)
ওয়াসিম সর্বমোট ১৩৩টি ছবিতে অভিনয় করেন যারমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছবিগুলো হলো রাতের পর দিন , ছন্দ হারিয়ে গেলো, বাহাদুর ,আলাদিন আলীবাবা সিন্দবাদ, নিশান, দি রেইন, বন্দুক, ডাকু মনসুর, তুফান, দখল,দোস্ত দুশমন, বারুদ, আসামী হাজির, ওস্তাদ সাগরেদ, নুরী, সওদাগর, গঙ্গা যমুনা, রাজদুলারি, নিশান , আলিফ লায়লা, আবে হায়াত,বানজারান, রঙিন অরুন বরুন কিরণমালা, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, আঁচল পয়সা, জীবনধারা, দিনকাল, ডাকাত, মাটির দুর্গ । বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এই গুণী অভিনেতাকে জানাই অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2022/09/anju_gosh_wasim_bmdb_image.jpg?resize=857%2C1132&ssl=1)
ছবি ও তথ্য সহযোগিতা ও কৃতজ্ঞতায় মীর শামসুল আলম বাবু ও অন্যান্য সূত্র