![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
সেকাল একালঃ গ্রহণ-বর্জন
সিনেমা নিয়ে লেখালেখিতে সেকাল-একাল মেলবন্ধন করা একটা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।পুরনো দিনের সিনেমা নিয়ে ভাবলে বা লিখলে নতুন দিনের সিনেমার জন্য তা কতটুকু কার্যকরী হবে সে চিন্তাটা করা আরো বেশি জরুরি। এ বিষয়ে কিছু মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। প্রতিক্রিয়াশীলতা আর সমালোচনার মধ্যে সুনির্দিষ্ট তফাত আছে। প্রতিক্রিয়াশীলতাও এক ধরনের সমালোচনা কিন্তু প্রকৃত সমালোচনার ধাঁচ আলাদা।সেখানে যৌক্তিক অবস্থানের সাথে পরিমিতিবোধ রক্ষা করা বড় ব্যাপার বটে।
আমাদের শুধু নয় বিশ্বের যে কোনো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি তাদের পুরনো দিনের জন্য গর্বটাই বেশি অনুভব করে। যখন কেউ বলে ‘old is gold’ সে কথাটার ভেতর ঢুকে কথাটাকে নিখুঁতভাবে উপলব্ধির সুযোগ আছে। ‘gold’ শব্দটিকে বাংলায় এনে বিভিন্নভাবে প্রয়োগের সুযোগ থাকে যেখানে ভালো লাগার ব্যাপার আছে।যেমন – ‘স্বর্ণালী দিন’, ‘স্বর্ণালী সময়’, ‘স্বর্ণালী সঙ্গিনী’, ‘স্বর্ণালী সন্ধ্যা’ এরকম। প্রয়োগগুলোর দিকে খেয়াল করলে nostalgic emotion খুব ভালোমতই অনুভব করা যায়। যখন দেখি পুরনো দিনের একটা সিনেমা, ব্যক্তিত্ব বা গান নিয়ে কথা বলতে গেলে ‘আবেগ’-কে মেনশন করে নেতিবাচকভাবে সমালোচনা করা হয় সেটা ভীষণ খারাপ লাগে। পুরনোকে দেখে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন দিন এগিয়ে যাবে।
কিছু পয়েন্ট করে বলছি –
* আপনি যতই আধুনিক হন না কেন আপনার বাবার অভ্যাসগুলোকে আপনি মিস করবেন, মনেপ্রাণে ভালোবাসবেন। যখন দেখবেন বাবা নেই সেটা আরো পোড়াবে আপনাকে।বাবার কথা গর্ব করে সবাইকে বলবেন। পুরনো দিনের সিনেমাও যা কিছু পুরনো তাকে আবেদন রেখে দেখায় সেজন্য ‘আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে’ এটা আপনাকে যত সহজে emotional attachment দেবে নতুন দিনের গান তত গভীরভাবে দেবে না।
* আপনি যতই মোবাইল ডাউনলোডের যুগে অভ্যস্ত হন না কেন পুরনো দিনের টেপরেকর্ডার বা ক্যাসেটের দিনগুলো যদি কাটিয়ে আসেন তবে ঐগুলো আপনাকে টানবে। কারো কাছে এখনও যদি সেগুলো থাকে তো দেখবেন তাকে লোকে সম্মানের চোখে দেখে।
* আপনি ডিজিটালে এসে অ্যানালগকে যতই অবজ্ঞা করুন না কেন ঐ অ্যানালগের সময়টাতেই ৩৫ মিলিটারের সাহায্যে রবিশস্য ফলেছে। ঐ সিনেমাগুলোই আপনাকে বারবার দেখাচ্ছে সিনেমা কিভাবে বানাতে হয় আর দেখার চোখ যদি অপরিপক্ব হয় তবে না মাকাল ফলের মতো করে গ্রহণ করবে আজকের প্রজন্ম। ফলাফল হিশেবে সিনেমাহলে গিয়ে সিনেমার মধ্যে ‘টেলিফিল্মে’-র আবহ পেয়ে মেজাজ যাবে বিগড়ে।এখন খেয়াল করে দেখুন তো পুরনো সিনেমার খুঁটির জোর কতটা।
* আপনি চোখের সামনে রাজ্জাক, বুলবুল আহমেদ, শবনম, অলিভিয়া, শাবানা, কবরী, ববিতা, সুচন্দা, ওয়াসিম, উজ্জ্বল, সোহেল রানা, জাফর ইকবাল, ফারুক, জসিম, কাঞ্চন, মান্না, রুবেল, অণ্জু, দিতি, চম্পা, শাবনাজ, নাঈম, সালমান শাহ, ওমর সানী, আমিন খান, মৌসুমী, শাবনূর, রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল, পূর্ণিমা, শাকিব, তাদের দেখার পর পরবর্তীকালের মাহী, আঁচল, পরীমণি, আরেফিন শুভ, বাপ্পী, শিপন, মীম, ফারিয়া, এবিএম সুমন তাদেরকে সিনেমার পুরনো তারকা বা স্টারডম কিংবা অভিনয়-স্টাইল ইত্যাদিতে বিশ্লেষণ করে দেখুন তো কী পান। হ্যাঁ, খুব বড়মুখ করে আধুনিকতার কথা সবার আগে হয়তো বলবেন কিন্তু সে আধুনিকতা কি মেইনস্ট্রিম সিনেমার প্রকৃত স্বাদ এনে দিতে পেরেছে?..কিছু পেরেছে।যেগুলো পেরেছে দর্শকভেদে তারপরেও আরো আশা করার বাস্তবতা দেখা গেছে।তার মানে পুরনো সিনেমা, তারকা এসবের ধারেকাছেও অাধুনিক কোনোকিছু দাঁড়াতে পারেনি।
* আপনার বাবার আমলে যে স্টাইলে খাওয়া হত, বেড়ানো হত, চিঠি লিখে হৃদয় লেনদেন হত সেসবকে ‘so called’ আপনি বলতেই পারেন কিন্তু আজকের দিনে সেসবের জন্যই আপনাকে হাহাকার দেখতে হবে। পত্রিকার পাতা খুললে পুরনো দিনের কথা বলে বলে আপনাকে নস্টালজিক করার আয়োজনটা বারবার করানো হবে। দেখবেন লেখার জন্য বিষয় সিলেক্টেড হয়েছে ‘ফেলে আসা দিন’..কিংবা কবির লাইন চোখে পড়বে ‘দাও ফিরে অরণ্য, লও এ নগর।’ আপনি যতই বর্তমান কবিতা পড়ুন আপনাকে আলোড়িত করার জন্য ‘শোন মা আমিনা রেখে দে রে কাজ/ ত্বরা করে মাঠে চল’ কিংবা ‘তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়’ এমন দু’চারটা লাইনই যথেষ্ট।
* ইউটিউবে পুরনো সিনেমা ও গানের নিচে যে কমেন্টগগুলো থাকে তার সাথে এখনকার সিনেমা ও গানের কমেন্টগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণে এলে দেখবেন নির্মাণের ‘ন্যাচারালিটি’-র সাথে দর্শকের পছন্দের ‘ন্যাচারাল ফিলিংস’ কতটা পার্থক্য করে।এখনকার সবকিছুর জন্য ৮০% গালিগালাজ দেয় কমেন্টদাতারা।কেন দেয় কারণটা খোঁজা গুরুদায়িত্বের পর্যায়ে পড়ে।
এই যে এত কথা বললাম হয়তো ভাবছেন এ ছেলেটা আসলে পুরনো দিনেই পড়ে থাকতে চায়, একদম ভুল ভাবছেন। পরিবর্তন চাই তবে পুরনোকে ভালোবেসে। পুরনো দিনের সিনেমা, গান, তারকা, অভিনয়, স্টাইল, স্টারডম ইত্যাদিতে আপ্লুত হয়েই নতুনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। পুরাতনকে জানাতে চাই। নতুনকে আবেগী করাতে চাই কারণ সে আবেগটা তাদেরকে চোখে অাঙুল দিয়ে দেখাবে অভিনয় একটা সাধনা, ইন্ডাস্ট্রি শুধু টাকা কামানোর জায়গা না তার প্রতিও আবেগ দরকার নিজের কাজটা মন দিয়ে করে দর্শকের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকা এবং আগামী প্রজন্মকে উদাহরণটাকে শ্রদ্ধাভরে গ্রহণ করানোর জন্য। দুই আবেগ এক হওয়া জরুরি। তার জন্য পুরাতন থেকে গ্রহণ-বর্জন তারতম্য রাখলেই হবে। পুরনো কথায় ‘ভালো লাগে, বললাম’ শুনতে যত ভালো লাগে বিকৃত অাধুনিকতায় ‘ভাল্লাগে, বল্লাম’ শুনতে তত ভালো লাগে না। ‘ম্যানিয়াক’ যত না দেয় তার থেকে কেড়ে নেয় অনেক অনেক বেশি।
তাই, আবেদন থাকবে লিখতে গিয়ে আমার আবেগকে যেন খাটো করে দেখা না হয়। আবেগ চিরন্তন যদি তার আবেদনটা বোঝানো যায়।
জয়তু ঢালিউড..