Select Page

স্বদেশী ‘টেররিস্ট’

স্বদেশী ‘টেররিস্ট’

আজকে এটিএনবাংলায় (৬ জানুয়ারি) সিনেমা দেখাইতেছিলো। নায়ক কয়েক সিন পরপর ভিলেইনের সাথে কনফ্রন্টেশনে যায় আর চ্যালেঞ্জ ছুইড়া দিয়া বলে- “আগে আমি ছিলাম গুন্ডা; এখন আমি গুন্ডা দ্য টেররিস্ট টেররিস্ট টেররিস্ট [প্রথম টেররিস্ট বলার পরের দুইবার প্রতিধ্বনি]।”

দারুণ মজার ব্যাপার। এইখানে ‘টেররিস্ট’ মাস্তানের উপরের র‍্যাঙ্ক। ‘টেররিস্ট’ শব্দটা বিগত দুই দশকের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটা নয়া টার্ম হিসাবে টেলিভিশনে ব্যাপক উচ্চারিত। এই দেশে ইম্পোর্টেড মালের কদর সর্বদা একটু বেশি। তো সেই র‍্যাঙ্ক পাইয়া নায়ক বেজায় খুশি! এইখানে ‘গুন্ডা দি টেররিস্ট’ ঘুনে ধরা সোসাইটির জন্য আরাধ্য নিরাময়। এই সিনেমা যখন বানানো হইছিলো তখনও বোধহয় ‘ওয়ার অন টেরর’ নামের পলিটিক্সের গোমরে এই দেশের আম সিনেমা ব্যবসায়ীরা তেমন ব্যবসা দেখতে পান নাই; তাই পপুলার মিডিয়াতে ব্যাপক উচ্চারিত ‘টেররিস্ট’ শব্দটারে বহুল জনপ্রিয় ‘প্রত্যুপকারী মাস্তান’ বা ‘রবিনহুডীয়’ তকমা হিসাবে কাজে লাগাইছেন।

রবিনহুড যিনি ইওরোপিয়ান [মতান্তরে খ্রিশ্চিয়ান] কলোনি সম্প্রসারণের একটা স্ট্র্যাটিজিক টুলস। গত ৩ শতক যাবত আমরা ইওরোপ আম্রিকারে স্পষ্টতই রবিনহুড স্ক্রিপ্টের নাম-ভূমিকায় দেখতে পাই। মাস্তান কিংবা ডাকাত হইলেও আম জনতার জন্য তারা বিশেষ উপকারী ড্যাশিং হিরো অপরদিকে শাসক শ্রেণীর যম। এই স্ট্র্যাটিজিক টুলস কাজে লাগায়া ব্যবসায় ভালো ফল পাইছেন তাই দীর্ঘকাল সিনেমা ব্যবসায়িরা ঐ থিওরি গিলায়া গিলায়া তাদের কামাইও নির্বিঘ্ন রাখতে পারছেন। আমাদের চিন্তায় বদ্ধমূল যেই কলোনিয়াল সেটআপ, তার মূলে আমদানী করা রাসায়নিক সার দিছেন।

না; এইটা কোনোভাবেই পাবলিক মিডিয়ার ষড়যন্ত্র না; বরং এইটারে তাদের সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল দক্ষতার দেউলিয়াপনা ভাইবা করুণা করতে পারেন। এই দেউলিয়াত্ব জেনেটিক কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয় নাই। ইওরোপীয় পরাশক্তিদের রবিনহুডীয় অতিযাচনার আওতায় আইসা লোকাল ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য প্রতিরোধের রাজনৈতিক ইমিউনিটি হারায়া ফেলা এবং সুবিধাবাদী তাবেদার রাজনীতির আঙ্গিনায় গজায়ে ওঠা দালাল সংস্কৃতির দৌরাত্ম্য এর কারণ। কালো চামড়াকে অভিশপ্ত শয়তান আর সাদা চামড়াকে স্রষ্টার আশীর্বাদ বলে মনে করার মতো আমদানী করা অসংখ্য কমিউনাল বৈষম্য-বিষাদচর্চা এবং স্বদেশী সংস্কৃতির মধ্যে বর্ণবাদী সংস্কৃতিরে ইন্টারভেইন করতে দেওয়ার ফল এই বন্ধ্যাত্ব।

কয়েকশত বছর যাবত সুপরিকল্পিত ঔপনিবেশিক চিন্তার দাসত্ব থেকে তৈরি হয়েছে এই বন্ধ্যাত্ব। খুব সহজেই চিন্তার এই বন্ধ্যাত্ব ঘুইচা যাবার না। তাই সিনেমা ব্যবসায়ীর চিন্তাবলয়ে রবিনহুডরাই কখনো উপকারী মাস্তান কিংবা কখনো উপকারী টেররিস্ট নামে হাজির থাকতেছেন। স্ক্রিপ্ট রাইটার আর প্রযোজকের ক্রিয়েটিভিটিরে সেল্যুট যে, তারা অবশেষে লোকাল রাজনীতিতে পপুলার করতে নিরন্তর চেষ্টিত আন্তর্জাতিক দলন-রাজনীতির গোয়ায় লাত্থি মাইরা ‘উপকারী মাস্তান’ হিসাবে ‘টেররিস্ট’ ব্র্যান্ডটাই বাইছা নিছেন।

০৭ জানুয়ারি ২০১৭


About The Author

Leave a reply