Select Page

হুমায়ূনের অদেখা ভুবন

হুমায়ূনের অদেখা ভুবন

১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদ বাংলা নাটকে এক অভিনব সংযোজন করলেন। হরর,প্যারালাল মিস্ট্রি ও সাইকোলজিক্যাল ধারার সংমিশ্রণে নাটক নির্মাণ করে সবাইকে চমকে দেন। একটি সিরিজের আওতায় প্রতিটি পর্ব ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাজেটের সীমাবদ্ধতা ও এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে দর্শকের অনিহার মাঝেও তিনি যথাযথ আয়োজনে ত্রুটি রাখেননি। আবহ সংগীত থেকে সেট ডিজাইন, শক্ত বুনটে ভয় ধরানো চিত্রনাট্য। হুমায়ূন আহমেদ মোট আট পর্বের এই সিরিজের নাম দেন ‘অদেখা ভুবন’।

বনুর গল্প: এক archaeologist তার কাজে গ্রামে আসেন, পরিচয় হয় বনুর সাথে। গ্রামের সবাই তাকে পাগল ডাইনি বলে। সে মুখে যা বলে তাই সত্যি হয়। একজনকে অভিশাপ দেয়ার কারণে তার শাস্তি নির্ধারণ হয় বস্তায় ভরে পানিতে ছুড়ে মারা। তারপরই শুরু হয় সর্বনাশ। এই গল্পে প্রধান চরিত্রে ছিলেন শামীমা নাজনীন,বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন এজাজুল ইসলাম, মিতা নূর, ফারুক আহমেদ ও সালেহ আহমেদ। ভয় পেয়ে চমকে যাবার পর মতো নাটক এটি।

দ্বিতীয় জন: এক মেঘময় দিনে স্বামী পা হারায় গাড়ি দুর্ঘটনায়, তারপর ১০ বছর ধরে হুইলচেয়ারের জীবন। তার স্ত্রীর মাথায় একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে, সে প্রায় ই দেখে তার স্বামী চেয়ার ছেড়ে হাঁটাহাঁটি করে, তার সাথে কথা বলে! কে এই দ্বিতীয় জন? এই সিরিজের সবচেয়ে সেরা পর্ব হচ্ছে এটি। হুমায়ুন ফরিদী ও সুবর্ণা মুস্তফার অসামান্য অভিনয়, আর জমজমাট থ্রিলার এই নাটক স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

নীলচুড়ি: আনিস সাহেব তার সদ্যবিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামে আসেন। রাতে জানালার ফাঁক দিয়ে তার স্ত্রী এক সদ্যবিবাহিতা কন্যার মুখ দেখতে পায়। হ্যালুসিনেশন ভাবলেও সকালে গিয়ে জানালার ফাঁকে একটা নীলচুড়ি পায়। কে এই কন্যা, কী সেই নীলচুড়ির কাহিনী? সদ্য বিবাহিত দম্পতির চরিত্রে অভিনয় করেন মাহফুজ আহমেদ ও তাজিন আহমেদ।

যইতরী: শুভ্র ছবি আঁকার জন্য গ্রামে এসে মুন্সীর বাড়ি ওঠে। তার মেয়ে যইতরীর বিয়ের কথা চলছে। তবে লোকেমুখে শোনা যায় মেয়েটির দোষ আছে। তার সাথে যার বিয়ের কথাবার্তা হয় সে মারা যায়, তবে এর মাঝে ঘটনাক্রমে মুন্সীকে শুভ্র বলে, সে যইতরীকে বিয়ে করবে। কী সেই ঘটনা! এই নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছে মাহফুজ আহমেদ ও মিতা নূর।

মৃত্যুর ওপারে: আজ তার জন্মদিন, জন্মদিনে তিনি তার স্ত্রীকে গুনে গুনে ১৩ টা গোলাপ দেন। কিন্তু আজ তিনি তার স্ত্রীকে খুন করবেন। কেনই বা তিনি খুন করলেন প্রিয় স্ত্রীকে? মৃত্যুর পর মৃতলাশ কেন কথা বলে? তিনি কি পাগল হয়ে গেলেন?  হুমায়ূন আহমেদ নিজের ‘যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ’ উপন্যাস আলোকে পর্বটি তৈরি করেছেন। মূল চরিত্রে আসাদুজ্জামান নূর ও আফসানা মিমির অভিনয় এই নাটকের প্রাণ, এই সিরিজের আরেকটি সেরা নাটক।

ছুরি: ফরিদ সাহেবের স্ত্রী মীরার ছুরি নিয়ে একটা বাজে ইতিহাস আছে। রাত ১টার সময় মীরার এক মামা এসে হাজির হয় তার বাসায়। সে চলে যাওয়ার পর ইলেক্ট্রিসিটি নাই। যখন আসে তখন ফরিদ দেখে ঘড়িতে ১টা বাজতে অনেক সময় বাকি। তবে কি হ্যালুসিনেশন?  ঠিক ১টা বাজতেই আবার কড়া নাড়ার শব্দ …! প্যারালাল রিয়েলিটি নিয়ে সাজানো এই পর্বে ছিলেন জাহিদ হাসান ও তানভীন সুইটি। এটিও দারুণ কাজ।

আগুন মজিদ: মজিদ রেগে গেলে চোখ দিয়ে আগুন বের করতে পারে তাই সবাই তাকে ভয় পায়। এক সাংবাদিক তাকে আগুন জ্বালাতে বললে সে কুপি দিয়ে মোমবাতি তে আগুন ধরায়। ভুয়া জেনে সাংবাদিক চলে যাচ্ছেন। কিন্তু দেখলেন না পেছনে কী হলো। নাম ভূমিকায় নাজমুল হুদা বাচ্চু আর সাংবাদিকের ভূমিকায় ছিলেন মাহফুজ আহমেদ, এটিও এই সিরিজের অন্যতম নাটক।

মদিনা: একজন লেখক এসে উঠলেন গ্রামের চেয়ারম্যানের বাড়ি। তার পালিত কন্যা মদিনা মানুষের মৃত্যু তারিখ বলতে পারে এরকম কথা প্রচলিত। এক দুর্ঘটনায় মদিনার জীবন বদলে যায়। কী সে দুর্ঘটনা যে মাটির নিচ থেকে সে ফিরে আসে। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন শামীমা নাজনীন, আমিরুল হক চৌধুরী ও আতাউর রহমান।

যারা সিরিজটি দেখেননি তাদের জন্য সুখবর হলো সবগুলো পর্বই ইউটিউবে আছে।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র ও নাটক বিষয়ক লেখক

মন্তব্য করুন