![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
২০২৩ সালের সেরা দশ সিনেমা!
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/01/Picsart_24-01-02_11-33-49-274-2.jpg?resize=1024%2C576&ssl=1)
দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেলো ২০২৩। অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার ‘বাংলা চলচ্চিত্র দর্শন নামক মনের খুশিকে সময় দেওয়া হয়েছে কম। চলচ্চিত্র দেখাও হয়েছে কম, তাই বিচক্ষণতার সহিত যাচাই-বাছাই করতেও সময় লেগে গিয়েছে ম্যালা! তো সবমিলিয়ে ২০২৪ এর প্রথম দিনে লিখতে বসলাম, ‘২০২৩ এর সেরা ১০ চলচ্চিত্র’!
তালিকাটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত পছন্দ এবং বিগত ৬-৭ বছরে বাংলা চলচ্চিত্র দেখে যে অভিজ্ঞতা হলো, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে করা। তাই হয়তো সবার মনমতো না-ও হতে পারে। সবমিলিয়ে আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
১০. ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ‘ ও ‘লোকাল‘
শুধুমাত্র দশ নম্বরেই আমি দুটি চলচ্চিত্রকে স্থান দিয়েছি। বাকি নয়টি ঘরে একটি করে চলচ্চিত্রের নাম খুঁজে পাওয়া যাবে। কাকতালীয়ভাবে এই দুটি চলচ্চিত্রের মাঝে অনেক মিল আছে। যেমন: দুইটি চলচ্চিত্রের মূল নারী চরিত্রে রয়েছেন শবনম বুবলী, দুটি চলচ্চিত্রই পলিটিক্যাল-একশনধর্মী এবং দুটি চলচ্চিত্রই মুক্তি পেয়েছিল একইদিনে; ঈদুল ফিতরে!
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/04/IMG_20230425_094447.jpg?resize=720%2C475&ssl=1)
“লিডার আমিই বাংলাদেশ” পরিচালনা করেছেন নবীন নির্মাতা তপু খান। মূল চরিত্রে সুপারস্টার শাকিব খান, সঙ্গে রয়েছেন নিয়মিত খলনায়ক মিশা সওদাগর। চলচ্চিত্রটির গল্প বলার ধরণ অন্য ৮/১০টি বাংলা চলচ্চিত্র থেকে একটু আলাদা। শাকিব-মিশা টাইপের টিপিক্যাল বাংলা মসলা সিনেমা এটা না! সেইসাথে প্রেজেন্টেশনেও কিছুটা ভিন্নতা ছিল, শেষ ক্লাইম্যাক্সটি যদি আমরা ভুলে যেতে পারি!
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/04/local_ador_azad_bmdb_image.jpg?resize=969%2C537&ssl=1)
অন্যদিকে “লোকাল” পরিচালনা করেছেন সাইফ চন্দন, যিনি ইতোপূর্বে “আব্বাস” ও “ছেলেটি আবোল তাবোল মেয়েটি পাগল পাগল” এর মতো রম-কম বানিয়ে মোটামুটি পরিচিত। মূল চরিত্রে তরুণ নায়ক আদর আজাদ। খলচরিত্রে যথারীতি মিশা সওদাগর, তবে এখানে সাঞ্জু জনও নেতিবাচক চরিত্রে কিছুটা জায়গা পেয়েছেন। “আব্বাস” এর মতো এ চলচ্চিত্রের গল্পও পুরাণ ঢাকার ভেতরকার রাজনীতি নিয়ে। অনেক ক্লিশে জিনিস থাকা সত্ত্বেও, লিডারের মতো “লোকাল”ও আমাকে আকৃষ্ট করেছে, গল্প বলার ধরণ দেখিয়ে।
৯. ইতি চিত্রা
নবীন নির্মাতা রাইসুল ইসলাম অনিক পরিচালিত রোম্যান্টিক ঘরানার চলচ্চিত্র এটি। মূল চরিত্রে দুই নতুন মুখ রাকিব হোসেন ইভান ও জান্নাতুল ফেরদৌস ঋতু। চলচ্চিত্রের একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে ফ্ল্যাশব্যাক সিন, যারা ৯০ দশকের কৈশোর তারা মোটাদাগে এই অংশতে নষ্টালজিক অনুভব করবেন।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/10/eti_chitra1_bmdb_image.jpg?resize=725%2C400&ssl=1)
এছাড়া ফরহাদ হোসেনের হাতে থাকা ক্যামেরা এবং অধ্যয়ন ধাড়ার মিউজিক সিনেমাতে জাদুর মতো কাজ করে। সম্পাদনার কাজ করেছেন পরিচালক নিজেই, এটিও বেশ ভালো। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সিনেমাহলে খুব একটা ভালো সাড়া পায়নি, কিন্তু আমার বেশ ভালো লেগেছে।
৮. প্রহেলিকা
চয়নিকা চৌধুরী আমার খুব একটা পছন্দের পরিচালক নন। এমনকি এ সিনেমাটির দ্বিতীয়ার্ধ নিয়েও আমার কিছু অসন্তুষ্টি রয়েছে। তবে সবদিক বিবেচনা করে আমার মনে হয়েছে, এ চলচ্চিত্রটি সেরা দশে থাকা ডিজার্ভ করে। এর অন্যতম কারণ হলো মাহফুজ, শবনম বুবলী, নাসিরুদ্দিন খানের ভালো পারফরম্যান্স; ছিমছাম গল্প বলার ধরণ ও ভালো মিউজিক। “প্রহেলিকা” মুক্তি পায় ঈদুল আযহাতে।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/06/prohelika1_bmdb_image.jpg?resize=982%2C588&ssl=1)
চলচ্চিত্রটি একটি সাসপেন্স থ্রিলারধর্মী গল্প বলার চেষ্টা করে। এটাও এই লিষ্টে জায়গা পাওয়ার অন্যতম একটা কারণ, আমাদের নির্মাতারা এই জনরা নিয়ে কম কাজ করেন। সিনেমাটা খুবই দূর্দান্ত একটা প্রথমার্ধ উপহার দিতে পারে। দ্বিতীয়ার্ধ যদি প্রথমার্ধের মতো হতো তাহলে “প্রহেলিকা”কে চোখ বন্ধ করে সেরা পাঁচে জায়গা দেওয়া যেতো।
৭. মুজিব – একটি জাতির রূপকার
এসিনেমাতেও বেশকিছু দৃষ্টিকটু ব্যাপার আছে, যার মধ্যে কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার বিতর্কিত উপস্থাপন ও বাজে ভিএফএক্স অন্যতম। তবে এগুলো ধর্তব্যে রেখেও, আমার কাছে মনে হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এর থেকে ভালোভাবে কোনো চলচ্চিত্রে এখন অব্দি উপস্থাপন করা হয়নি। এমন একটি আইকনিক চরিত্র, যার জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে প্রতিবছর ২-৩ টা করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হচ্ছে, তার জীবনীকে ৩ ঘণ্টায় সুন্দরভাবে ফ্রেমিং করা, খুবই চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/10/mujib_ekti_jatir_rupokar2_bmdb_image.jpg?resize=1024%2C574&ssl=1)
ভারতের বিখ্যাত প্রবীণ পরিচালক শ্যাম বেনেগালের হাতে মুজিব হয়ে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। ৭ই মার্চে ভাষণের অংশ ব্যতীত তার পারফরম্যান্স আমার কাছে মোটামুটি সন্তোষজনক মনে হয়েছে। এছাড়া একঝাঁক তারকা অভিনয়শিল্পী আছেন এই চলচ্চিত্রে। শান্তনু মৈত্রের মিউজিক এ চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভালো দিক।
৬. জে কে ১৯৭১
“ভুবন মাঝি”, “গণ্ডি” খ্যাত পরিচালক ফাখরুল আরেফীন খান পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক চলচ্চিত্র এটি। তবে এটি গতানুগতিক মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক নয়। সম্পূর্ণ ইংরেজী ভাষায় চিত্রায়িত এ চলচ্চিত্রে মূলত একজন ফরাসি নাগরিক জ কে এর দু:সাহসিক প্লেন হাইজ্যাকের গল্প উঠে এসেছে। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন দারিয়া গাভরুশেঙ্কো, শুভ্র সৌরভ দাস, সব্যসাচী চক্রবর্তী সহ একঝাঁক দেশী-বিদেশী অভিনয়শিল্পী।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/03/jk_1971_1bmdb_image.jpeg?resize=686%2C386&ssl=1)
ইনডোরে শ্যুট করা পুরো চলচ্চিত্রজুড়ে স্লো বার্ন থ্রিলিং ভাব বজায় থাকে। কিছু ক্লিশে জিনিস থাকলেও সবমিলিয়ে চলচ্চিত্রটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম আন্ডাররেটেড একটি প্রেক্ষাপট তুলে ধরে, যেখানে বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য বিদেশীদের আত্মঘাতী হয়ে তাড়না দেখতে পাই।
৫. আদিম
কাছাকাছি নামের ও সময়ের “আদম” নামে চলচ্চিত্রটি আমার প্রত্যাশা পুরণ করতে না পারলেও, “আদিম” নামক এ চলচ্চিত্রটি দেখে আমি “লাইভ ফ্রম ঢাকা”র একটা ভাইভ খুঁজে পেয়েছি। গণঅর্থায়নে নির্মিত এ চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন টঙ্গী বস্তিতে থাকা একদল অভিনয়শিল্পী।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/01/FB_IMG_1704180014737-1.jpg?resize=1024%2C617&ssl=1)
নবীন পরিচালক যুবরাজ শামীম এ চলচ্চিত্রটি আদিম সমাজের ভালো-খারাপ কার্যকলাপ মেটাফোরিক ট্রিটমেন্টের সাহায্যে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। পরিচালক যুবরাজ শামীম প্রায় ৭ মাস টঙ্গী বস্তিতে থেকে সেখানকার মানুষদের দৈনন্দিন জীবনযাপন একটি গল্পের আলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। চলচ্চিত্রটি মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে পুরষ্কৃত হয়।
৪. ১৯৭১ সেই সব দিন
লিস্টে থাকা আরো একটি মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক চলচ্চিত্র। পরিচালনা করেছেন নবীন পরিচালক হৃদি হক। মূল চরিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি, সঙ্গে ফেরদৌস, সজল, মিলন, তারিন, লিটু আনাম সহ একঝাঁক তারকা।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/08/1971_sey_sob_din_bmdb_image-2.jpg?resize=921%2C525&ssl=1)
চলচ্চিত্রটি অনেকটাই গ্ল্যামারাস ও পলিশভাবে ৭১-এর প্রেক্ষাপট দেখিয়েছে যেখানে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে উচ্চবিত্তদের ক্রাইসিস মোমেন্টগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করা যায়। মেলোড্রামাটিক ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের চিত্রনির্দেশনা, ক্যামেরাওয়ার্ক ও মিউজিক অন্যতম আকর্ষণীয় দিক।
৩. সুড়ঙ্গ
জনপ্রিয় নির্মাতা রায়হান রাফি পরিচালিত ক্রাইম-থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্র “সুড়ঙ্গ”। অভিষেক হয় ছোটপর্দার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশোর। সাথে রয়েছেন তমা মির্জা, শহীদুজ্জামান সেলিম, মোস্তফা মনোয়ার সহ অনেকে। এখন পর্যন্ত আমার দেখা রায়হান রাফির সেরা নির্মাণ হলো এটি, যেখানে গল্প বলা নিয়ে কোনো তাড়াহুড়ো ছিল না, ছিল না কোনো অযথা ভায়োলেন্স কিংবা বাজেটের কমতি।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/06/surongo_bmdb_image.jpg?resize=900%2C506&ssl=1)
সিনেমাটির বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ উঠলেও আমার কাছে মনে হয়েছে ছেলে-বুড়ো সবাই নি:সন্দেহে সিনেমাটি উপভোগ করতে পারবে। চলচ্চিত্রটি এবছর ঈদুল আযহাতে মুক্তি পেয়ে দারুণ ব্যবসা করে।
২. আম কাঁঠালের ছুটি
আরেকটা নষ্টালজিক অনুভুতি দেওয়া চলচ্চিত্র। এবারেরটি শিশুতোষ ঘরানার, তবে বানানো হয়েছে সাদা-কালো ফরমেটে। নবীন পরিচালক মো: নুরুজ্জামান দীর্ঘ ৭ বছর সময় নিয়ে এ চলচ্চিত্রটি বানিয়েছেন। ছিল বাজেটের কমতি, আয়োজনের কমতি।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/01/FB_IMG_1704180373761.jpg?resize=1024%2C819&ssl=1)
তবুও চলচ্চিত্রটির মাঝে এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতা খুঁজে পাওয়া যায়, এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে। “১৯৭১ সেই সব দিন” ও “আম কাঁঠালের ছুটি” উভয়ই একই দিনে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। দুটি চলচ্চিত্রই এই লিস্টে জায়গা পেয়েছে।
১ নম্বর চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করার আগে কিছু চলচ্চিত্রের নাম স্মরণ করতে চাই, যাদেরকে এই লিস্টে জায়গা দিতে পারিনি, তবে এরাও কোনো অংশে কম না। যেমন: বছরের সেরা ব্যবসফল চলচ্চিত্র “প্রিয়তমা“, আবু তাওহিদ হীরণ পরিচালিত “আদম“, যৌথ প্রযোজনার “মায়ার জঞ্জাল“।
১. সাঁতাও
নবীন নির্মাতা খন্দকার সুমন পরিচালিত “সাঁতাও” হলো আমার দেখা ২০২৩ এর সেরা চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটিতে উত্তরবঙ্গের সাঁতাও-এর সময়ে গরিব মানুষদের সুখ-দু:খ, হাসি-কান্নার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে (‘সাঁতাও’ বলতে ৭ দিন ধরে বৃষ্টি হওয়াকে বোঝায়)। যেখানে সন্তান হারানো এক মা ও মা হারানো এক বাছুরের জীবনকে অদ্ভুতভাবে একটি সুতোয় গাঁথা হয়েছে। সিনেমাতে এরা একে অপরের পরিপূরক হয়ে দাঁড়ায়। চলচ্চিত্রটিতে মুগ্ধ হওয়ার মতো অনেক বিষয় আছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/01/saatao_bmdb_iamge-1.jpg?resize=640%2C404&ssl=1)
আমাদের দেশের নির্মাতারা এই ধরনের গল্প বলাতে বরাবরই অনাগ্রহ প্রকাশ করে। অথচ “আদিম” কিংবা “সাঁতাও” এর মতো গণঅর্থায়নে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো কত সুন্দরভাবে আমাদের গল্প দেখাচ্ছে। সম্পূর্ণ গ্রামীণ পরিবেশে চিত্রায়িত এই চলচ্চিত্রটি পুরোটা সময় জুড়ে আপনাকে অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতি প্রদান করবে।
এই ছিল আমার দৃষ্টিতে ২০২৩ এর সেরা দশ চলচ্চিত্র। আপনাদের বিবেচনায় লিষ্টটি কেমন হয়েছে? জানাতে পারেন…