
২৩ কোটি টাকার ‘অপারেশন জ্যাকপটের’ কী খবর?
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের অংশ ‘অপারেশন জ্যাকপট’। এ ঘটনা নিয়ে সিনেমা নির্মাণের কথা শোনা যাচ্ছে অনেক ধরে। অনেক গুঞ্জন শেষে গত বছর এ প্রজেক্টে যুক্ত হন পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতা রাজিব বিশ্বাস। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২৩ কোটি টাকা অর্থায়নের এ নির্মাণ নিয়ে শুরু থেকেই ছিল সমালোচনা।
ওই সময় ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর পাশাপাশি জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘চিতা’ সিনেমায় যুক্ত হন রাজিব বিশ্বাস। যদিও এখনো আলোর মুখ দেখেনি সিনেমা দুটি।

সম্প্রতি কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাকে রাজিব জানান, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর দুটি সিনেমার কাজ স্থগিত হয়ে যায়। তাই তিনি ফিরে গেছেন কলকাতায়। ফলে সিনেমা দুটি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে দাবি তার।
তবে অপারেশন জ্যাকপট সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অন্তর শোবিজের কর্ণধার স্বপন চৌধুরী জানালেন ভিন্ন কথা। আজকের পত্রিকাকে তিনি জানান, অপারেশন জ্যাকপটের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেই মুক্তির পরিকল্পনা করা হবে।
রাজিব বিশ্বাস জানান, বাংলাদেশ অংশের শুটিং শেষ হলেও রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তনের পর বন্ধ হয়েছে ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর কাজ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে অপারেশন জ্যাকপট সিনেমার কাজ। কবে শুরু হবে জানি না। আপাতত নিজের শহরে ফিরে এলাম।’
স্বপন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সিনেমার কাজ শেষ। এখন মুক্তির অপেক্ষায়। তবে এই মুহূর্তে মুক্তি নিয়ে পরিকল্পনা করছি না। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে অপারেশন জ্যাকপট মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
গত অক্টোবরে স্বপন চৌধুরী জানিয়েছিলেন, অপারেশন জ্যাকপট সিনেমার ফ্রান্সের অংশের শুটিং বাকি রয়েছে। ফ্রান্সে সম্ভব না হলে সিজিতে (কম্পিউটার গ্রাফিকস) সেই অংশের কাজ শেষ করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।
‘অপারেশন জ্যাকপট’-এ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন অনন্ত জলিল, নিপুণ আক্তার, অমিত হাসান, ওমর সানী, ইমন, নিরব, রোশান, শিপন, সাঞ্জু, জয় চৌধুরী, পল্লব, ইলিয়াস কাঞ্চন, কাজী হায়াৎ, মিশা সওদাগর প্রমুখ।
অন্যদিকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মহরত করে চিতা সিনেমার ঘোষণা দিয়েছিল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। ওই বছরের মে মাসে শুটিং শুরুর কথা জানিয়েছিল তারা। বলা হচ্ছিল, মাসুদ রানা সিরিজ অবলম্বনে সিনেমাটি হবে। সিনেমাটি কোন অবস্থায় আছে সে বিষয়ে জাজের কর্ণধার আব্দুল আজিজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
রাজীব বিশ্বাস কলকাতায় দুজনে, পাগলু, বিন্দাস, অমানুষ, ইডিয়েট, লাভ এক্সপ্রেসসহ প্রায় দেড় ডজন বাণিজ্যিক সিনেমা বানিয়েছেন। এগুলোর সবই দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার নকল, তবে অধিকাংশই সুপারহিট।
একই সাক্ষাৎকারে রাজিব বিশ্বাস জানান, করোনার পর বাংলা ছবির বাজার প্রায় ভেঙে পড়ে। এমনকি তারকারাও বাণিজ্যিক ছবির বদলে ভিন্ন ধারার দিকে ঝুঁকেছেন। ‘দেব যখন আর্ট ফিল্মে চলে গেল, তখনই বুঝেছিলাম বড় বাজেটের বাণিজ্যিক ছবির জায়গাটা সংকুচিত হয়ে গেছে। এখন আর সেই ধরনের প্রযোজক নেই’ বললেন নির্মাতা।
রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক অচলাবস্থায় এই দুটি ছবির কাজই বন্ধ হয়ে যায়। রাজীব বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন সিনেমা ও নাটক হচ্ছে, তবে আগের তুলনায় অনেক কম। একমাত্র শাকিব খানই এখনও বাণিজ্য ধরে রেখেছেন। বাকি কেউই তার মতো সফল হতে পারছেন না।’
বেশ কয়েক বছর আগে অপারেশন জ্যাকপট নিয়ে প্রথম একটি চলচ্চিত্র তৈরির উদ্যোগ নেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সেই সময় তারা চিত্র পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিমকে চিত্রনাট্য তৈরির দায়িত্ব দেয়। পুরো প্রকল্পের বাজেট ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
এরপর থেকে তিনি এ নিয়ে বেশ কিছু গবেষণাও করেন। পরে এই চলচ্চিত্র নির্মাণ তদারকির দায়িত্ব পায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপরই তারা এই চলচ্চিত্র নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে।
সেই দরপত্রে অংশ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজটি পায় ‘কিবরিয়া ফিল্মস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাতে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘আশীর্বাদ চলচ্চিত্র’ অংশ নিলেও, আবেদন ‘বিধিসম্মত না হওয়ায়’ তাদের বাদ দেয় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।
গিয়াসউদ্দিন সেলিম সে সময় অভিযোগ করেছেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় প্রথম যখন এই উদ্যোগ নিয়েছে, শুরু থেকেই আমি চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক হিসাবে যুক্ত রয়েছি। এ নিয়ে প্রায় দুই বছর ধরে আমি গবেষণা করছি। এরপর যখন সেটি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে আসে, তখনো আমি পরামর্শ দিয়ে আসছি।
গত বছরের মধ্যভাগে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় যে দরপত্র আহ্বান করেছিল, তাতে মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সেখান থেকেই কিবরিয়া ফিল্মকে কাজটি দেয়া হয়।
তবে নির্মাতাদের কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, টাকাপয়সার লেনদেন, দুর্নীতির মাধ্যমে এই কাজটি বিশেষ একটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে।
চিত্রনাট্য কমিটির সদস্য মোরশেদুল ইসলাম সে সময় বলেন, ‘এখানে যা হয়েছে, তা হলো দুর্নীতি। অনেক টাকার কাজ, সেটা দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের দেয়া হয়েছে। টাকা পয়সার লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া আর কোন কারণ আছে বলে আমার মনে হয় না।’