Select Page

৫৪ সিনেমার মধ্যে মাত্র ছয়টি ফ্লপ/ সালতামামি ১৯৮৪

৫৪ সিনেমার মধ্যে মাত্র ছয়টি ফ্লপ/ সালতামামি ১৯৮৪

এর আগের কয়েক বছরের মধ্যে ১৯৮৪ সাল ছিল বাংলা সিনেমার জন্য রমরমা একটি বছর, মুক্তিও পায় সবচেয়ে বেশি ৫৪টি ছবি। এর মধ্যে সামাজিক ছবির প্রাধান্য ছিল বেশি, ২১টি। এছাড়া পোশাকি, ফ্যান্টাসি, অ্যাকশন ও ফোক মিলিয়ে ছিল ২৫টি। সামাজিক ঘরানার সংখ্যা বেশি হলেও অ্যাকশন ও পোশাকি ছবির নামই বেশি শোনা গেছে ওই বছর। অবশ্যই ওই সময়ে মারামারি ছাড়া ছবি নির্মাণই বন্ধ হয়ে গেছে, কম-বেশি যেকোনো ছবি মানে অ্যাকশন দৃশ্য থাকবে।

কোলাজ/ অভিযান, নয়নের আলো ও ভাত দে সিনেমার দৃশ্য

এ বিষয়ে পূর্বাণীর বছর শেষের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছরে ভিসিআর ও বড়পর্দায় এত মারামারি ও পোশাকি ছবি দেখেছেন যে অ্যাকশন না থাকলে দর্শকের কাছে সিনেমা পানসে মনে হয়। এ জন্য নির্মাতারা সামাজিক সিনেমায়ও অ্যাকশন যোগ করে দেন। অবশ্য ব্যবসা কতটা বেড়েছে তা স্পষ্ট নয়। কেন না ১৯৮৪ সালে অ্যাকশনধর্মী কিছু ছবি একদমই ব্যবসা করেনি। সে তুলনায় ভালো ব্যবসা করেছে সামাজিক সিনেমা। সালতামামিতে বলা হয়, ছবিগুলো দেখে মনে হয় যতটা না মারামারির জন্য ব্যবসা করেছে তার চেয়ে বেশি করেছে ভালো গল্প ও সুন্দর নির্মাণের জন্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৪ সালে ছবি মুক্তির ক্ষেত্রে নতুন একটি পথ প্রশস্ত হয়। অনেক প্রযোজকই ঢাকার আগে মফস্বলে ছবি মুক্তি দিয়েছেন। এই প্রবণতা অনেক বছর থাকলেও প্রযোজকরা অনেক ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতেন। কিন্তু ১৯৮৪ সালে ছবি মুক্তি দেয়ার মতো হতেই মুক্তি দিয়েছেন। ঢাকায় হল না পেলে মফস্বলে মুক্তি দিয়েছেন তারা, এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে ক্যাপাসিটি চার্জ ও ট্যাক্সের প্রবর্তনের কথা বলা হয়। যার কারণে ছবি নির্মাণ বেড়ে গেছে। ফলে নির্মাণ শেষ হয়ে গেলে পড়ে থাকে। ঢাকায় ডেট পাওয়া যায় না। মুক্তি না দিলে আটকে থাকে লাখ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে ২৮টি সিনেমা হল রয়েছে। এসব হলে প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনটি ছবি মুক্তি দেয়া যেতে পারে। এভাবে হলে কোনো ছবি আটকে থাকার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু একশ্রেণীর প্রযোজক-পরিবেশক যারা যেন-তেন প্রকারে ছবি তৈরি করে অর্থ-উপার্জন করতে আগ্রহী। তাদের বিরোধিতার কারণে এটা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে শোনা যায়। তাদের যুক্তি হলো, একসঙ্গে একাধিক ছবি মুক্তি পেলে সবগুলোর ব্যবসাই খারাপ হবে। অথচ ঢাকার বাইরে মফস্বলে একসঙ্গে একাধিক ছবি সব সময় প্রদর্শিত হয়ে আসছে। এতে ছবির মেরিট অনুযায়ী ব্যবসা হয়ে থাকে। এ নিয়ম ঢাকায় চালু হলে ছবির মানও বেড়ে যেতো। সেই সঙ্গে ব্যবসা বাড়বে বলেও অনেকে মনে করেন।

১৯৮৪ সালে সামাজিক ছবির মধ্যে ১৫টি ভালো ব্যবসা করেছে। এর মধ্যে তালাক, অভিযান, গৃহলহ্মী, সকালসন্ধ্যা, অগ্নিপরীক্ষা খুব ভালো ব্যবসা করেছে। এছাড়া সুখ-দুঃখের সাথী, নয়নের আলো, লাল মেমসাহেব, মনাগাগলা, মহানায়ক, মায়ের আঁচল, মান-অভিমান, শক্তি, সখিনার যুদ্ধ, ভাত দে ও পুনর্মিলন ভালো ব্যবসা করেছে। মোটামুটি ব্যবসা করেছে ১৪টি ছবি; স্বামীর ঘর, ভাগ্যলিপি, বংশধর, পরিবর্তন, নতুন পৃথিবী, পরান পাখী, চন্দ্রনাথ, পেনশন ও ঘরে বাইরে। আর চারটি ছবি তেমন আয় করতে পারেনি; প্রিন্সেস টিনা খান, উল্টোরথ, বউ কথা কও ও সুরুজমিয়া।

অন্যদিকে মারামারি ও পোশাকি-ফ্যান্টাসি ঘরানায় ১২টি ছবি ব্যবসা করেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে নসীব। এরপর আছে শাস্তি, সিআইডি, জোশ, শরীফ বদমাশ, হাসান তারিক, হিম্মতওয়ালী, রাজিয়া সুলতানা ও ষড়যন্ত্র। এরপরে ব্যবসা করেছে ১১টি ছবি। এগুলো বাজেটের তুলনায় মোটামুটি ব্যবসা করেছে। তার মধ্যে রয়ে চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, জালিম, বিদ্রোহী, নির্দোষ, সালতানাৎ, সম্রাট, রাজদণ্ড, জিপসী সর্দার, দ্বীপকন্যা, শাহী কানুন ও মহল। দুটি ছবি ব্যবসা করেনি বললেই চলে; রাজবাড়ী ও মৎস্যকুমারী।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তুলনামূলকভাবে সামাজিক ছবিই বেশি বাবসা করেছে। সাদাকালো ছবি থেকে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে ছিল রঙিন নির্মাণগুলো। বছরের প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে ধারণা করা হয়, ১৯৮৫ সালে সামাজিক ছবির নির্মাণ আরো বেড়ে যাবে।

এক নজরে ১৯৮৪ সালের ঢালিউড— মোট মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ৫৪টি। শীর্ষ ১০ ব্যবসাসফল ছবি; মমতাজ আলী পরিচালিত ‘নসীব’ (শাবানা, উজ্জ্বল, রোজিনা ও ইলিয়াস কাঞ্চন), আজহারুল ইসলাম খানের ‘তালাক’ (রাজ্জাক ও ববিতা), রাজ্জাক পরিচালিত ‘অভিযান’ (রাজ্জাক, রোজিনা, জসিম, অঞ্জনা ও ইলিয়াস কাঞ্চন), কামাল আহমেদের ‘গৃহলক্ষী’ (রাজ্জাক, শাবানা, জাফর ইকবাল ও সুচরিতা), সুভাষ দত্তর ‘সকালসন্ধ্যা’ (শাবানা, জসিম, আলমগীর ও জুলিয়া), আকবর কবীর পিন্টুর ‘অগ্নিপরীক্ষা’ (ববিতা, জসিম, আলমগীর ও সুচরিতা), এফ কবীর চৌধুরী পরিচালিত ‘পদ্মাবতী’ (ওয়াসিম ও অঞ্জু), সফদার আলী ভূঁইয়ার ‌‘রসের বাইদানী’ (রোজিনা ও ওয়াসিম), এফ কবীর চৌধুরীর ‘নরম গরম’ (ওয়াসিম, অঞ্জু, জাভেদ, রানী ও মিঠুন) ও ইকরাম বিজু পরিচালিত ‘সুখ দুঃখের সাথী’ (ববিতা ও সোহেল রানা)।

এরপর ভালো ব্যবসা করেছে বেলাল আহমেদ পরিচালিত ‘নয়নের আলো’ (জাফর ইকবাল, সূবর্ণা মোস্তফা, কাজরী ও প্রবীর মিত্র), এস এম শফির লাল মেমসাহেব (অলিভিয়া, ওয়াসিম, ববিতা, দিলারা ও রানা), কাজী হায়াতের ‘মনা পাগলা’ (টেলি সামাদ ও রাখী), আলমগীর কবিরের ‘মহানায়ক’ (বুলবুল আহমেদ, সুমিতা চৌধুরী ও সূবর্ণা পখরেল), আজিজুর রহমানের ‘মায়ের আঁচল’ (রাজ্জাক, শাবানা, ফারুক ও সুচরিতা), নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘মান অভিমান’ (ফারুক ও রোজিনা), এহতেশামের ‘শক্তি’ (নাদিম ও শাবানা), আমজাদ হোসেনের ‘সখিনার যুদ্ধ’ (শাবানা ও আলমগীর), ‘ভাত দে’ (শাবানা ও আলমগীর), ইবনে মিজানের ‘পুনর্মিলন’ (ফারুক ও রোজিনা), গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘শাস্তি’ (রাজ্জাক, ববিতা, সোহেল রানা ও রোজিনা), আল মাসুদের ‘সিআইডি’ (সোহেল রানা, জাফর ইকবাল, নূতন, জুলিয়া, জসিম, জাহাঙ্গীর ও বাজুকা), এমএ মালেকের ‘জোশ’ (সোহেল রানা, রোজিনা, জুলিয়া ও জাভেদ), মাসুদ পারভেজের ‘শরীফ বদমাশ’ (সোহেল রানা, ববিতা, জুলিয়া ও জাহাঙ্গীর), এমএ মালেকের ‘হাসান তারেক’ (শাবানা, রোজিনা, আলমগীর ও জসিম), অশোক ঘোষের ‘হিম্মতওয়ালী’ (শাবানা, অলিভিয়া, অঞ্জনা, রোজী, জাভেদ, মাহমুদ কলি ও জসিম), ফখরুল হাসান বৈরাগীর ‘রাজিয়া সুলতানা’ (ওয়াসিম, রোজিনা, জাভেদ ও ডলি চৌধুরী) ও মো. আজহার পরিচালিত ‘ষড়যন্ত্র’ (অঞ্জনা, ইলিয়াস কাঞ্চন, জুলিয়া ও আইয়ুব রানা)।

এছাড়া মোটামুটি বা অ্যাভারেজ ব্যবসা করেছে স্বামীর ঘর, ভাগ্যলিপি, বংশধর, পরিবর্তন, নতুন পৃথিবী, পরান পাখী, চন্দ্রনাথ, পেনশন, ঘরে-বাইরে, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, জালিম, বিদ্রোহী, নির্দোষ, সালতানাৎ, সম্রাট, রাজদণ্ড, জিপসী সর্দার, দ্বীপকন্যা, শাহী কানুন, মহল। ফ্লপ হয়েছে ছয়টি প্রিন্সেস টিনা খান, উল্টোরথ, বউ কথা কও, সুরুজ মিয়া, রাজবাড়ী ও মৎস্যকুমারী।

১৯৮৪ সালে সর্বাধিক ছবির নায়ক ছিলেন ওয়াসিম (১২) ও নায়িকা রোজিনা (২০)।

  • সাপ্তাহিক পূর্বাণীতে প্রকাশিত সালতামামির ক্লিপিং ফেসবুকে ফিল্ম অ্যান্ড থিয়েটার গ্রুপে পোস্ট করেছেন ফয়সাল বারী। আর নিচে দেয়া নায়ক-নায়িকা ও পরিচালক উল্লেখিত তালিকাটিও তার করা।


মন্তব্য করুন