Select Page

অগোছালো গল্পের উপভোগ্য থ্রিলার ‘ওমর’

অগোছালো গল্পের উপভোগ্য থ্রিলার ‘ওমর’

ওমর; পরিচালনা: মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ; গল্প ও চিত্রনাট্য: সিদ্দিক আহমেদ; অভিনয়: শরীফুল রাজ, নাসির উদ্দিন খান, শহীদুজ্জামান সেলিম, ফজলুর রহমান বাবু, আবু হুরায়রা তানভীর, এরফান মৃধা শিবলু, রোজী সিদ্দিকী প্রমুখ; প্রযোজনা: মাস্টার কমিউনিকেশন্স; পরিবেশনা: অ্যাকশনকাট এন্টারটেইনমেন্ট; শুভমুক্তি: ১১ এপ্রিল (ঈদুল ফিতর), ২০২৪

ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন দুপুর সাড়ে ৩টার শো দেখতে যাই সাভার বাসস্ট্যান্ডের বিলাস সিনেমা হলে। এ হলের নোংরা পরিবেশ নিয়ে আমার পূর্ব ধারণা ছিল। তবে ঈদের দ্বিতীয় দিনে মাত্র ২০-২৫ জন দর্শক নিয়ে নতুন সিনেমা দেখতে হবে বা এতটা ভগ্নদশা আশা করিনি। দর্শক বলতে গেলে পুরোপুরি এই ধরনের সিনেমা হলকে বয়কট করেছে। হলগুলোর নাম বদনাম হয়ে গিয়েছে। যার জন্যে আজ এই অবস্থা।

‘ওমর’ এর শুরুটাই বেশ অগোছালো। আর এই অগোছালো ভাব পুরো সিনেমাজুড়েই ছিল। তবে হাজারও ভুল-ভ্রান্তি আপনি এড়িয়ে যেতে পারবেন, অভিনেতাদের পারফরম্যান্সের মাধ্যমে। এ সিনেমার লিড চরিত্র শরীফুল রাজ থেকে শুরু করে… নাসির উদ্দিন খান, শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকী, এরফান মৃধা শিবলু, ছোট দুটি চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু ও আবু হুরায়রা তানভীর… প্রত্যেকে প্রমাণিত ভালো অভিনেতা। তারাই স্বাভাবিক পারফরম্যান্সের জোরে সিনেমাটাকে উপভোগ্য করে রাখেন।

আলাদা করে যদি বলি তবে অবশ্যই শরীফুল রাজের কথা সবার আগে বলতেই হবে। তিনি বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে ধূর্ততা  ও চতুরতা সম্পন্ন চরিত্রটি খুব ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন। তার প্রায় সমান স্ক্রিনটাইম পেয়েছেন নাসির উদ্দিন খান। দিনকে দিন তিনি নিজেকে ভেঙে নতুন করে আমাদের সামনে পেশ করছেন। করোনার সময়ে আমি তাকে প্রথম ‘তাকদীর’ ওয়েবসিরিজে দেখি, তাও মাত্র কয়েক মিনিটের ছোট্ট পাসিং ক্যারেক্টার হিসেবে। আজ ৩ বছরের ব্যবধানে তিনি নায়কের সমমানের লিড চরিত্রে অভিনয় করছেন। সেটা আবার কমার্শিয়াল সিনেমায়, তাও রিলিজ পাচ্ছে ঈদে। এভাবে তার পথচলা আমাকে খুব মুগ্ধ করছে।

সিনেমাতে সেরকম বিশেষ কোনো নায়িকা নেই। এর আগে ‘রাজকুমার’ দেখলাম, সেখানেও নায়িকা চরিত্র বলতে গেলে না থাকার মতোই। এখানে ভারতের দর্শনা বণিককে একটি আইটেম গানে পারফর্ম করতে দেখা গেল। এ গান দিয়েই সিনেমাটি মূলত শুরু হয়। গানটি সেরকম কোয়ালিটিসম্পন্ন না, তবে সিনেমাহলে শুনতে-দেখতে মন্দ লাগেনি। এছাড়া আরেফিন রুমিকে অনেক দিন পর প্লেব্যাকে পাওয়া গেলো… গানটি সুন্দর, কিন্তু ‘রব জানে’ গানটির দৃশ্যায়ন ভালো হয়নি।

থ্রিলার সিনেমা যেহেতু, তাই গল্প সম্পর্কে সেরকম কিছু বলবো না। এ সিনেমার ট্রেলারটা প্রায় পুরো মজা নষ্ট করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। কারণ ঐ ট্রেলারে অনেক বেশি দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘ওমর’ এর ট্রেলার একটা বাজে ট্রেলারের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো। থ্রিলার সিনেমার ট্রেলার কীভাবে বানানো যাবে না, আগামী প্রজন্ম এটা দেখে শিখতে পারবে।

ট্রেলারের পাশাপাশি আরো কিছু এডিটিং প্রবলেম আছে। কিছু কিছু সিকোয়েন্স মাত্রাতিরিক্ত লম্বা, অথচ আমরা এর পরিণতি কী হবে তা ইতোমধ্যেই ট্রেলারে দেখে ফেলেছি। এরকম সিন দ্বিতীয়ার্ধে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। যেমন ধরুন, পুলিশ ইনভেস্টিগেশনের সিকোয়েন্স। প্রায় ২৫-৩০ মিনিট ওখানেই নষ্ট করা হলো, অথচ আমরা জানি আসল কালপ্রিট কে, এও জানি ডেডবডি জায়গামতো পাওয়া যাবে না।

সম্পাদনার কাজ করেছেন ভারতের মুহাম্মাদ কালাম, তবে আমি যে সমস্যাগুলোর কথা বলছি, এগুলো সাধারণত ‘ডিরেক্টরস কল’ হয়ে থাকে। পরিচালক এরকম চেয়েছেন বলেই এরকম হয়েছে। সিনেমাতে একটা কাজের মেয়ের চরিত্র রয়েছে, একটা চরিত্র রয়েছে বড় মির্জার ম্যানেজারের, অভিনয় করেছেন এরফান মৃধা শিবলু। এগুলোর এতো স্ক্রিনটাইম প্রয়োজন ছিল না। এই টাইমটুকু চাইলে সিনেমার শেষার্ধের ব্যাকস্টোরিতে দেওয়া যেতো। ওখানে ফজলুর রহমান বাবু অল্প স্ক্রিনটাইমে খুবই ভালো অভিনয় করেছেন, তবে কম সময়ের কারণে ব্যাপারটা ঠিক যেনো ‘হৃদয়বিদারক’ হয়নি।

তবে এখানে সরাসরি মালায়লাম সিনেমা ‘দৃশ্যম’-এর রেফারেন্স নিয়ে সেটা আবার সিনেমাতে স্মার্টলি বলে দেওয়া, ব্যাপারটা ভালো লেগেছে। রেফারেন্স বা হোমাজের আরো কিছু মজার ব্যাপার ছিল। আমি মনে করি যারা প্রচুর হুমায়ূন আহমেদের কাজ দেখেন তাদের কাছে এ সিনেমাটা অন্যরকম লাগবে। কারণ ‘ওমর’ এ প্রচুর হুমায়ূন আহমেদের কাজের ছাপ আছে, গল্প বলার ধরনটাও অনেকটা হুমায়ূনি ঢঙ্গের।, একটা অনির্দিষ্ট দুর্ঘটনা থেকে গল্পের যাত্রা শুরু, এরকমটা বেশিরভাগ হুমায়ূন আহমেদের কাজেই দেখা যায়।

মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের প্রায় সবগুলো সিনেমা আমার দেখা। উনি সিনেমা খুব কম বানান, কিন্তু যেগুলো বানান সেগুলো মুক্তির আগে খুব আলোচিত হয়, আর মুক্তির পরে হতাশ করে। ‘প্রজাপতি’, ‘তারকাটা’, ‘সম্রাট’… তিনটা সিনেমাই আমাকে হতাশ করেছিল। ‘যদি একদিন’ সে তুলনায় একটু ভালো সিনেমা। ‘ওমর’কে আমি ‘যদি একদিন’-এর লেভেলেই রাখবো। কারণ অগোছালো স্ক্রিপ্ট হওয়া সত্ত্বেও; রাজু রাজের করা সুন্দর সিনেমাটোগ্রাফি, ভারতের অমিত চ্যাটার্জির করা ক্যাচি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ও অবশ্যই পরীক্ষিত অভিনেতাদের সুন্দর পারফরম্যান্স সিনেমাটাকে ‘একবার উপভোগ করার মতো’ লেভেল নিয়ে আসে। ঈদের মৌসুমে এরকম হালকা মেজাজের থ্রিলার রিলিজ দেওয়ার দরকার আছে বলে আমি মনে করি।

রেটিং: ৬/১০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র বিষয়ক ব্লগার ও ইউটিউবার

মন্তব্য করুন