Select Page

অঙ্গার-চেনা চেনা লাগে, তবু অচেনা

অঙ্গার-চেনা চেনা লাগে, তবু অচেনা

Angaar joint venture bangla film by jaaz multimedia with eskay movies starring jolly om amit hasan tiger robi directed by wajed ali sumon (3)হলে গিয়ে আমার দেখা প্রথম ছবির নাম-অচেনা। সে ছবির কোন স্মৃতি আমার নেই। গত বছরে জয়েন্ট ভেঞ্চারের যে সব মুভি হয়েছে, সেগুলো তেমন দেখা হয়নি। কারণ, নির্মিত বেশিরভাগ ছবিরই মূল তামিল/তেলেগু ভার্শনটা দেখা ছিল। তার চেয়েও বড় সমস্যা ছবিগুলোর ট্রেইলার, কথোপকথন ঠিক বাংলাদেশী না, বড্ড অচেনা। অঙ্গার নিয়ে আগ্রহ জন্মেছিল একটা কারণে। নবাগতা জলিকে নিয়ে জাজ মাল্টিমিডিয়ার উচ্ছ্বাস চোখে পড়ছিল অনেকদিন থেকে। মূলত জাজের জলিকে জাজ করতেই অঙ্গার দেখতে যাওয়া।

এক গ্রামের দুই পরিবার-সরকার আর মণ্ডল। তাদের শত্রুতার কারণে গ্রামে অশান্তি আর খুনোখুনি লেগেই আছে। সূর্য মণ্ডলের (রজতাভ দত্ত) ডান হাত বিশু (ওম) একাই দশ জনের সমান শক্তির অধিকারী। একদিন বিশুকে আক্রমণ করলো সরকারের লোক। আহত বিশুর প্রাণ বাঁচালো মায়া (জলি), তারপর যথারীতি প্রেম। কিন্তু বিশু একদিন জানতে পারলো মায়ার বাবা আসলে স্বপন সরকার (আশীষ বিদ্যার্থী)।

অঙ্গারের পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমন আর নেহাল দত্ত। ছবিটা সংবাদ সম্মেলনে প্রখ্যাত চিত্রনাট্যকার আব্দুল্লাহ জহির বাবু বলেছিলেন অঙ্গার কলকাতা, বলিউড কিংবা তামিল, তেলেগু ছবির কপি না। কথাটি সম্পূর্ণ সত্যি। এটা কলকাতা, বলিউড বা তামিল, তেলেগু ভাষার কোন ছবির গল্প নয়, এটা একটি কানাড়া ছবির গল্প। ২০১৩ সালে এস নারায়ণের পরিচালনায় মুক্তি পাওয়া Appayya-এর দেশীয় ভার্শন হল অঙ্গার। গল্পের অরিজিনালটি নিয়ে কোন কথা বলছি না, কারণ জাজ থেকে দাবি করা হয়েছে তাদের প্রতিটি ছবিই কপিরাইট কিনে বানানো। সমস্যা হলো গল্পটা অনেক সাধারণ আর চেনা। উপমহাদেশের দর্শকরা এমন গল্পের বহু ছবি আগে দেখেছ। এমন অর্ডিনারি গল্প বেছে নেওয়া এবং সেই গল্পকে ঘিরে প্রত্যাশার এমন বেলুন ফোলানোটা স্বাভাবিকভাবেই বিস্ময় জাগায়।

চিত্রনাট্যে বেশ কিছু পরিবর্তন ভালো লেগেছে। নাহ, কানাড়া নায়িকার লাল ওড়না বদলে জলির ওড়না হলুদ রঙ হয়ে যাবার কথা বলছিনা। অমিত হাসানের বোবা অথবা আশীষ বিদ্যার্থীর হাতে সবসময় একটা লাল বল থাকার মতো ক্যারেক্টার ট্রেইটের কথা বলছি। মূল ছবিতে একটা টাইম লিপ আছে, সেটাকে এড়িয়ে ইনস্ট্যান্ট একটা ক্লাইম্যাক্স দেওয়াটাও প্রশংসার দাবিদার। তবে উল্টোটাও আছে। যেমন : বিশুর সংখ্যা জ্ঞান খুব সীমিত, লাখ বড় না হাজার বড় এটাও জানে না। অথচ সেই কিনা গুণে গুণে পঁচিশ হাজার টাকা চুরি করে এনেছে। বিশু প্রথম খুনটা করে লাশ রেল লাইনে ফেলে আসে। তখন দেখা যায়, অপর লাইন দিয়ে ট্রেইন যাচ্ছে। পরবর্তী দৃশ্যে সরকারের লোক যখন লাশ উদ্ধার করে, ট্রেইন তখন সম্পূর্ণ বিপরীত দিক থেকে আসছিল। তবে সবচে দুর্বল অংশটা হলো পাগলীর ক্যারেক্টারটা। কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে এই ক্যারেক্টারের আগমন ও তার ধন্বন্তরি চিকিৎসক বনে যাওয়াটা আজগুবি লেগেছে।

Angaar joint venture bangla film by jaaz multimedia with eskay movies starring jolly om amit hasan tiger robi directed by wajed ali sumon (4)

অঙ্গার অত্যন্ত সুনির্মিত ছবি। সুমনের একক ও যৌথ (শাহীন-সুমন) দুই রকম কাজই দেখেছি। সুতরাং এই সুনির্মাণের পিছে সুমনের অবদান কতখানি তা ভ্রুকুটির জন্ম দেয়। ছবির সিনেম্যাটোগ্রাফি স্রেফ অসাধারণ। বান্দরবনের লোকেশনকে দারুণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এরিয়াল শট, ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে প্যানোরামিক শটগুলো ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। তবে পুরো সিনেমা জুড়ে একটা এড়িয়ে যাবার প্রবণতা লক্ষণীয়। চরিত্রগুলো কোথাকার সেটা অ্যাক্সেন্ট শুনে বোঝা যায় না, তাদের দেশ, ধর্ম কিছুই ঠাওর করা যায় না। ফলস্বরূপ কোন চরিত্রকেই চেনা লাগে না। পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক বিচারে খুব দূরবর্তী নয়। গুটিকয়েক দৃশ্য, নাম, সেট ডিজাইন পাল্টে দুইবার শ্যুট করলেই ক্রস কালচারাল ডিফরেন্স ঠিক করে নেওয়া যায়। তাতে দর্শকও স্বস্তিবোধ করে আর এত বিনিয়োগের ছবিগুলোও দুই দেশেই সমানভাবে অচেনা লাগে না।

কাস্টের সবাই খুব ভালো অভিনয় করেছেন, মাপা অভিনয় করেছেন। অমিত হাসান একজন বোবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এমন চরিত্রে অতি অভিনয়ের সুযোগ থাকে, কিন্তু অমিত হাসান তা করেননি। সবচে বড় কথা চীৎকার না করেও যে, ভীতি জাগানিয়া পরিবেশ তৈরী করা যায় রজতাভ আর আশীষ সেটা দেখিয়েছেন। খরাজ মুখার্জ্জী দেখিয়েছেন ভাঁড়ামি না করেও দর্শককে হাসানো যায়। শেষ মূহুর্তে শিরিন বকুল নজর কেড়েছেন। একদম নতুন দুই নায়ক-নায়িকাকে এতসব শক্তিমান অভিনেতার পাশে ম্লান লেগেছে। প্রথমে ওমকে নিয়ে বলি। ওমকে এর আগে অগ্নি’র সিক্যুয়েলে দেখেছিলাম। খুবই সাবলীল অভিনেতা, অঙ্গারেও তার কাজ ভালো লেগেছে। নতুন নায়িকা হিসেবে জলিকে আমার ভালো লেগেছে। তবে প্রথম ছবি হিসেবে তার আরও স্পেস পাওনা ছিল।

ছবির সবগুলো গান খুব সুন্দর। তবে আকাশের কাজ এখন খুব চেনা সুরে বাঁধা পড়ে গিয়েছে। আবার বাংলাদেশী গানগুলো মিউজিক অ্যারান্জমেন্ট শুনেই বলে দেওয়া যাচ্ছিল। এটা এখনো কেন আধুনিক হচ্ছে না! ইমন সাহার ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ভালো লেগেছে। গানের কোরিওগ্রাফি অনেক সাধারণ, কিছুটা লো-বাজেট তারপরও ভালো লেগেছে। আইটেম সংটা ভালো হয়নি। আইটেম গার্ল গানের লয়ের সাথে একদমই তাল মেলাতে পারেননি। ওম খুব ভালো নাচতে পারেন। অথচ “মনের ভিতরে, মনের বাহিরে” গানটা ছাড়া তাকে একদমই কাজে লাগানো হয়নি।

Angaar joint venture bangla film by jaaz multimedia with eskay movies starring jolly om amit hasan tiger robi directed by wajed ali sumon (5)

জলিকে আমার বেশ সম্ভাবনাময় মনে হয়েছে। তার এক্সপ্রেশনে ঘাটতি আছে, ভয়েসটা এখনো কিশোরীদের মত। প্রথম ছবির হিসেবেও তার কাজ খুব অ্যাভারেজ ছিল। মাহিয়া মাহির প্রায় সব কয়টা ছবি আমার দেখা। মাহি যে পরিমাণ এক্সপ্রেশন্স নিয়ে শুরু করেছিলেন, পরবর্তীতে কিন্তু সে খাতায় খুব বেশি কিছু যোগ করতে পারেননি। কিন্তু এখন শুধু মাহির নাম দেখেই দর্শক হলে আসে। জলি সেখান থেকে প্রেরণা নিতে পারেন। অভিনয় আর নাচটা ভালোভাবে শিখলে অনেকদূর যেতে পারবেন। জাজ যেহেতু বাংলাদেশী নায়িকা নিয়েই ছবি বানাচ্ছে, তার জন্য অনেক সুযোগ আছে। জলি নুসরাত ফারিয়ার মতো গ্ল্যামারাস বা স্মার্ট নন আর এটাই তার অ্যাডভান্টেজ। ফারিয়াকে দর্শক দেখে “ভদ্রলোকের নায়িকা” হিসেবে, জলি তার সাধারণত্ব আর ইনোসেন্স নিয়ে হতে পারেন কবরীর মতো পাশের বাড়ির মেয়ে।


Leave a reply