অঞ্জনা মারা গেছেন
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
মৃত্যুকালে অঞ্জনার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তিনি ২ মেয়ে ও ১ ছেলে রেখে গেছেন।
অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, একাধিক জাতীয় স্বর্ণপদক, বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন কয়েকবার। নৃত্যশিল্পী হিসেবেও অঞ্জনা পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক স্বীকৃতি। ‘পরিণীতা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার।
একসময়ের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী অঞ্জনা নৃত্যশিল্পী থেকে নায়িকা হয়ে সর্বাধিক যৌথ প্রযোজনা এবং বিদেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
এক সাক্ষাতকারে অঞ্জনা জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ ছাড়াও তিনি অভিনয় করেছেন ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায়।
জানা গেছে, তিন সপ্তাহ ধরে অসুস্থ ছিলেন একসময়ের জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী। শুরুতে জ্বর ছিল। সারা শরীর কেঁপে জ্বর আসত। একটা সময় ওষুধ খেয়েও কাজ হচ্ছিল না। শেষে জানা যায়, তাঁর রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এরপর অঞ্জনাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কদিন তাকে রাখা হয় সিসিইউতে।
সেখানকার চিকিৎসায় শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় হাসপাতাল বদলে গত বুধবার তাকে নেয়া হয় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই রাতেই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় তার অবস্থার কখনও উন্নতি, কখনও অবনতি হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত চলেই গেলেন এ নায়িকা।
অঞ্জনার অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। তবে অঞ্জনা অভিনীত ও একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘দস্যু বনহুর’। ছবিতে তার নায়ক ছিলেন সোহেল রানা। এ ছবির পর তাকে আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হয়নি।
১৯৭৬ সালের এই সিনেমার পর টানা কাজ করেছেন অঞ্জনা। একে একে অভিনয় করেন ‘মাটির মায়া’, ‘অশিক্ষিত’, ‘চোখের মণি’, ‘সুখের সংসার’, ‘জিঞ্জির’, ‘অংশীদার’ ,‘আনারকলি’, ‘বিচারপতি’, ‘আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ’, ‘অভিযান’, ‘মহান’ ও ‘রাজার রাজা’, ‘বিস্ফোরণ’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘রাম রহিম জন’, ‘নাগিনা’, ‘পরীণিতা’ ইত্যাদি বানিজ্যিক সফল সিনেমায়।
অঞ্জনা বিয়ে করেন পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে। তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
গত কয়েক বছরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে সমালোচিত হয়েছিলেন অঞ্জনা। ছাত্রজনতা অভ্যুত্থানের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র ও গালাগালির মাধ্যমে মত প্রকাশ করে তিনি। ৫ আগস্টের পর সেসব পোস্ট মুছে ফেলেন এবং তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।