Select Page

অনবদ্য ‘লাঠিয়াল’

অনবদ্য ‘লাঠিয়াল’

১৯৭৫ সালের ২২ আগস্ট মুক্তিপ্রাপ্ত নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘লাঠিয়াল’ বিভিন্ন কারণেই বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। ১৯৭৬ সালে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আর প্রথম আসরে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে ‘লাঠিয়াল’ ইতিহাসের অংশ হয়ে যায়।

প্রধান অভিনেতা হিসেবে সেই সময়ের জনপ্রিয় ও নন্দিত অভিনেতা আনোয়ার হোসেন ও ফারুক ছিলেন সাবলীল। এই সিনেমায় বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় দেখার পরে তাদের দুজনকেই লাঠিয়াল উপাধি দেন দর্শকেরা। এই ঘটনাটিও ‘লাঠিয়াল’কে আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে।

নদী মাতৃক এই দেশে একটা সময় নদী ও নদীর পার্শ্ববর্তী গ্রাম এবং জনপদের জীবনের অন্যতম নিয়মিত একটা ব্যাপার ছিল হঠাৎ নদী ভাঙ্গল ও চর জাগা। সেই চর দখল নিয়ে দুই বা তিন গ্রুপের মধ্যকার ঝগড়া, মারামারি একটা সময় নিয়মিত ঘটনা ছিল। বিভিন্ন গ্রামে লাঠিয়াল বাহিনীও ছিল। তেমন লাঠিয়াল সদস্যদের গল্প নিয়েই বানিয়েছিলেন এক অসাধারণ সুন্দর সিনেমা।

সিনেমার গল্পটা এমন— আশপাশের গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় লাঠিয়াল হলেন কাদের লাঠিয়াল। গ্রামের প্রভাবশালী মাতবরের হয়ে কাজ করে স্ত্রী ও ভাই দুখু মিয়াকে নিয়ে ভালোই কাটছিল কাদেরের। দুখু  গ্রামে গ্রামে ঘুরে গান করে, আর গ্রামেরই মেয়ে বানুকে পছন্দ করে সে। মাতবরের ছেলে মকবুল বানুকে উত্ত্যক্ত করলে দুখু তাকে মারধোর করে। মাতবর কাদেরের কাছে তার ছেলের গায়ে হাত তোলার অভি্যোগ করে দুই ভাইকে শাসায়।

কাদের রাগান্বিত হয়ে বাড়িতে এসে দুখুকে মারধর করে। এতে দুখু রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। নদী তীরে এক মোড়লের সাথে তার পরিচয় হয়। মোড়ল গানে অভিভূত হয়ে তাকে দলের একজন করে নেয়। যার মাধ্যমে দুখুর নতুন কর্মজীবন শুরু হয়।

এদিকে বানু তার ভালোবাসার মানুষ দুখুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ইতোমধ্যে, মাতবর তার ছেলের বৌ হিসেবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। ভাবি দুখুকে এই খবর পাঠায়, কিন্তু দুখু এর আগেই একটি চর দখল করতে দলের অন্য সদস্যদের নিয়ে চলে যায়। এদিকে মাতবরও তার ছেলের বিয়ের দিনই সেই নতুন চরের খবর পায়। সে কাদেরকে তার লাঠিয়ালসহ সেই চর দখল করতে পাঠায়। বানু ও কাদেরের স্ত্রী বিয়ে বন্ধ করার জন্য নতুন চরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

দুখু ও কাদের দুই দলের প্রধান দুইজনের মধ্যে চরের দখল নিয়ে শুরু হয় জীবন-মরণ যুদ্ধ। দুজনেই চরের দখল ছাড়তে নারাজ। তারপর কী হয় সেটা জানতে হলে দেখতে হবে সিনেমাটি।

কাদের চরিত্রে আনোয়ার হোসেন। তার স্ত্রীর চরিত্রে রোজি আফসারী, দুখু চরিত্রে ফারুক এবং বানু চরিত্রে ববিতা ছিলেন অনবদ্য। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতা, শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেত্রী, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহকসহ মোট ছয়টি বিভাগে জাতীয় পুরস্কার জয়ী এই সিনেমা তৎকালীন সময়ের চর দখল নিয়ে বাস্তবতার নিরিখে এক নান্দনিক উপহার। যেখানে নদী, চর, প্রান্তিক মানুষদের জীবন যাপন ধরন, ভিলেজ পলিটিক্স, ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসা, সম্পর্কের টানাপোড়েনসহ অনেক কিছুই তুলে ধরা হয়েছে।


Leave a reply