Select Page

অনুদান নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই বলল মন্ত্রণালয়, পদত্যাগকারীদের সমালোচনায় কবরী-ইনামুল

অনুদান নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই বলল মন্ত্রণালয়, পদত্যাগকারীদের সমালোচনায় কবরী-ইনামুল

অনুদান কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনে সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রজ্ঞাপন জারি করার অভিযোগ তুলে রোববার পদত্যাগ করেছিলেন চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির চার সদস্য মোরশেদুল ইসলাম, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও মতিন রহমান। বুধবার তথ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কায়সার আলম স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এখানে বিভ্রান্তির কোনও অবকাশ নেই।

একই বিজ্ঞপ্তিতে সংযুক্ত ছিল অনুদানের জন্য চূড়ান্ত হওয়াদের মধ্যে একজন সারাহ বেগম কবরীর তির্যক মন্তব্যও। তার ভাষায়, ‘প্রজ্ঞাপন জারির পর যারা পদত্যাগ করেছে, তাদের আগেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল।’

৭ এপ্রিল তথ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ২০১৮-১৯ সালের জন্য গঠিত চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সভায় দুটি প্রামাণ্যচিত্র, একটি শিশুতোষ ও পাঁচটি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্রকে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মোরশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, কমিটি যে ছবিগুলোকে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, সেগুলো থেকে একটি ছবি বাদ দিয়ে পরে দুটি ছবিকে যুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ নিয়ে কমিটির সঙ্গে কোনো আলাপ করা হয়নি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৮টি চলচ্চিত্রের জন্য অনুদান দেওয়া হয়েছে। অনুদান পাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে দেশের চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি সারাহ বেগম কবরীর ‘এই তুমি সেই তুমি’ এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও প্রখ্যাত অভিনয়শিল্পী ড. ইনামুল হকের ‘১৯৭১-সেইসব দিন’ ছবি দুটির বিষয়ে ১১ সদস্যের অনুদান কমিটির চারজন অজানা কারণে ক্রমাগত অসম্মতি জানিয়ে আসছিলেন।

মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা এবং চলচ্চিত্র অঙ্গনে দেশবরেণ্য চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের অবদান রাখার সুযোগ দেওয়ার জন্য কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে সুপারিশকৃত সব কটি চলচ্চিত্রের সঙ্গে উল্লিখিত দুটি চলচ্চিত্রকেও অনুদানের আওতায় আনা হয়। এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে অনুদান কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য সহমত পোষণ করেছেন। এ বিষয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।’

চলচ্চিত্রশিল্পে মেধা ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা এবং বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখতে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মানবীয় মূল্যবোধসম্পন্ন জীবনমুখী, রুচিশীল ও শিল্পমানসমৃদ্ধ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে চলচ্চিত্রে অনুদান চালু করেছে বাংলাদেশ সরকার। গত ২৪ এপ্রিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে শিশুতোষ, প্রামাণ্যচিত্র ও পূর্ণদৈর্ঘ্য ৮টি ছবিকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়।

এদিকে নিজের ছবির ব্যাপারে আপত্তি প্রসঙ্গে কবরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুদানের বিষয়ে মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা সঠিক। বিগত দিনেও দেখেছি, এসব জায়গায় একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে রেখেছে কয়েকজন লোক। সব সময় তারাই ভালো নির্মাতাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছে। যারা এগুলো করে, তাদের উদ্দেশ্য সব সময় অসৎ। তবে মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল এদের চিহ্নিত করে আগেই বাদ দেওয়া। প্রজ্ঞাপন জারির পর যারা পদত্যাগ করেছে, তাদের আগেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল। তাদের এখন পদত্যাগ করা বা না–করা একই কথা। সবকিছু সুন্দরভাবে শেষ হওয়ার পর পদত্যাগ করতে চাওয়ায় বোঝা যায় যে, তাদের উদ্দেশ্য অসৎ।’

ইনামুল হক বলেন, ‘আগেও আমার এই চিত্রনাট্যটি জমা দেওয়া হয়েছিল। অনবরত আমার চিত্রনাট্য অনুদান–অযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে কেন, তা বোধগম্য নয়। নিশ্চয়ই ঈর্ষাকাতর হয়ে এমনটি করা হচ্ছে। কারও যদি আপত্তি থাকত, তাহলে মন্ত্রীকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতেই পারতেন। বলতে পারতেন, আপনার সিদ্ধান্ত আমাদের পছন্দ হয়নি।’

ইনামুল হক দাবি করেন, ‘চিত্রনাট্য নিয়ে আপত্তির সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ কেউ দেখাতে পারেননি। যাঁদের চিত্রনাট্য নিয়ে আপত্তি তুলেছেন, তাঁরা ফেলনা কেউ নন। চলচ্চিত্র ও নাটকেই তাঁদের পুরোটা জীবন কেটেছে। সরকারের কাছ থেকে অনৈতিক কোনো সুবিধা আমি নিইনি।’

এর আগে চার সদস্যের স্বাক্ষর করা চিঠিতে বলা হয়, ‘অনুদান কমিটির সদস্য হিসেবে আমাদের এর আগেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের দুঃখজনক অভিজ্ঞতা আর কখনো হয়নি। এ অবস্থায় অনুদান কমিটির সদস্য হিসেবে থাকা আমাদের জন্য সম্মানজনক ও যুক্তিযুক্ত মনে না হওয়ায় আমরা চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’


Leave a reply