Select Page

‘অনুদান’ প্রসঙ্গে মালেক আফসারী: পুরো বিষয়টাই ফরমায়েশি

‘অনুদান’ প্রসঙ্গে মালেক আফসারী: পুরো বিষয়টাই ফরমায়েশি

তর্ক-বিতর্ক সত্ত্বেও ঢালিউড সিনেমার বড় নাম মালেক আফসারী। ১৯৮০ এর দশক থেকে প্রায় ২৫টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এগুলোর বেশির ভাগই ব্যবসা সফল। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া পাসওয়ার্ডের পর আর চলচ্চিত্র নির্মাণে দেখা যায়নি। বর্তমানে ফেসবুক ও ইউটিউবে সিনেমা নিয়ে গল্প-গুজব করে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা।

সম্প্রতি জন্মদিন উপলক্ষে দেয়া সাক্ষাৎকারে ‘ক্ষতিপূরণ’ সিনেমার মাধ্যমে ফেইমে আসা মালেক আফসারী জানান, আর চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন না। নির্মাণের ইচ্ছা মরে গেছে তারা।

একসময় পরিচালনার পাশাপাশি প্রযোজনায়ও ছিলেন মালেক আফসারী। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘অশ্লীল’ সিনেমাও বানিয়েছেন তিনি। চলচ্চিত্রের না থাকার পেছনে বর্তমানের প্রযোজনার অবস্থাকে দায়ি করেন।

মালেক আফসারী বলেন, ‘আমি মনে করি, কোনো পরিচালক যখন শিল্পীর পেছনে ঘোরে তখন সে সুযোগ নেবেই। উল্টো শিল্পী যদি পরিচালকের পেছনে ঘোরে সেটা হবে সঠিক কাজ। আর পরিচালক যদি শিল্পীর পেছনে ঘোরে তাহলে কাজ করবে কখন? একটা চরিত্র তো আর সিনেমায় থাকে না। সবার পেছনে ঘুরতে গেলে সিনেমা করার সুযোগই তো পাবে না। পরিচালকের উচিত সিনেমা নিয়ে ভাবা। কিন্তু আমাদের প্রডিউসারকে নিয়ে বনানীতে গিয়ে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় আড্ডা দিতে হয়। আমি এসবের মধ্যে নেই।’

‘আগে পরিচালকের হাত ধরে প্রযোজক আসত। এখন পরিচালকের হাত ধরে আসে না। আসে নায়িকার হাত ধরে অথবা নায়কের হাত ধরে। ধরেন অনেক প্রযোজক আছেন যাদের নায়িকারা বান্ধবী। সেই লোকের আবার অনেক টাকা। এমনও হয়, মাসে কোটি টাকা শুধু ব্যাংক থেকে ইন্টারেস্টই পায়। তো নায়িকা বান্ধবী যদি তাকে ধরে, সে তো সিনেমা বানাবেই। সে তো গল্প বোঝে না, চরিত্র বোঝে না, পরিচালক বোঝে না। সে শুধু তার বান্ধবীকে বোঝে। অথবা তার একটা বন্ধু হিরো হতে চেয়েছে আর ইনভেস্ট করেছে। এভাবে সিনেমা হয় না। সিনেমা একটা রাজকীয় ব্যাপার।’

নির্মাতার সর্বশেষ সিনেমা ‘পাসওয়ার্ড’-এর নায়ক ছিলেন শাকিব খান। জানালেন ঢালিউডের নাম্বার নায়কের সঙ্গেও যোগাযোগ নেই। যদিও মাঝে জানিয়েছিলেন, তারা আবার সিনেমা করছেন।

মালেক আফসারী বলেন, ‘গত বছর আমাকে প্রযোজক তাপসী ঠাকুর বলেছিলেন শাকিব খানকে নিয়ে সিনেমা বানাতে। আমি না করে দিয়েছি। কারণ শাকিব খান যদি আমাকে না করে দেয় তাহলে তো আমি এটা মেনে নিতে পারব না।’

বর্তমানে বছরের একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সিনেমা তৈরি হচ্ছে সরকারি অনুদানে। এ ধারার নির্মাণ নিয়েও সমালোচনা আছে ‘এই ঘর এই সংসার’ নির্মাতার। তিনি বলেন, ‘আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির বড় ক্ষতি হয়েছে অনুদানের কারণে। যখন আপনি অনুদান নিচ্ছেন তখন কিন্তু আপনি বস ডেকে অনুদান নিচ্ছেন। একই সঙ্গে চলচ্চিত্রের গল্পে এমন কিছু লিখছেন, যে কারণে আপনি অনুদান পাচ্ছেন। এর মানে পুরো বিষয়টাই একটা ফরমায়েশির ব্যাপার। সিনেমা তো ফরমায়েশে হয় না। ধরেন, হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকতে আমি গিয়ে যদি বলতাম, স্যার পুলিশের এমন একটা চরিত্র বানান, যে কখনো ঘুষ খাবে না, সব সময় ভালো কাজ করবে। আপনার কি মনে হয় এটা হুমায়ূন সাহেব মানতেন?’

সিনেমা নির্মাণের চেয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় আয় বেশি বলে জানান এক সময়ের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নিয়েছেন বলে অতীতে দাবি করা মালেক আফসারী। জানালেন সর্বশেষ সিনেমার সম্মানীর চেয়ে বেশি আয় হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মালেক আফসারী বলেন, ‘আমি একটা সিনেমা করে যে সম্মানী পাই; মানে সর্বশেষ পাসওয়ার্ড সিনেমায় যেটা পেয়েছি এর চেয়ে বেশি টাকা দুই মাসেই চলে আসে। সহজ করে বললে, মাসে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আসে। আমি তো ভিডিও কম দিই, আরো বেশি দিলে হয়তো বেশি পেতাম। তবে এ রকম টাকা-পয়সা এলে দেড়-দুই বছর পর নিজের টাকায় সিনেমা বানাতে পারব।’ মালেক আফসারীর জন্মদিনে (২৩ অক্টোবর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ। এ নির্মাতা গত কয়েক বছরে একাধিক প্রজেক্টের সঙ্গে নিজেকে জড়ালেও কোনোটি শুটিং ফ্লোর পর্যন্ত যায়নি। শুধু খবরেই এসেছে।


Leave a reply