Select Page

‘অন্তরাত্মা’ চার বছর আগে মুক্তি পেলেও সেকেলে বলতাম

‘অন্তরাত্মা’ চার বছর আগে মুক্তি পেলেও সেকেলে বলতাম

 [স্পয়লার নেই, অবশ্য স্পয়লার দিলেই কী! এই সিনেমা আপনারা দেখতে যাবেন বলে মনে হয় না…]

এক্সসেপশন ও এক্সামপল প্রথম একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি। তার শত্রুর শেষ নেই। ঘটনাচক্রে রূপকথা নামের তরুণীর প্রেমে পড়ে যায় প্রথম। রূপকথাও মন দিয়ে দেয় প্রথমকে। তবে তারপরই তাদের জীবনে আসে নানা সমস্যা। কী সেসব— তা জানতে হলে দেখতে হবে ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত এবং শাকিব খান, দর্শনা বণিক, শাহেদ শরীফ খান অভিনীত সিনেমা ‘অন্তরাত্মা’।

শুরুতে এই সিনেমার পজিটিভ দিকগুলোর ব্যাপারে বলি। প্রথমত, এই সিনেমায় দর্শনা বণিক ভালো কাজ করেছেন। পুরো সিনেমাজুড়ে তাকে বেশ সুন্দর লাগছিলো দেখতে। অবশ্য তিনি এই সিনেমার ডাবিং করেননি। দ্বিতীয়ত, সিনেমার তিনটি গানই ভালো ছিল। বিশেষ করে জুবিন নটিয়ালের কণ্ঠে ‘অন্তরাত্মা’ টাইটেল সং এবং পিন্টু কুমার ঘোষ ও ন্যান্সির কণ্ঠে ‘একা আড়ালে’ গান দুটি বেশ শ্রুতিমধুর লেগেছে। সর্বশেষ, সেকেন্ড হাফে গিয়ে গল্পের কিছু অংশ বেটার ছিল। ব্যস, এই সিনেমার জন্য আমার কাছে এটুকুই পজিটিভ ছিল।

এবার আসি নেগেটিভ দিকগুলোতে। আমরা সবাই জানি যে ‘অন্তরাত্মা’ ২০২১ সালের সিনেমা। করোনাসহ অন্যান্য কারণে সিনেমাটা রিলিজ হতে ৪ বছর সময় নিয়েছে। কিন্তু এই সিনেমা যদি ২০২১ সালেও মুক্তি পেতো, তারপরও ‘অন্তরাত্মা’কে ব্যাকডেটেড সিনেমাই বলতাম। কারণ, এই সিনেমার ট্রিটমেন্ট খুবই সেকেলে। এমন ট্রিটমেন্টের সিনেমা আমরা ২০১২-১৩ সাল পর্যন্ত দেখে এসেছি। যা এখনকার সময়ের সাথে কোনোভাবেই যায়না। এই ব্যাপারটাকে আমি যদি কোনোভাবে কনসিডার করিও, পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমনের মেকিং আপনাকে যথেষ্ট হতাশ করবে। কেননা ‘অন্তরাত্মা’র মেকিংও খুবই দুর্বল।

সিনেমাটা শুরুই হয় বেশ অদ্ভুতভাবে। কোনো ক্যারেক্টারাইজেশন নেই। ইমোশনের যথেষ্ট অভাব বোধ করেছি। চরিত্রগুলোর সাথে একেবারেই কানেক্টেড ফিল করতে পারিনি। এই অংশের এডিটিং-ও তেমন ভালো নয়। মনে হচ্ছিলো ফুটেজ সংকটে পড়েছিল ‘অন্তরাত্মা’। পুরো ফার্স্টহাফ কেমন যেনো মিউজিক্যাল ফিল্মের ভাইব দিয়েছে। কিছু প্যানপেনে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পুরো সিনেমাজুড়েই বেজেছে। ফেরারী ফরহাদের কবিতা ও কাব্যিক সংলাপগুলো প্রত্যেকটা চরিত্রকে কোনো কারণ ছাড়াই কবি বানিয়ে দিয়েছে। এমন উদ্ভট কর্মকাণ্ডের আসলেই কোনো মানে ছিলো না।

শাকিব খানের সাথে দর্শনা বণিকের রসায়নও ঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি পরিচালক। ফার্স্ট হাফ যথেষ্ট বোর করেছে। তবে গল্প সেকেন্ড হাফে গিয়ে যখনই একটু বেটার হওয়ার চেষ্টা করে, তখনই আমার মনে আসে-“আরেহ, এটা তো ‘খায়রুন সুন্দরী’র মর্ডান এডাপটেশন দেখছি!” বস্তুত, সেকেন্ড হাফে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনা ‘খায়রুন সুন্দরী’ সিনেমার সাথে অনেকটাই মিলে যায়। আর ক্লাইমেক্সে কী ঘটতে পারে, সেটা ট্রেইলার দেখেই প্রেডিক্ট করেছিলাম। আর হয়েছেও তাই। তারপরও এই সিনেমার সেকেন্ড হাফ আমাকে একেবারে ঘুমিয়ে যেতে দেয়নি। এক চোখ খোলা রেখে হলেও পুরো সিনেমা শেষ করেছি।

এই সিনেমায় শাকিব খানের চরিত্রটাই আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। উনি কী করছেন, কেন করছেন— জাস্ট কিচ্ছু বুঝিনি। ওনার পারফরম্যান্স নিয়েও এই সিনেমায় অভিযোগের জায়গা আছে। আবার, সিনেমার ফার্স্টহাফে শাকিব খানকে একটু মোটা লাগলেও সেকেন্ড হাফে ওনাকে স্লিম দেখানো হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়া সিনেমায় ওনার এমন ট্রান্সফরমেশন কেনো ঘটলো— সেটারও কোনো ব্যাখ্যা নেই। শাহেদ শরীফ খান পুরো সিনেমার বেশিরভাগ সময়ই ওভারএক্টিং করে গেছেন। সিনেমায় বাকিরা তেমন স্পেস পাননি। তাই তাদের নিয়ে কথা বলা সমীচীন হবেনা।

এই সিনেমার ক্যামেরার কাজ অ্যাভারেজ। কালার গ্রেডিং এই সময়ের সাথে যাচ্ছে না। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজও তেমন ভালো নয়।

সবমিলিয়ে এই ছিল আমার দৃষ্টিতে ‘অন্তরাত্মা’। এই সিনেমা দেখে আমি যে আত্মা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছি-সেটাই অনেক। হাতে অঢেল সময় এবং টাকা থাকলে ‘অন্তরাত্মা’ দেখে নষ্ট করতে পারেন।


Leave a reply