Select Page

‘অন্তর্জাল’-এ আরো পরিণত দীপংকর দীপন

‘অন্তর্জাল’-এ আরো পরিণত দীপংকর দীপন

সাইবার ক্রাইম জনরার হওয়ার কারণে ‘অন্তর্জাল‘ নির্মাণে দুটো প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল …

প্রথম সিনেমা ‘ঢাকা অ্যাটাক’ দিয়ে দীপংকর দীপন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন থ্রিলার জনরায় তার আকর্ষণ রয়েছে। আছে দর্শকদের মুগ্ধ করার ক্ষমতা। পরের দুই সিনেমায় থ্রিল বেছে নিলেও একই পথে হাঁটেননি। ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে আরো পোক্ত সিনেমা বানিয়েছেন। সর্বশেষ ‘অন্তর্জাল’-এ আরো পরিণত দীপংকর দীপনকে পাওয়া গেল।

সাইবার ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার এ সিনেমা নিয়ে এককথায় বলা যায়, ভালো ও উপভোগ্য। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ও ‘অপারেশন সুন্দরবন’-এর তুলনায় বেশ ভালো। নতুনত্ব আনতে পেরেছেন দীপন।

মন্দের মধ্যে ছিল কিছু লুপহোল। যা গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতাকে নষ্ট করেছে, তবে ততটা আশংকাজনক পরিমাণে নয়। বিশেষ করে আগের দুই সিনেমার তুলনায় অল্প। এ সিনেমার বড় বৈশিষ্ট্য হলো গল্পে ফোকাসড ছিল বরাবরই। সিয়াম আহমেদ ও সুনেরাহ বিনতে কামালের প্রেম উঠে আসলেও তা মূল গল্পকে ছাপিয়ে যায়নি। আবার এবিএম সুমন বা বিদ্যা সিনহা মিমের মধ্যে প্রেমঘটিত কিছু দেখানো হয়নি। এটা ভালো ও সিনেমাকে ক্লিশে হতে দেয়নি।

অবশ্য শেষ দিকের মারামারি আরোপিত মনে হয়েছে। কারো কারো মনে হতে পারে শুধু বাণিজ্যিক কারণে এমনটা করা হয়েছে।

বরাবরই টুইস্টের প্রতি ঝোঁক রয়েছে দীপংকর দীপনের। ভিলেনকে জানার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দর্শককে বসিয়ে রাখতে চান তিনি। এখানেও ব্যতিক্রম হয়নি। ‘অন্তর্জাল’-এর শেষ টুইস্টটা ভালো ছিলো। যদিও আমি বিরতির একটু পরেই ধরে ফেলেছিলাম কে ভিলেন। বিশেষ করে কিছু ফ্রেমিংয়ের কারণে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো।

অভিনয়ের দিক থেকে সবার নজর ছিল সিয়াম আহমেদের দিকে। তবে তার কাজে কিছুটা ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। অন্যদিকে চরিত্র অনুসারে ভালো করেছেন কিটো ভাই, সুমন, মিম ও সুনেরাহ। রওনক হাসানের কাছে আরেকটু ভালো কিছু আশা করেছিলাম। খারাপ না হলেও আপ টু দ্য মার্ক মনে হয়নি।

কারিগরি দিক থেকে স্বস্তির যা ছিল, দীপনের আগের সিনেমাগুলোর মতো সিনেমাটোগ্রাফি দেখানোর প্রবণতা ছিল না। বরং সিচুয়েশন অনুযায়ী এগোতে দেখা গেছে।

সাইবার ক্রাইম জনরার হওয়ার কারণে এ ছবি নির্মাণে দুটো চ্যালেঞ্জ ছিল। একটা হলো টেকনিক্যাল বিষয়াদি দর্শকের সামনে সহজ ও বিনোদনের মাধ্যমে তুলে ধরা। অন্যটি ডিজিটাল জগতের সঙ্গে মানানসই ভিএফএক্স ও গ্রাফিকস। যেহেতু হালের দর্শকরা হলিউডের উঁচুমানের ভিএফএক্সের কাজ দেখতে অভ্যস্ত। এসব জায়গায় দুর্বলতা নেই বললেই চলে।

হয়তো টেকনিক্যালি অনেক সহজ কিন্তু অজানা টার্ম অনেকেই বুঝবে না। এ বিবেচনায় কাহিনি মোটামুটি বোঝার মতো করে বানানোর চেষ্টা করছে দীপন। অন্যদিকে একবার একটা প্লেন উড়ে যাওয়ার সিনে কিছুটা দুর্বল লাগছে। আর চাটার্ড প্লেনের ভেতরের দৃশ্যেও কিছুটা অসংগতি মনে হয়েছে।

এ ধরনের থ্রিলারে যেমন হওয়ার কথা, সে অর্থে আবহ সংগীতের কাজ ভালো হয়েছে। তবে গান দেখতে-শুনতে সিনেমা হলে ভালো লাগলেও ততটা মন কাড়ে না। দীপংকর দীপনের বোধহয় এদিকে আরেকটু ভাবা দরকার।

দীপংকর দীপনের সিনেমার একটি দিক হলো- সরকারের কোনো বাহিনী বা মন্ত্রণালয়ের সংযুক্তি। তাদের গুণগান বা কোনো এজেন্ডা পূরণের বিষয়টি প্রশ্ন আকারে থাকে। দর্শকও সংশয়ের দৃষ্টিতে দেখে। এ সিনেমা টেকনিক্যালি সরকারকে প্রেজেন্ট করেছে। তবে স্বস্তির বিষয় হলো সরাসরি সেদিকে খুব একটা এগোয়নি। সমসাময়িক বিষয়ে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ না করেই গল্পের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করেছেন।

এ ছবির সবচেয়ে বড় দিক স্টোরি টেলিং। আজকাল বাংলা সিনেমায় এর অভাব বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাকি দিকেও সমান নজর দেখার চেষ্টা করেছেন দীপংকর দীপন। সব মিলিয়ে প্রত্যাশা মোটামুটি পূরণ করেছে ‘অন্তর্জাল’।

রেটিং: ৩.৭৫/৫


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

আদিত্য রহমান

দেখি আর ভাবি!

মন্তব্য করুন