অন্তর্জাল: নতুন বিষয়ের এক্সপেরিমেন্ট
‘অন্তর্জাল‘-এও নতুন একটি সমস্যাকে নিয়ে ছবি বানিয়েছেন তিনি …
নব্বই দশকে সামাজিক, রাজনৈতিক সমস্যা বা অবক্ষয় নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হত। তখন এসব ছবির পরিচালক ছিলেন কাজী হায়াৎ, শহীদুল ইসলাম খোকন, মহম্মদ হান্নান-দের মতো নির্মাতারা। তাঁদের ছবিগুলো বিভিন্নভাবে সামাজিক, রাজনৈতিক সমস্যা তুলে ধরত। সেই সময়ের জন্য সেসব ছবি দর্শকের কাছে সমাদৃত হয়েছিল। এখন একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে সমস্যাগুলোর ধরন পাল্টে গেছে।
দীপংকর দীপন তাঁর ছবিগুলোতে বৈশ্বিক সমস্যার দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন। তাঁর প্রথম ছবি ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এ জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদের চিত্র যেভাবে সারাবিশ্বে ছড়িয়েছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তুলে ধরা হয়েছিল। ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবিতেও জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব ও অরণ্যকেন্দ্রিক অপরাধের একটা চিত্র দেখানো হয়েছে। নতুন ছবি ‘অন্তর্জাল’-এও নতুন একটি সমস্যাকে নিয়ে ছবি বানিয়েছেন তিনি। ইন্টারনেট-কেন্দ্রিক সংঘটিত হয় যেসব অপরাধ তার মধ্যে একটি সমস্যাকে তুলে ধরে নির্মিত হয়েছে ছবিটি।
প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো এ সময়ে গ্রো করেছে যার জন্য এসব বিষয়ও সমস্যা তৈরি করেছে চলমান বিশ্বে। ‘অন্তর্জাল’ ছবি বিষয়গত দিক থেকে নতুন এবং দেশের চলচ্চিত্রে নতুন একটি প্রচেষ্টা। প্রযুক্তির ভাষাতেই ছবির নামকরণ করা হয়েছে।
ব্যাংকে টাকা তুলতে যায় কিছু গ্রাহক তারপর একটা সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যাটিকে ধরতে গিয়ে লোকাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে তার বিস্তার ঘটে যায়। ছবির গল্প মূল সমস্যাটিকে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করতে থাকে।
যেকোনো সমস্যার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা পজেটিভ ও নেগেটিভ দুইভাবেই ঘটে এ ছবিতে সে প্রভাবটিও স্পষ্ট।
সিয়াম আহমেদ, এবিএম সুমন, বিদ্যা সিনহা মিম, সুনেরাহ বিনতে কামাল, রওনক হাসানসহ অন্যান্য অভিনয়শিল্পী সবার জন্যই যথেষ্ট স্ক্রিনটাইম ছিল। সিয়াম ও মিমের পারফরম্যান্স সবচেয়ে ভালো ছিল, এ দুজনের অভিনয় ন্যাচারাল। এবিএম সুমনের স্মার্টনেসটাই যেন আকর্ষণীয় ছিল বেশি। সুনেরাহর অভিনয়ে কমার্শিয়াল ছবির ইমোশনের অভাব ছিল। স্যাড মোমেন্টে অতটা ন্যাচারাল না। কিটোভাইয়ের অভিনয়ও তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু না, মায়ের জন্য ব্যাকুল ছেলের কান্না লুকিয়ে সে অভিনয়ের দুর্বলতা যেন প্রকাশিত হচ্ছিল। রওনক হাসান উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার চরিত্রে পারফেক্ট। অন্যান্য চরিত্রগুলো যার যার জায়গায় চলনসই।
ছবির প্রথমার্ধ্বের থেকে দ্বিতীয়ার্ধ্ব বেশি বড় ছিল এবং প্রযুক্তিগত যে সমস্যাটিকে গল্পে তুলে ধরা হয়েছে ছবির দ্বিতীয়ার্ধ্বেই সেটি ছিল। প্রযুক্তিগত বিভিন্ন টার্মের ব্যবহার পুরো ছবিতেই ছিল।
ছবির লোকেশনে দেশি-বিদেশি ব্যাপারটা গল্পের কারণেই হয়েছে। বিজিএম পরিচালকের অন্যান্য ছবির মতোই বেটার। ক্যানভাসটা বড় ছিল নির্মাণের। টুইস্টটাও ভালো ছিল।
দীপংকর দীপনের বিভিন্ন বিষয়ে ছবি বানানোর চেষ্টাটি প্রশংসনীয়। ‘অন্তর্জাল’ তাঁর নতুন এক্সপেরিমেন্টের মানসম্মত ছবি হয়েছে। নতুন নতুন বিষয়ে ছবি বানানোর এ ধারাবাহিকতাও বজায় থাকুক।
রেটিং – ৭.৫/১০