Select Page

অর্ষা: পর্দায় তার তুমুল সময়

অর্ষা: পর্দায় তার তুমুল সময়

ছোট পর্দায় গুণী ও জনপ্রিয় একটি নাম নাজিয়া হক অর্ষা। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার-২০০৯ এর মাধ্যমে মিডিয়া জগতে আগমন ঘটে তার। প্রতিযোগিতায় সেরা চারের মধ্যে জায়গা করে নেন তিনি। প্রথমদিকে মডেলিংয়ের দিকে ঝোঁক থাকলেও পরবর্তীতে অভিনয়ে মনযোগী হন। এবং পরিশ্রম, ধৈর্য্য, প্রতিভার জোরে হালের অন্যতম অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত ‘দ্বন্দ্ব’ নাটকের মধ্য দিয়ে অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। বেশকিছু নাটকে তার অভিনয় দক্ষতা তাকে মোটামুটি পরিচিতি এনে দেয়। এরপর সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত উপন্যাস ‘সাতকাহন’ অবলম্বনে নির্মিত ধারাবাহিক ‘সাতকাহন’-এ তরুণী দীপাবলীর চরিত্রে অভিনয় করে ভীষণ জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যতটা গুণী ও দক্ষ অভিনেত্রী তিনি পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী কাজের সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তবে শিহাব শাহীনের ‘এক হৃদয়হীনা’ নামের টেলিফিল্ম তার ক্যারিয়ারে অনন্য সংযোজন, বিপরীতে ছিলেন অপূর্ব। 

বাংলাদেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো জনপ্রিয় হবার সময় থেকেই বেশ কয়েকজন আন্ডাররেটেড শিল্পী ও কলাকুশলী নতুন করে আলোচনায় আসেন। আর সেই কাতারের প্রথমদিকেই থাকবে অর্ষার নামটি। ভিন্নধর্মী ও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে তার উপস্থিতি সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়। নতুন প্রজন্মও অর্ষাকে আবিষ্কার করেন নতুনভাবে।

২০২১ সালে নেট দুনিয়ায় রীতিমতো ঝড় তোলে মিজানুর রহমান আরিয়ানের প্রথম ওয়েবফিল্ম ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’। তারুণ্য ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে এই ওয়েবফিল্মে চারজন বন্ধুর গল্প দেখানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল ভূমিকায় এই সময়ের সম্ভাবনাময় চার তরুণের অভিনয় দেখার সুযোগ পেয়েছি; শরীফুল রাজ, ইয়াশ রোহান, খায়রুল বাসার ও জুনায়েদ। এই চারজনের পাশাপাশি আলোচনা ও প্রশংসা পেয়েছেন চার নায়িকা। উপস্থিতি স্বল্প সময়ের জন্য হলেও গল্পে তাদের ভূমিকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এবং এই চারজনের মাঝে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও প্রশংসা পেয়েছেন তানিয়া চরিত্রের অর্ষা। তিনি যেন নতুনভাবে মন্ত্রমুগ্ধ করলেন আমাদের।

নাটক, টেলিফিল্ম বা বিজ্ঞাপনে নিয়মিত কাজ করলেও একটা সময় কাজ করা কমিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কারণ হিসেবে জানান, নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী গল্প বা চরিত্র না পাওয়ার ক্ষোভ বা অভিমান। তাই মাঝেমধ্যে একটু চ্যালেঞ্জিং ও ইউনিক কিছু ফিকশনেই দেখা মিলতে শুরু করে অর্ষার। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জনপ্রিয় হবার পর থেকে সেই সুযোগ আরও বাড়ে।

অর্ষা তার অভিনীত প্রথম ওয়েব সিরিজের মাধ্যমেই আলাদা ছাপ রাখতে সক্ষম হন। অপূর্ব, আফরান নিশো ও তাহসানের সাথে শিহাব শাহীনের পরিচালনায় ‘দ্বিতীয় কৈশোর’ ভালো সাড়া ফেলেছিল। ২০২০ সালে ‘বুমেরাং’ নামক ফিকশন দিয়ে আবারো অভিনেত্রী হিসেবে সবার নজরে এসেছিলেন। পরের বছর ঈদুল আজহায় ‘বঙ্গ বব-সিজন ওয়ান’-এর ‘মিস্টার কে’ টেলিফিল্মে বাজিমাত করে দেন।

একটা কথা আছে অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়। সেই কথা ধরেই যেন বিরতি বা অল্প কাজে বিশ্বাসী মনোভাব অর্ষার জন্য শাপেবর হয়েছে। কিছুদিন আগেই তো ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘হইচই’-এ আশফাক নিপুণের সিরিজ ‘সাবরিনা’তে ভিক্টিম সাবরিনা চরিত্রে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন অর্ষা। এ সময়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী ও গুণী অভিনেতা ইন্তেখাব দিনারের চাপে একটুও ম্লান হননি তিনি। তার অভিনয় মুগ্ধতা ছড়িয়েছে পুরো সিরিজেই। এর আগে জি ফাইভে আবু হায়াত মাহমুদের পরিচালনায় ‘দ্য ব্রোকার’ ফিকশনেও মোশাররফ করিমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন।

ওয়েবে অর্ষায় বাছাই করা চরিত্রগুলো কেমন? ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ ওয়েবফিল্মে ভীষণ ব্যক্তিত্ববান ডাক্তার তানিয়া যে কিনা হঠাৎ করেই তার চেয়ে বয়সে ছোট এক তরুণের প্রেমে পড়ে। কিন্তু সেই অসম বয়সী দুজনের ভালোবাসা প্রকাশে নেই কোনো আদিখ্যেতা, নেই বাড়াবাড়ি বরং খুব সহজ করেই বাস্তববতার সাথে মিল রেখে তানিয়া চরিত্রটিকে তুলে ধরেছেন তিনি। আবার হইচইয়ের ‘সাবরিনা’তে এক গৃহবধু যাকে স্বামী সন্দেহ করে, জায়গা জমি নিয়ে রাজনৈতিক নেতার সাথে দ্বন্দ্ব এবং অবশেষে নির্যাতনের পরে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেস্টা করা হয় এমন চরিত্রে নিজের সেরাটাই দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া ‘মিস্টার কে’ টেলিফিল্মে প্রয়াত এক ধনকুবেরের রহস্যময় সহকারী হিসেবে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন।

স্বাভাবিকভাবেই সাম্প্রতিককালের এই আলোচনা প্রশংসা নিয়েও উচ্ছ্বসিত এই অভিনেত্রী। অর্ষা জানান, ‘আমি চরিত্র অনুযায়ী অভিনয় করতে চেষ্টা করেছি। পুরো টিমের সহযোগিতা না পেলে সেটা কখনোই সম্ভব হতোনা। দিন শেষে আসলে দর্শকের মতামতটাই আমাদের কাছে সব থেকে বড় ফ্যাক্টর। তাই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে, তারা আমাদেরকে এতো ভালোবাসা দিচ্ছেন, সামনের দিনে আরো ভালো কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেছে এই কাজগুলোর প্রতি ভালোবাসা দেখে।’

অর্ষা এখন চলচ্চিত্র নিয়েও ব্যস্ত সময় পার করছেন। হৃদি হক পরিচালিত সরকারি অনুদানে নির্মিতব্য ‘১৯৭১ সেইসব দিন’ শিরোনামের সিনেমায় একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। এর আগে ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মাশরুর পারভেজ পরিচালিত ‘রাইয়ান’ ও ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শাহরিয়ার নাজিম জয় পরিচালিত ‘অর্পিতা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সাজ্জাদ খানের পরিচালনায় ‘সাহস’ সিনেমার কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সেন্সর বিতর্কের কারণে ‘সাহস’ এখনই আলোচনায় রয়েছে।

টেলিভিশন, ওটিটি এবং চলচ্চিত্র তিনটি বিনোদন মাধ্যমেই কাজ কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করা এই গুনী অভিনেত্রী সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন- ‘সত্যি বলতে প্রতিটা মাধ্যমেই কাজের মজা আলাদা। আমি ভিন্নধর্মী কাজে সুযোগ পাচ্ছি বলেই অভিনয় করছি। আগামীতেও এভাবেই কাজ করে যেতে চাই। কিন্তু এখন একটু দেখেশুনে কাজ করছি আমি। প্রস্তাব পেলেই কিন্তু সব কাজে রাজি হচ্ছি না। সময় নিয়ে স্ক্রিপ্ট পড়ে সবকিছু জানার পর সিদ্ধান্ত নিচ্ছি কাজ করবো কিনা! গল্পনির্ভর ও মানসম্মত কাজগুলোতে যুক্ত হয়ে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেয়াটাই এখন অভিনেত্রী হিসেবে আমার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য’।

শুভকামনা রইলো এই গুনী এবং শক্তিশালী অভিনেত্রীর জন্য। সামনের দিনগুলোতে ভিউ বা জনপ্রিয়তার মাপকাঠি একপাশে সরিয়ে আমাদের গল্পকার এবং নির্মাতারা অর্ষাসহ দেশের অন্যান্য পরীক্ষিত এবং নান্দনিক শিল্পীদের নিয়ে নতুন করে ভাববেন এটাই কামনা।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

আফজালুর ফেরদৌস রুমন

শখের বশে চলচ্চিত্র ও নাটক নিয়ে লিখি

মন্তব্য করুন