অসমাপ্ত ছবির পরিচালক, চিত্রকর ও অভিনেতা সৈয়দ আখতার আলী
‘বাবা, আমরা গরিব মানুষ দিন আনি দিন খাই। আমরা চাঁদা কোত থাইকা দিমু।’
ভিলেনের প্রতি…
‘বাবা, তুমি আমাগো রক্ষা করলা। আল্লায় তোমারে বাঁচায় রাখুক। আমি মন থাইকা দোয়া করি।’
নায়কের প্রতি…
এভাবেই ভিলেনের প্রতি নিজের অসহায়ত্ব আর নায়কের প্রতি কৃতজ্ঞতা তুলে ধরতেন বহুল পরিচিত শোষিত শ্রেণির প্রতিনিধি অভিনেতা সৈয়দ আখতার আলী।
জন্ম ভারতের আসামের ধুবড়ীতে ১৯৪১ সালের ১৭ অক্টোবর। পড়াশোনা চারু ও কারুকলায় ডিপ্লোমা। অভিনয়ের প্রতি নেশা থেকেই চলচ্চিত্রে আসেন এবং বহু ছবিতে অভিনয় করেন। তার চিত্র প্রদর্শনীও হয়েছিল। সহকারী পরিচালকের কাজ করেছেন। ‘নাবালক’ নামে একটি অসমাপ্ত ছবি পরিচালনা করেছিলেন যে ছবিতে ভিলেন জাম্বুকে নায়ক করেছিলেন তিনি।
আখতার আলীর প্রথম ছবি ছিল সাদেক খানের বিখ্যাত ‘নদী ও নারী’।
উল্লেখযোগ্য ছবি: সূর্যদীঘল বাড়ি, সারেং বউ, কি যে করি, নাজমা, ফেরারী বসন্ত, সুরুজ মিঞা, দহন, এখনই সময়, নাগ পূর্ণিমা, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী, মাটির ঘর, সন্ত্রাস, মায়ের দোয়া, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, পাপী শত্রু, আখেরি মোকাবেলা, টাইগার, বেদের মেয়ে জোসনা, ভাইজান, লালু মাস্তান, বিদ্রোহী বধূ, বুকের ভিতর আগুন, মায়ের অধিকার, তোমাকে চাই, স্বপ্নের নায়ক, স্বপ্নের ঠিকানা, মহামিলন, এই ঘর এই সংসার, বিচার হবে, সুজন সখি, প্রেমযুদ্ধ, আঞ্জুমান, শুধু তুমি, কুলি, সাবধান, চার সতীনের ঘর, আক্কেল আলীর নির্বাচন, মেঘের পরে মেঘ ও চিত্রা নদীর পারে।
সৈয়দ আখতার আলীকে তেমন কোনো স্মরণীয় চরিত্রে দেখা যায়নি যদিও তিনি অসংখ্য ছবি করেছেন। বঞ্চিত, শোষিত মানুষের চরিত্রেই বেশি দেখা গেছে।
‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে নবাবের প্রজার একজন ছিলেন। ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ ছবিতে তাকে একটু অন্যরকম লেগেছে। ‘ভাইজান’-এ জসিম যখন বোন শাবানাকে তার সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে যায় তিনি সেটা খুব গর্ব করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন এবং তাঁর অভিনয় টাচি। ‘টাইগার’-এ লুক কিছুটা আলাদা ছিল তার। ‘চিত্রা নদীর পারে’ ছবিতে নাপিতের চরিত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন বলা যায়।
তিনি আফসোস করেছিলেন তাকে দিয়ে স্মরণীয় কোনো চরিত্র করানো হয়নি। পর্দায় সারাজীবন গরিবই থেকে গেছেন বলে আফসোসও করেছেন তিনি।
২০১৩ সালের ২২ জুলাই টঙ্গীর বোর্ডবাজারের নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে সৈয়দ আখতার আলীর মৃত্যু হয়। তিনি ন্যাচারাল একজন অভিনেতা ছিলেন। কোনো কালজয়ী চরিত্র না করেও মানুষের মন জয় করেছেন।
সৈয়দ আখতার আলী আমাদের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিতে বিটিভির শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছবি এবং সেই সময়ের সিনেমাহলের দর্শকদের কাছে সুপরিচিত একটি মুখ হয়ে থাকবে।