Select Page

অসম্পূর্ণ এবং অযথা ‘নূর’

অসম্পূর্ণ এবং অযথা ‘নূর’

:

‘নূর’ নিয়ে বিশদে বলার আগে একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাই। ২০২২ সালের জুলাইয়ে সিনেমাটি প্রথমবার সেন্সর বোর্ডে জমা পড়ে—কিন্তু সম্পূর্ণ অসম্পূর্ণ অবস্থায়। কোনো এডিটিং, কালার গ্রেডিং, ডাবিং, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়াই শুধুমাত্র মূল ক্যামেরা ফুটেজ দিয়েই ছাড়পত্র চাওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই তখন সেন্সর বোর্ড তা বাতিল করে। পরে পোস্ট–প্রোডাকশনের কাজ শেষ করে আবার জমা দিলে ১ ঘণ্টা ৩১ মিনিট দৈর্ঘ্যের ‘নূর’ সেন্সর ছাড়পত্র পায়। তখন সিনেমাটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছিল শাপলা মিডিয়া।

২০২৩ সালে, সেলিম খান জীবিত থাকা অবস্থাতেই, সিনেমার সকল রাইটস কিনে নেয় Quiet on Set (বর্তমান প্রযোজক)। নতুন প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই ‘নূর’কে হল-রিলিজ দিতে আগ্রহী ছিল না। পরিচালক রায়হান রাফী দৃশ্য রি-শুট করে হলে মুক্তি দিতে চাইলেও প্রযোজকের অনীহায় তিনিও শেষমেশ ওটিটিতেই মুক্তির সিদ্ধান্তে সম্মত হন। এরপর যা হওয়ার তাই—বায়োস্কোপ প্লাস প্রায় ডাবল দামে সিনেমার পুরো রাইটস কিনে নেয়। আর তার ফলেই গতকাল অবশেষে মুক্তি পেল আরিফিন শুভ ও ঐশী অভিনীত চার বছর আগের সেই সিনেমা—‘নূর’।

এবার মূল সিনেমায় ফিরি। ‘নূর’ এগিয়েছে মূলত এক পাগল প্রেমিক ও সন্দেহপ্রবণ মানুষকে ঘিরে। শুরুতেই দেখা যায় রায়হান রাফীর পরিচিত ন্যারেটিভ স্টাইল। দেখানো হয় নূর ও শিউলির দুষ্টু-মিষ্টি প্রেমের মুহূর্তগুলো, যা মনোযোগ আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সেই মনোযোগে বড় রকম ব্যাঘাত ঘটে। গল্প ক্রমেই হয়ে ওঠে প্রেডিক্টেবল; গল্প ডিপ টোনে গেলেও কোনো ইমোশনই যেনো কাজ করেনা। এর পেছনে বড় ভূমিকা আছে নিম্নমানের পোস্ট-প্রোডাকশনের। এডিটিং এতটাই দুর্বল যে এক দৃশ্য থেকে আরেক দৃশ্যে শিফটগুলো অত্যন্ত খাপছাড়া লাগে। পুউর এডিটিং যেন বারবার মনে করিয়ে দেয়—এটা একটি অসম্পূর্ণ কাজ। আর সিনেমার শেষে এসে মনে হয়েছে—দেড় ঘণ্টার এই সিনেমা থেকে শেষ আধা ঘণ্টা বাদ দিলে এটা প্রায় আরেকটি ‘উনিশ-২০’ হয়ে যেতো। যদিও ‘উনিশ-২০’ তুলনামূলকভাবে বেটার একটা সিনেমা।

অভিনয়ের দিক থেকেও ‘নূর’ তেমন মনে রাখার মতো হয়নি। আরিফিন শুভ মাঝের একটা দৃশ্য এবং ক্লাইমেক্সে গিয়ে কিছুটা বেটার পারফর্ম করেছেন। ঐশী চরিত্র অনুযায়ী স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছেন, যদিও স্ক্রিপ্টই তাকে খুব একটা সুযোগ দেয়নি। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের দুর্বলতা অনেক দৃশ্যে আরও বেশি ফাঁকা অনুভূতি তৈরি করেছে। আর সিনেমায় ব্যবহৃত চারটি গান শ্রুতিমধুর হলেও দেড় ঘণ্টার ছবিতে চারটি গান একটু বাড়তি লাগেছে। বাকি—সিনেমাটোগ্রাফি, কালার গ্রেডিং তেমন ভালো নয়। কিছু দৃশ্যে ক্লিয়ারলি পর্দায় দাগ দেখতে পাওয়া যাচ্ছিলো।

সবমিলিয়ে এই ছিল আমার দৃষ্টিতে ‘নূর’। ক্রেডিট লাইনে রায়হান রাফীর নাম না থাকলে হয়তো কেউ বিশ্বাসই করতে চাইবেনা যে এটা রাফীর সিনেমা। এই সিনেমার জন্য দীর্ঘ ৪ বছর অপেক্ষা করাটা এখন অযথাই মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে—এটা মুক্তি না পেলেও চলতো।


Leave a reply