Select Page

অস্কারজয়ী প্রথম বাংলাদেশী ‘নাফিস বিন জাফর’!

অস্কারজয়ী প্রথম বাংলাদেশী ‘নাফিস বিন জাফর’!

Nafees-Bin-Zafar-Oscar-winner

নাফিস বিন জাফর ।

অস্কারজয়ী প্রথম বাংলাদেশী !

এই ভদ্রলোকটা অসাধারন একজন ট্যালেন্ট । অনেকেই হয়তো ইতিমধ্যে উনার সম্পর্কে বিক্ষিপ্তভাবে অনেককিছু শুনেছেন কিংবা জানার চেষ্টা করছেন।… “প্রথম বাঙ্গালী এবং বাংলাদেশী, যিনি একবার অস্কার জিতেছেন, এবং এবছর দ্বিতীয়বারের মতো জিতলেন…” এই ধরনের কথাই সাম্প্রতিক সময়ে বেশী শোনা যাচ্ছে ।

কিন্তু ঘটনা আসলেই কি তাই ? আমাদের নাফিস ভাই অলরেডি একবার অস্কার জিতলেও, ‘কিসের জন্য’ মানে ঠিক ‘কোন কাজের জন্য’ জিতেছেন, আবার কোন কাজের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো এবছর আবারও জিতেছেন? এধরনের প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছেই !

তাই চেষ্টা করছি, লেখাটার মাধ্যমে ‘অস্কারজয়ী প্রথম বাংলাদেশী’ নাফিস বিন জাফর সম্পর্কে জানা-অজানা ব্যাপারগুলো তুলে ধরতে । যারা জানেন না তারা অন্তত লেখাটাতে মনযোগ দিলে খুশি হবো (আমাদের ‘দেশী রত্ন’ বলে কথা !) । আর যারা জানেন, তারা তো জানেনই !

সংক্ষেপে বায়োগ্রাফিঃ

১৯৭৮ সালের ৮ই অক্টোবরে জন্ম ৩৭ বছর (বর্তমান) বয়সী আমেরিকা প্রবাসী নাফিসের বাবা-মা দুজনই বাঙ্গালী এবং বাংলাদেশী । গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর নাফিসের মূলত ক্যারিয়ার শুরু হয় প্রোগ্রামার হিসেবে, আমেরিকার দক্ষিন ক্যারোলিনার ‘কলেজ অফ চারলেস্টন’ থেকে । পরবর্তীতে ‘NASA’র জন্য একটা প্রোগ্রাম বানানোর মধ্য দিয়ে প্রোগ্রামিং -এর প্রতি একটা বিশেষ ভালোবাসা অনুভূত হয় নাফিসের মধ্যে ।

এরপর ১৯৯৮ তে মাত্র বিশ বছর বয়সে গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর এই অসাধারন ট্যালেন্টেড ছেলে নাফিস যোগ দেন ‘ডিজিটাল ডোমেইন’ নামের একটা কোম্পানীতে । এই প্রতিষ্ঠানে থাকা অবস্থাতেই তিনি আবিষ্কার করেন ‘ফ্লুইড সিম্যুলেশন’ (Fluid Simulation) নামে একটা অ্যানিমেশন টুলের । ‘ফ্লুইড সিম্যুলেশন’ হলো এমন এক ধরনের কম্পিউটার গ্রাফিক্স টুল যার ব্যবহারে ‘পানি’, ‘আগুন’ কিংবা ‘ধোঁয়া’র মতো পদার্থের দ্বারা সৃষ্ট কোন অ্যানিমেশন কয়েকগুন জীবন্ত মনে হবে ! নাফিসের এই আবিষ্কারে তার সহযোগী ছিলেন আরেক দুইজন সফটওয়্যার ডেভেলপার ‘ডউগ রোবল’ এবং ‘রায়ো সাকাগুচি’ । নাফিস ও তাদের সহযোগীদের আবিষ্কৃত এই বিশেষ গ্রাফিক্স টুলটি ব্যবহৃত হয় ২০০৭ -এ মুক্তি পাওয়া তৎকালীন সময়ের অন্যতম আলোচিত চলচ্চিত্র ‘Pirates of the Caribbean : At Worlds End’ -এর স্পেশাল ইফেক্টে ! এর ফলাফল স্বরুপ পরের বছর পেয়ে যান অস্কারের ‘সায়েন্টিফিক এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাওয়ার্ড’ নামে বিশেষ এক পুরস্কার, যা তার গোটা ক্যারিয়ারকেই সম্পূর্ন বদলে দেয় ।

পেয়ে যান স্টিভেন স্পিলবার্গের প্রতিষ্ঠান ‘Dreamworks Animation’ -এ কাজ করার সুযোগ । সিনিয়র প্রোডাকশন ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন ‘Shrek Forever After’, ‘Megamind’, ‘Kung Fu Panda 2’, ‘Puss in Boots’, ‘Madagascar 3’, ‘The Croods’… এর মতো কিছু অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রে । এছাড়াও কাজ করেন… ‘Stealth’, ‘Flag of Our Fathers’, ‘The Seeker’, ‘2012’, Percy Jackson and the Olympians’… এর মতো কিছু চলচ্চিত্রেও ! পাশাপাশি ‘Tron’ এবং ‘Transformers 2’ চলচ্চিত্রের স্পেশাল ইফেক্টের জন্যও নির্মান করেন বেশ কিছু অ্যানিমেশন ।

এবং সম্প্রতি নাফিস এবং তার সহযোগী স্টিভেন মার্শাল -এর যৌথ আবিষ্কৃত আরো একটি স্পেশাল ইফেক্টের বিশেষ গ্রাফিক্স টুল – বুলেটের উপর বেইস করে দুটি বড় স্কেলে ‘ডেস্ট্রাকশন সিম্যুলেশন সিস্টেম’ -এ বিশাল অবদানের জন্য ‘অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস (অস্কার)’ কর্তৃপক্ষ ‘Technical Achievement Award’ হিসেবে এবছর তুলে দিলো বিশেষ এক অস্কার পুরস্কার, নাফিস বিন জাফর এবং তার সহযোগী স্টিভেন মার্শাল -এর হাতে ।

ব্যাপারটা আসলেই আমাদের জন্য রোমাঞ্চকর ব্যাপার ! আমাদের এই নাফিস সম্পর্কে প্রথম শুনেছিলাম ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র এক বিশেষ পর্বে… সেই ২০০৮ কিংবা ২০০৯ সালে ! কিন্তু ক্যানো জানি, নেট ঘেটে কিছুদিন আগেও নাফিস ও তার অস্কার প্রাপ্তি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যেত না । সাহস করে কাউকে কিছু বলতেও পারতাম না !

নাফিসের অস্কার প্রাপ্তির লিংকঃ

১. ২০০৮ সালে ‘Scientific and Engineering Award‘ হিসেবেঃ-

২. ২০১৫ সালের ঘোষিত ‘Technical Achievement Award‘ হিসেবেঃ-

আমাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই ভাবছেন যে, নাফিস কে আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রের কাজে কেন আনা হচ্ছে না ?!! আমরা কেন পারছি না !! কিন্তু তার চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে… নাফিস আমাদের দেশে কাজ করার ব্যাপারে নিজেই বা কতটুকু আগ্রহী ?!! আমাদেরকে অবশ্যই বাস্তবতা বুঝতে হবে। নাফিস কেনই বা তার এতো মূল্যবান সময় + বিশ্বসেরা স্টুডিও ছেড়ে আমাদের এখনকার বর্তমান চলচ্চিত্রের ‘হ-য-ব-র-ল’ পাড়ায় নিজেকে সম্পৃক্ত করবে ! যদিও আমরা এখন ধীরে ধীরে প্রশংসনীয় হারে ডেভেলপ করছি ! যদি নাফিসকে কিছু করতেই হয়, সেটা অবশ্যই তার নিজের স্বত্ত্ব ত্যাগ করে এবং সম্পূর্ন নিজ আগ্রহের তাড়নাতেই করতে হবে । তার মতো এধরনের ট্যালেন্টেড বাংলাদেশী একটা ছেলে যদি সারাজীবন দেশের বাইরেই কাটিয়ে দেয় তাহলে, তিনি ‘জন্মসূত্রে বাংলাদেশী’ হয়ে আমাদের লাভটা কি হলো !! যদি না আমরা তাকে কাজে না লাগাতে পারি…

তারপরও, শুভ কামনা থাকবে নাফিস ভাইয়ের প্রতি !
এবং আশা করবো, তাদের মতো এরকম এক্সট্রা-অরডিনারি ট্যালেন্টরা লাইমলাইটে আসুক… অন্তত আমাদের সকলের দৃষ্টিতে আসুক ! দেশের মানুষ হিসেবে তো আমাদের ভালো লাগবেই, নাকি ?


Leave a reply