অস্তিত্বঃ মানবিক অস্তিত্বের খোঁজে
‘অস্তিত্ব’ ও আমরা..
অস্তিত্ব ছাড়া বেঁচে থাকব কি করে! বেঁচে অাছি এটা অস্বাভাবিক, মরে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।যতক্ষণ বেঁচে আছি বাঁচতে হবে অস্তিত্ব বাঁচাতে।যার যার অস্তিত্ব বাঁচাতেই সবাই কর্ম করছে।ভালো হোক, মন্দ হোক কর্ম করছে নিজেকে ও নিজের অস্তিত্বের সাথে জড়িত অন্যান্যদের জন্য।এ অস্তিত্বর টিকিয়ে রাখা নিয়ে প্রত্যেকের জীবনে আলাদা গল্প আছে।কিন্তু যাদের গল্প সবার থেকে কোনো না কোনোভাবে অালাদা তারা এ সমাজে থেকেও ‘বিশেষ’ হয়ে পড়ে।তেমনই একটা শ্রেণি ‘বিশেষ শিশু’ বা ‘স্পেশাল চাইল্ড।’প্রতিবন্ধী বলে যাদের ক্লাস ডিভিশন করে দশজন সুস্থ, স্বাভাবিকের থেকে অালাদা করা হয়।তাদের গল্পগুলো আড়ালে থেকে যায় যার কমই আমরা জানতে পারি।তাদের গল্প এবং সে গল্পে আমাদের ঢুকে যাওয়ার সুযোগ থাকলে তাদের জন্য মানবিকতা, দায়িত্বশীলতা, চিন্তাভাবনা এক হয়ে যায়।আর তখনই অস্তিত্ব একাকার হয়ে যায় তাদের সাথে আমাদের।
‘অস্তিত্ব’ সিনেমা যখন..
‘অস্তিত্ব’ বাণিজ্যিক হয়েও মানবিক…
সিনেমার দুই ক্যাটাগরির মধ্যে বাণিজ্যিক ও অফট্র্যাকের একটা ফরম্যাটের মধ্যে এক্সপেরিমেন্টের জায়গা থাকে দুটোতেই।অনেক দর্শক ধারণা করেন বাণিজ্যিক সিনেমা নাচ-গান-রসালো গল্প- মারপিট সহযোগে একটা নির্ভেজাল হাওয়াই মিঠাই।কিন্তু এর বাইরেও কথা আছে।বাণিজ্যিকে কাজ দেখাবার সুযোগ অাছে।তাই ‘অস্তিত্ব‘ সিনেমা বাণিজ্যিক হয়েও বাণিজ্যিকের প্রথাগত মোড়ক থেকে বের হয়ে অালাদাভাবে সমাজের স্পেশাল চাইল্ডকে তাদের বাস্তবতায় এনে আর দশজন মানুষের দায়বদ্ধতাকে স্মরণ করিয়েছেন।হ্যাঁ, এ সিনেমায় নাচ-গান-মারপিট আছে কিন্তু সেসব বাণিজ্যিক দরকারি উপাদান হিশেবে আছে।বাদবাকি যা আছে সেটাই এর ফাইন্ডিংস।
সিনেমাটির সবকিছুই ১০০% ঠিক আছে সেটা একবাক্য বলাটা অনুচিত শোনাবে।টেকনিক্যালি কিছু সমস্যা সিনেমাটিকে প্রভাবিত করেছে।সেসব ধারাবাহিকভাবে বলার আগে এর জরুরি ম্যাটারগুলো বিশ্লেষণযোগ্য।তার ভেতরেই ইতি ও নেতিবাচক দিক এসে যাবে…
** অস্তিত্ববাদ ও ‘অস্তিত্ব’ সিনেমার লক্ষ্য**
বিশ শতকের সাহিত্য মতবাদের মধ্যে ‘অস্তিত্ববাদ’ অন্যতম।এ মতবাদের দার্শনিক মার্টিন হাইডেগার, ফ্রেডরিখ নীটশে, জ্য পল সাত্রে এরা সবাই একটি বিষয়ে একমত ‘ব্যক্তিসত্তাই বড়, সাধারণ সত্তা নয়।’মানুষের ব্যক্তিসত্তায় গড়ে ওঠা ‘ব্যক্তিমানুষ’-কে টিকে থাকতে হয় সমাজে।হাইডেগার এ ‘ব্যক্তিমানুষ’কে গুরুত্ব দেন।সাত্রে বলেন ‘স্বাধীনতার কথা যেখানে ব্যক্তিসত্তা যদি সচেতন থাকে তবে তাকে শোষণ করা সহজ না।’যাক সেসব কথা অস্তিত্ববাদী দর্শনে অন্তত এটুকু পরিষ্কার, ব্যক্তিসত্তাই সবকিছুর মূলে।একে বাঁচাতেই যতসব সংগ্রাম।সবাইকে যেহেতু বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হয় সেখানে অস্তিত্ববাদ-ই সবচেয়ে বড় দর্শন।
মতবাদ বা তত্ব দিয়ে সবকিছু টানতে গেলে কথা অনেক বাড়বে।সিনেমার ভাষায় বাণিজ্যিক ঘরানার মধ্যেই সিরিয়াস ইস্যুকে প্রেজেন্ট করাটা সাহসের ব্যাপারপরিচালক অনন্য মামুন সাহসটা দেখিয়েছেন মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে।সিনেমাহলে বসে ‘অটিস্টিক’ বা সমাজের ‘স্পেশাল চাইল্ড’ এর জন্য চোখ ভিজে গেলে বা দায়বদ্ধতা জাগলে সেটাই তার সিনেমার প্রাপ্তি হবে এ লক্ষ্য থেকেই সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন।
** অটিজম : ডেফিনিশন, অরিজিন, ক্লাসিফিকেশন, কারেক্টারিস্টিকস**
‘অটিজম’ নিউরোলজিক্যাল স্নায়ুবিক সমস্যা।এর ফলে ভুক্তভোগী জানতে, বুঝতে, শিখতে বাধাগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষের তুলনায়।ইংরেজি ‘অটিজম’-কে পারিভাষিকভাবে বাংলায় ‘আত্মসংবৃতি’ বলে।মনোবিজ্ঞানী অয়গেন ব্লয়লার ‘American journal of insanity’-তে তাঁর রচিত নিবন্ধে শব্দটি ব্যবহার করেন।শব্দটি গ্রিক ‘আউতোস’ থেকে আসা।এর অর্থ ‘নিজ।’
অটিজমের ক্লাসিফিকেশন আছে বেশকিছু।তবে মূল হিশেবে দুটি অাছে।
১. ক্লাসিক্যাল অটিজম – এটি অাদি সময় থেকে দেখা গেছে যার বৈশিষ্ট্য ছিল রোগী ভাষা সমস্যায় ভুগত, অন্যকে সহ্য না করা বা হাত-পা ছোঁড়া এসব ছিল।
২. এসপারজার সিনড্রোম – এর বৈশিষ্ট্য একদম অালাদা।রোগীর ভাষাবিকাশ পরিবেশের সাথে সময়মত ঘটে।বুদ্ধিমত্তা সাধারণের থেকে বেশি।
এর পাশাপাশি অাধুনিক গবেষণায় আরো কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা অাসে।যেমন – আক্রান্তের সংবেদনশীলতা অন্যদের চেয়ে অালাদা।শব্দ, অালো, স্পর্শ এসব তাদের কাছে আলাদা আনন্দের খোরাক।
** থিমেটিক মাস্টারপিস **
না নির্মাণে নয়, থিমে মাস্টারপিস ‘অস্তিত্ব‘ সিনেমা।যে মানবিকতার অভাব পৃ্থিবীতে আজকের দিনে সবচেয়ে জরুরি, যার অভাবে শিশুশ্রম হয়, বৃদ্ধাশ্রমে বাবাদের নিঃসঙ্গ শেষজীবন কাটে সে মানবিকতাকে স্পেশাল চাইল্ডের মাধ্যমে তুলে ধরে স্পর্শকাতর করে তুলতে পেরেছে এ সিনেমা।সাবজেক্টিভ ম্যাটারে তাই মাস্টারপিস বলাটা অযৌক্তিক নয়।
** অস্তিত্ব-র নিজস্বতা **
অটিজম থেকে সিনেমা বা মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিশুর গল্পে ‘তারে জামিন পার’ তার মতো বড় শিল্প।বড়দের গল্পে ‘মাই নেম ইজ খান’ও এর প্রতিনিধিত্ব করে।সম্পূর্ণ নয় তবে বৈশিষ্ট্যে মেলে।’অস্তিত্ব‘ তার মত বিষয় খুঁজে নিতে শিশুর জায়গায় তরুণীকে সিলেক্ট করে প্রেজন্টেশনে এসেছে।তরুণীর নিজের জগৎ ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্বে তার বিকাশ দেখানো হয়েছে।নিজস্বতার জায়গাটা এখানেই।
[su_box title=”অস্তিত্ব নিয়ে আরও পড়ুন” box_color=”#0f86de”]|| অস্তিত্ব নকল নয়, প্রতিবাদ করল দর্শকই ||‘অস্তিত্ব’ দর্শকরা যা বলছেন ||আবেগ লুকাতে পারেননি ‘অস্তিত্ব’র চিত্রনাট্যকার||[/su_box]
** ক্যারেক্টারাইজেশন **
সিনেমাটিতে অটিস্টিক শিশু আছে তবে পরিচালক তরুণীকে দেখিয়েছেন অটিস্টিক হিশেবে।যে তরুণী তার শিশু বয়স পেরিয়ে তরুণী পর্যন্ত গড়ালেও তার মানসিক বিকাশ হয়নি।ক্যারেক্টার প্লে করেছে তিশা।তার অভিনয় নিয়ে কথা বলতে গেলে যথেষ্ট প্রস্তুতির অবকাশ অাছে।কারণ এত ভেরিয়েশন আছে যে সবকিছু তুলে ধরে বিশ্লেষণ করতে গেলে বেগ পেতে হবে।তিশা তা অটিস্টিক ইমেজকে তার স্নায়ু বা ইন্দ্রিয়ের অপরিপক্বতা দিয়ে দেখিয়েছে।তার অটিস্টিক বৈশিষ্ট্যে সেই ক্ল্যাসিকাল ও এসপারজার দুই ধরনের স্পর্শই রয়েছে।তার আচরণের কিছু দিক বলা যেতে পারে..
* ভাষা সমস্যা আছে অন্যের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তবে সে যাকে সবচেয়ে কাছের ভাবে তার সাথে সমস্যা হয় না
* অস্বাভাবিক আচরণ আছে।তিশার ভাই ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে বসলে টিভিতে ডিম ছোঁড়ে তিশা।
* খেতে বসে ডাইনিংয়ে নিজের পায়ের নিচে টেবিলের খাবার ফেলে পা দিয়ে সেগুলো মাড়ায়, নষ্ট করে।
* দৌড়াতে দৌড়াতে অন্যের বাড়িতে গিয়ে ঢোকে।
* কান্নাকাটি করে যখন তাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না বলে মনে করে।
* বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে বাড়ির সবাই শহীদ মিনারে ফুল দিতে গেলে তিশা বাড়ির ছাদে একাই শহীদ মিনার বানায়।সবাইকে দেখায় আর শোনায় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো।’নিঝুম যখন শুভর সাথে নাচে তিশা রাগ করে, অভিমান করে।তখন তার রাগ ভাঙাতে হয় শুভকে।রাগ বা অভিমানের পেছনে বুদ্ধির অ্যাপ্লাই থাকে কারণ সে নিঝুমকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবেছে।
* প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তারই মতো অন্যান্য বন্ধুদের পেয়ে সে খেলা করে।
* অলিম্পিকের প্রশিক্ষণে দৌড় প্রতিযোগিতার সময় দৌড়াতে গিয়ে মাঝপথে থামে।
* দৌড়াতে গিয়ে দৌড় থামিয়ে এক লোকের কলার কাঁদি দেখে কলা খেতে থাকে।
এ ধরনের আচরণে তার সমস্যা, সম্ভাবনা দুটোই তুলে ধরা হয়েছে।তিশা দুটোই দেখিয়েছে সমান তালে।চোখ, শব্দ, অালো, স্পর্শ এসবের সাহায্যে ইন্দ্রিয়ের ব্যবহারে তিশা পারফেক্টের থেকেও যেন বেশি কিছু।এসবের ব্যবহার বলা যায় এভাবে –
চোখ – চোখের ব্যবহার সরাসরিভাবেই নানাপ্রকার এক্সপ্ররশনকে মিন করে।সেদিক থেকে অনেকেরই ভুল ধারণা অাছে।তারা ভাবে একইরকম এক্মপ্রেশন দিয়ে থাকে অটিস্টিকরা।সত্যিিই কি তাই! তাদের মধ্যেও আনন্দ, হাসি, অভিমান, সংকোচ ইত্যাদি অনুভূতি আছে তাহলে সেগুলোর প্রকাশ কি অাদৌ একরকম হবে?..কখনোই না।তিশা হেসেছে যখন তার চোখ কথা বলেছে।কাঁদলে ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদেছে।অভিমান বা সংকোচে তার অভিব্যক্তি ভিন্ন।প্রশিক্ষণ স্কুলে গাড়ি থেকে না নামতে চাইলে অারেফিন শুভ যখন তাকে ইনিয়ে বিনিয়ে নামাতে চায় সে নামে না।ঠোঁট ফুলিয়ে কান্নার মতো অভিমান থাকে তার চোখে।
শব্দ – তিশা পরিচিত মানুষদের পরিচিত শব্দগুলো খেয়াল করে।সেভাবে চেনার চেষ্টা করে।যার জন্য ‘ইমতু’ নামটা একটা পরিচিত ও অান্তরিক মানুষের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা পড়ে।সে নামটা বারবার নিজের মতো করে আওড়াতে থাকে।ডনের হাত থেকে বাঁচানোর পর ডাক দিতেই সে ছুটে আসে।তারপর স্কুলগেটে ঢোকার সময় শুভর পিছে পিছে দুষ্টুমির ছলে তার আচরণ খেয়াল করে পরিচিত শব্দগুলোকে অনুসরণ করে।
অালো – আলোর বিষয়টি মূলত বদ্ধ পরিবেশ থেকে বাইরের পৃথিবীতে আসার একটা আগ্রহ বা প্রয়োজনীয়তাকে বোঝায়।তিশা সে অালোর দেখা পায়।প্রথমে স্কুল থেকে পালানোর জন্য গেট পর্যন্ত দৌড়ালেও পরে বাকি অটিস্টিক শিশুদের সাথে খাপ খাওয়ানোর পর তিশা নিজেই থাকতে চায়।আলোর দেখা সে পেয়ে যায় জনসংযোগে।
স্পর্শ – এটাকে বলা যায় তিশার বিকাশের প্রধান সূত্র।তিশা ভালোবাসা, অাবেগ, সহানুভূতি, সামাজিকতা, প্রতিভা দেখানো এসবের সাথে অ্যাটাচমেন্ট হয় কিছু মানুষের মাধ্যমে।পরিবার তো সেখানে প্রথম ভিত্তি।মা সুচরিতার অগাধ স্নেহ, বাবা সুব্রতর ভালোবাসা, ভাই জোভানের দেখাশোনা করা এগুলো প্রাথমিক দিক।প্রতিষ্ঠান বাকি কাজটা করেছে।স্কুলের প্রশিক্ষক শুভ, সহকারী নিঝুম রুবিনা, অটিস্টিক শিশুরা এভাবে সবার স্পর্শে তিশা একটা স্বাভাবিক আনন্দের জীবন লাভ করে।
প্রশিক্ষক অারেফিন শুভ তার নিজের ডেডিকেশনে সেরা অভিনয় করেছে।তার মধ্যে সেই ডেডিকেশন ছিল যেখানে গুরুদায়িত্ব বলে একটা জরুরি বিষয় আছে।সে তার নিজের সীমাবদ্ধতায় তার জীবন বিপন্ন করে হলেও স্কুলকে রক্ষা করতে চায়।তাি অসুস্থতার জন্যও দমে যায় না।বোন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে বললেও হয় না।তিশাকে নিজ হাতে গড়ে তুলেছে সে, সাথে বাকিদেরও।কাটা চামচ দিয়ে কিভাবে খেতে হয়, কিভাবে রান করতে হয়, কিভাবে তার মত যারা তাদের সাথে যোগাযোগ রাখা যায় এসব শিখিয়েছে শুভ।
শুভর অ্যাক্টিভিটির কিছু স্পেশালিটি আছে –
* তিশা যখন স্কুল থেকে পালাতে চায় তিশার গতি পরীক্ষা করে স্টপওয়াচে।এতে তিশার মৌলিক প্রতিভাকে খোঁজার চেষ্টা আছে।
* তিশাকে রাগ থেকে স্বাভাবিক করতে নিজেই স্কুল অফিসে গ্লাস, প্লেট এসব এগিয়ে দেয় ভাঙার জন্য।
* তিশাকে social environment এ আনার জন্য অন্য অটিস্টিক শিশুদের সাথে মিশতে দেয় এবং তার আচরণগুলো নিজে করে কখনো কখনো যাতে তিশা হ্যাপি থাকে।
* একইসাথে হেল্পফুল, ডেডিকেটেড শিক্ষক আর স্কুল বাঁচাতে শত্রুর সাথে বুক চিতিয়ে লড়াই করা সোজা ছিল না।শুভ এ জায়গায় নিজেকে পরিস্থিতিমতে পাল্টে ফেলা দারুণ শিল্পী।সেদিক থেকে শুভ ‘heroism’ কে নয় ‘character’ কে ফুটিয়ে তুলেছে।
একজন প্রশিক্ষক হিশেবে শুভর এ কাজগুলো স্বাভাবিক এবং সে তা ভালোভাবেই করেছে।
অন্যান্য ক্যারেক্টারে মা-বাবা সুব্রত-সুচরিতা তাদের মতো চমৎকার।নতুন হিশেবে জোভান স্বতঃস্ফূর্ত।সৌমির ভয়েস এবং স্লো ডায়লগ ডেলিভারি সমস্যা করলেও অভিনয়ে জড়তা ছিল না।নিঝুম ভালো অভিনয় করেছে তার ক্যারেক্টারে।অটিস্টিক অন্য শিশুরা অনবদ্য।
** অস্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠান**
স্পেশাল চাইল্ডের জন্য প্রতিষ্ঠান জরুরি।ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সম্পূর্ণ আলদা।মমতাময়ী মা কিংবা পরিবার নিজেই প্রতিষ্ঠান সন্তানের কাছে কিন্তু স্পেশাল চাইল্ডের জন্য অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের দরকারি দিকটা ভাবতে হবে।কারণ সেখানে সে তারই মতো অনেককে পাবে এবং তাদের সাথে খাপ খেলে নিজের অস্তিত্বকে নতুন করে বুঝবে।একসময় সে স্বাভাবিক হতেও পারে।
** গান নিয়ে মিশ্র কথা **
গান রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে মিশ্র কথা এসেছে।ঠিকঠাক রাখা হয়নি বা সব গান দরকার ছিল না, বিষয়ের সাথে খাপ খায়নি বলা হচ্ছে।এ ধরনের সিনেমায় যে স্বাভাবিক আর যে ভিকটিম দুদিকেই রোমান্সের জায়গা থাকে।শুভ যখন তিশার অাঁকা ছবি দেখছে তখন ভালো ছবি অাঁকার প্রতিভা দেখে তাকে তার ভালো লেগেছে।সেখানে একটা গান দিলে সমস্যা থাকার কথা না।’অামি বাংলার হিরো’ গানটা ডনের নেশার ঘোরে টিভি দেখার সাথে শুভর হাতে মার খাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে এসেছে।ডন যেদিকে তাকায় শুভ-তিশাকে দেখে।টিভি চালুর পর হিন্দি গান আসলে ডন বলে ‘ঐ ব্যাটা কি গান দিলি? বাংলা গান ছাড় ব্যাটা’।তখন এ গানটা রিপ্লেস করা ঠিকই আছে।বাকি গানগুলোতেও এভাবে সিচুয়েশন বেইসড রিপ্লেস আছে।
** ক্যামেরাওয়ালা **
ইদানিং সিনেমা দেখছি ক্যামেরার কাজের লোভে।এ সিনেমার স্ক্রিনপ্লে অসাধারণ।ভোরে স্কুলের জগিং দৃশ্য, দৌড় বা সমুদ্রসৈকতের অ্যাক্টিভিটি জীবন্ত।চোখ আটকে রাখার জন্য যেমনটা কাজ দরকার সেসব আছে।
** নির্মাণ যেখানে যন্ত্রণার **
এত ভালো বিষয়ের সিনেমায় নির্মাণে টেকনিক্যাল কিছু সীমাবদ্ধতা দেখলে মনটা খারাপ হয়।যেমন –
* প্রশিক্ষণ স্কুলে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের কোনো যন্ত্রপাতি নেই।যেমন – ব্রেইল পদ্ধতি।
* অলিম্পিকে গ্রাম্য মাইকের সাদামাটা উপস্থাপনা।
* প্রতিবন্ধীদের মধ্যে দুএকজন ছাড়া বাকিদের প্রতিভা খোঁজা হল না।
* সমুদ্রসৈকতে দৌড় করানোর মাধ্যমে অাউটিং শেষ অথচ আউটডোরের কাজ আরো বড় পরিসরকে মিন করে।
* আউটডোরে শুভর সাথে আর কোনো স্পেশাল প্রশিক্ষক পাওয়া গেল না অথচ স্পেশাল অলিম্পিক বলা হয়েছে।
* স্কুলের ব্যবস্থাপনায় দক্ষ কোনো কতৃর্পক্ষ নেই।যেমন – কমিটি, পরিদর্শক।
**ফিনিশিং **
ফিনিশিং মেডিকেলবিদ্যার বিরোধী বলে কথা উঠেছে।কিন্তু, কথার পিঠেও কথা থাকে।গতবছর আমার বন্ধু সামান্য পা কেটে সাইড অ্যাফেক্টে ইনফেকশন থেকে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা গেল।সাইড অ্যাফেক্ট মারাত্মক হলেই যে কোনো কিছু হতে পারে।শুভর ব্রেইন টিউমারের পরিণতিও ফিনিশিং এ যা ঘটেছে সেটার জন্য যৌক্তিক হতেই পারে।
‘অস্তিত্ব‘ বাংলাদেশী বাণিজ্যিক সিনেমার মধ্যে মানবিক অাবেদনে নতুন কাজ।কোন ইন্ডাস্ট্রির কোন সিনেমার নকল সেসব গবেষণা যারা জোর করে বা ঈর্ষাবশত করেছে তাদের জবাব ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে।’অস্তিত্ব’ নকল নয়, আমাদের মধ্যেই যারা স্পেশাল চাইল্ড এবং সমাজে নানাভাবে অবহেলিত তাদের বাস্তবতা এবং পুনর্বাসনের প্রচেষ্টাকে দেখানো সিনেমা।প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাতে না পারলেো অন্তত অপমান করার অধিকার নেই।
‘অস্তিত্ব‘-র মতো আরো সিনেমা দরকার।বিষয়
আলাদা হোক।সমাজ যাতে ফুটে ওঠে।
ঢালিউডের বাণিজ্যিক সিনেমায় এমন বৈচিত্র্য ও এক্সপেরিমেন্ট চলুক আরো…