Select Page

আচ্ছন্ন করে রাখে ‘মায়া’

আচ্ছন্ন করে রাখে ‘মায়া’

ঠিক এক বছর আগে শুনেছিলাম, সময়ের আলোচিত নির্মাতা রায়হান রাফী ‘মায়া’ নামের একটি ওয়েবফিল্ম নির্মাণ করছেন, বিঞ্জের জন্য। শিল্পী তালিকায়: ইমন-সারিকা। সে সময় প্রশ্ন জেগেছিল মনে: পৃথিবীতে এত নাম থাকতে, নির্মাতারা ‘মায়া’ নামটিই কেন এতবার ব্যবহার করেন?

এই নামে উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোর কনটেন্টের কথা বাদ-ই দিলাম, বাংলাদেশেই প্রচুর নাটক, গান, একাধিক সিনেমা নির্মিত হয়েছে। কিছুদিন আগে বুবলী অভিনীত ‘মায়া দ্য লাভ’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। একই ঈদে অনিমেষ আইচ নির্মাণ করেছেন ওয়েবফিল্ম ‘মায়া’। এর কিছুদিন আগে শাকিব খান প্রযোজক হিসেবে সরকারী অনুদান পেয়েছিলেন ‘মায়া: ১৩২০ বঙ্গাব্দ’ সিনেমার জন্য। তারও আগে মাসুদ পথিক নির্মাণ করেছিলেন ‘মায়া দ্য স্ট মাদার’।

অবশ্য গতকাল রায়হান রাফীর ‘মায়া’ বড় পর্দায় দেখার পর বহুল ব্যবহৃত এই নামটির প্রতি সব অনুরাগ বিদায় করেছি। কথায় আছে: শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। ‘মায়া’র শেষটুকু এত বেশি মায়ায় আচ্ছন্ন করে রেখেছে দর্শকদের, হল থেকে বের হবার পর মনে হয়েছে: সত্যিই তো, এই সিনেমার নাম তো ‘মায়া’-ই হওয়া উচিত। ভীষণ মায়া হয়েছে চরিত্রগুলোর জন্য। এই ‘মায়া’ স্বপ্নাতুর এক সংগ্রামী নারীর জন্য, এই ‘মায়া’ পরিস্থিতির শিকার এক স্বামীর জন্য, এই মায়া নিরপরাধ এক শিশুর জন্য।

যারা অভিযোগ করেন, রায়হান রাফী নারী বিদ্বেষী সিনেমাই বেশি করেন, তাদের জন্য রাফীর উত্তর ‘মায়া’। এই গল্প আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটে। জীবনঘেঁষা সেই গল্পগুলোকে মালা গেঁথেই নির্মিত হয়েছে বিঞ্জের ওয়েবফিল্ম ‘মায়া’। গল্প ভাবনায় বাহবা পেলেও সিনেমার চিত্রনাট্য আরো চমক, আরো গতি দাবী করে। হৃদয়গ্রাহী সংলাপও পাইনি তেমন। যদিও এই সব খামতি পুষিয়ে দিয়েছে শিল্পীদের অভিনয়।

রাশেদা চৌধুরীকে মায়ের চরিত্রে অনেকদিন পর দেখেছি। তিনি ভীষণরকম বিশ্বাসযোগ্য, সাবলীল। নেতিবাচক চরিত্রে নাদের চৌধুরী যতটুকু সময় স্ক্রিনে ছিলেন, হলের দর্শক আনন্দ পেয়েছেন। তবে এই সিনেমার দুটি প্রাণ দুটি চরিত্র: মায়া ও রাহাত। ‘রাহাত’ চরিত্রে ইমনের প্রাণান্ত চেষ্টা যে কারো চোখে পড়বে। চুলের কাট/ মেকআপ/ গেটআপ/ ভয়েস মড্যুলেশন/ চরিত্র অনুযায়ী উচ্চারণ-সবকিছু মিলে ইমন তার ‘চিত্রনায়ক’ লেবাসকে ভুলিয়ে দিতে চেয়েছেন। এর আগে ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমায় ভিন্ন রকমের চরিত্রে দেখেছিলাম নায়ক ইমনকে। এবার পেলাম ‘মায়া’য়। আশা করি, তাকে নিয়ে নির্মাতারা আরো অনেক বেশি নিরীক্ষা করবেন।

তবে নির্মাতা রায়হান রাফীকে আমি বিশেষ ধন্যবাদ দেব, ‘মায়া’র নাম ভূমিকায় সারিকা সাবরিনকে কাস্ট করার জন্য। অনেকদিন পর পর্দায় সারিকাকে দেখেছি বলেই কিনা জানিনা, সারিকার অভিনয় চোখে ভীষণ আরাম দিয়েছে। সারিকা প্রায় প্রতিটি দৃশ্যেই নিজের সেরাটুকু দেয়ার চেষ্টা করেছেন এবং সফল হয়েছেন। বিশেষ করে সংলাপবিহীন দৃশ্যগুলোতে তার দীঘির মত জলে ভরা চোখ মুগ্ধ করেছে। সামনে সারিকা আরো অনেক বহুমাত্রিক চরিত্রে নিজেকে যাচাই করে দেখার সুযোগ পাবেন, এমন আশা তো করতেই পারি।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

নাট্যকার, চিত্রনাট্যকার, চলচ্চিত্র সমালোচক ও উপস্থাপক। মাছরাঙা টেলিভিশনে ক্রিয়েটিভ হেড হিসেবে কর্মরত।

মন্তব্য করুন