আঞ্চলিক ভাষার নাটকগুলো
বাংলাদেশে আঞ্চলিক ভিত্তিক অসংখ্য ভাষা রয়েছে। এই সব ভাষা নিয়ে নির্মিত হয়েছে অজস্র নাটক। এক সময় দর্শকদের মাঝে বেশ চাহিদা গড়ে উঠলেও পরে কিছু কিছু নাটক বিরক্তিও এনে দেয়। কিন্তু এই কথা সত্য আঞ্চলিক ভাষার নাটকের গ্রহণযোগ্যতা সব সময়ই সন্তোষজনক। তেমনি উল্লেখযোগ্য কিছু আঞ্চলিক ভাষার নাটক নিয়ে ‘আমাদের টিভি নাটক’-এর আজকের আয়োজন—
এই সিরিজের আরও লেখা: আমাদের টিভি নাটক
১. জোনাকীর গল্প: ঢাকাইয়া ভাষায় নির্মিত নাটক। পরে আরমান ভাই সিরিজের জনপ্রিয়তা বাড়ায় এই ভাষায় নাটকের আধিক্য বেড়েছে। তবে ‘জোনাকীর গল্প’ ২০০২ সালের অন্যতম হিট নাটক, এই নাটকের ‘সাজাহানের সাজানো বাগান হুগাইয়া গেছে গা’ সংলাপটি বেশ জনপ্রিয় হইছিল। নাম ভূমিকায় তারিনের প্রাণবন্ত অভিনয়ের পাশাপাশি জাহিদ হাসান, আজিজুল হাকিম, নাসিমা খান ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে।
২. গাঁও গেরামের কিসসা: ড.ইনামুল হকের হাত ধরে সেই আশির দশক থেকেই বিটিভিতে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষার নাটক প্রচার হত। পরে নরেশ ভুঁইয়া প্যাকেজ আকারে বানানো শুরু করেন,এর মধ্যে এই নাটকটি ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়। গ্রাম্য কুটিল রাজনীতি নিয়ে নাটকটি ভীষণ উপভোগ্য পাশাপাশি এটিএম শামসুজ্জামান, তারিন, টনি ডায়েস, ইনামুল হক, লাকী ইনাম, নরেশ ভূঁইয়া, মহিউদ্দিন বাহারসহ সবাই বৃহত্তর নোয়াখালীর স্থানীয় হওয়ায় উচ্চারণ ছিল একেবারে সাবলীল, যার জন্য দেখতে আরো ভালো লাগে।
৩. বৈরাতি: হালের ভাইরাল ‘আইলোরে নয়া দামান’ গানের ব্যবহার প্রথম এই নাটকেই হয়েছিল। শাকুর মজিদের পরিচালনায় সিলেট অঞ্চলের সংস্কৃতি ও কুসংস্কার উঠে আসে। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় অল্প কিছু নাটক নির্মিত হয়েছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম। সিলেট অভিনয়শিল্পীর গোষ্ঠীসহ মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন মাহফুজ আহমেদ, শ্রাবন্তী ও শানারেই দেবী শানু। শ্রাবন্তীর অন্যতম সেরা অভিনয় এখানে করেছিলেন।
৪. প্রজাবতী: নওগাঁ অঞ্চলের ভাষা নিয়ে এই টেলিফিল্ম। নিম্নশ্রেণীর মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে নির্মিত এই গল্পে অভিনয় করেন জয়া আহসান ও ফজলুর রহমান বাবু। দুজনই দারুণ অভিনয় করেন। পরিচালনায় ছিলেন গোলাম মুস্তফা শিমুল।
৫. গরু চোর: বৃন্দাবন দাসের নাটক মানেই পাবনার আঞ্চলিক ভাষার নাটক। একটা সময় সালাউদ্দিন লাভলুর সঙ্গে উনার জুটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই দুজনের জুটির শুরুর দিকে এই নাটকটির জনপ্রিয়তা তাদের ক্যারিয়ার গঠনে বেশ প্রভাব ফেলে। এক মানবিক গরু চোর ও তার পরিবার নিয়ে এই নাটকে অভিনয় করেছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান, শিরিন আলম, চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, শামীম জামান, আ খ ম হাসান, স্বাগতা, সঞ্জীব আহমেদ, চ্যালেঞ্জারসহ অনেকে। প্রচার হয় ২০০৭ সালে।
৬. গোলাপী পাঞ্জাবি: সৈয়দ শামসুল হকের বেড়ে উঠা রংপুরে, উনার শৈশবের এক ঈদকে কেন্দ্র করে দুই কিশোরের ঈদের পোশাক পাঞ্জাবি নিয়ে এই নাটক। রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মাণ করেন শাহনেওয়াজ কাকলী। মামুন, প্রাণ রায়, রাইসুল ইসলাম আসাদ, মোমেনা চৌধুরীরা ছিলেন অভিনয়ে। ২০০৯ সালে প্রচারিত হয় বিটিভিতে।
৭. মেড ইন চিটাগং: চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় নাটকের সংখ্যা অনেক। বিশেষ করে ইমরাউল রাফাতের এই সিরিজের পর এই ভাষায় নাটক নির্মাণের হার বেড়ে যায়। ২০১২ সালে প্রথম এই নামে নাটক নির্মিত হয়, এতে অভিনয় করেন পার্থ বড়ুয়া ও অপর্ণা ঘোষ। সিরিজের সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এই দুজনের রসায়ন। স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে তারা ভীষণ জনপ্রিয়তা লাভ করেন, আর দুজনই চট্টগ্রামের ভাষা খুবই সাবলীলভাবে বলেছিলেন।
৮.যমজ: বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় নাটকের হার গত এক দশকে প্রকটভাবে বেড়েছে, তার অন্যতম প্রধান কারণ মোশাররফ করিম। উনি বেশ কয়েকটি নাটক করেন, তার মধ্যে অন্যতম যমজ সিরিজ। একই চেহারা বৃদ্ধ পিতা ও দুই পুত্রকে নিয়ে এই সিরিজ এখনো চৌদ্দতম পর্বে এসে পৌঁছেছে। শুরুর দিকে দর্শকদের ভীষণ ভালো লাগলেও ধীরে ধীরে মান কমতে থাকে। যদিও এখন পর্যন্ত চাহিদা অনেক।