
আধুনিকতার জন্য আরিফিন শুভকে দরকার
আরিফিন শুভ যখন ইন্ডাস্ট্রিতে আসে তখন ডিজিটাল চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয়েছে। ৩৫ মিলিমিটার থেকে ডিজিটালে আসা পর্যন্ত চলচ্চিত্রে আধুনিকতার যে বাঁক সেটা শুভকে দিয়েই সম্পন্ন হয়। কঠিন হলেও সত্য তখনকার সময় শাকিব খানকেও আমরা আধুনিক হিসেবে পাইনি। মান্নার মৃত্যুর পর ইন্ডাস্ট্রিতে শাকিবের প্রতি চাপ বেশি বেড়ে যায় কারণ ততদিনে রিয়াজ, আমিন খান-রা চলচ্চিত্রে অনিয়মিত। ডিজিটাল ধারার চলচ্চিত্রে প্রথম যে গুণটা একজন নায়কের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেটা হচ্ছে আধুনিকতা। একটা সময় থেকে বেরিয়ে আরেকটা সময়ে প্রবেশ করার যে বিষয়টি সেখানে আধুনিকতা বা পরিবর্তন ছাড়া আপনি গ্রহণযোগ্যতা পাবেন না। একজন আরিফিন শুভ সেই আধুনিকতার মাধ্যমেই সময়টাকে প্রতিনিধিত্ব করেছিল। যার জন্য ডিজিটাল চলচ্চিত্রের প্রথম আধুনিক নায়ক হয়ে উঠেছিল শুভ।

আরিফিন শুভর ডিজিটালে প্রথম আধুনিক নায়ক হবার বিষয়টি আরো খোলাসা করা যাক। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শিক্ষার্থী তাদের মধ্যে সেই সময়টাতে সবচেয়ে চর্চিত ছিল শুভ। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ম্যাচিউর ছেলেমেয়ে যারা স্টাইলিশ, ফ্যাশনেবল বিষয়গুলো মেইনটেইন করে তাদের রুচির সাথে শুভ ম্যাচ করেছিল তাই শুভ তাদের আলোচনার টেবিলে উঠে এসেছিল। শুভকে পরিচর্যা করতে হবে এমনও বলত। হললাইফে দেশের চলচ্চিত্রের গান দেখার ক্ষেত্রে শুভর গান অনেক বাজাতে দেখেছি এবং প্রশংসা করতে দেখেছি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা যদি বলি সেটা স্বচক্ষে দেখা এছাড়া অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকেও এমনটাই হবার কথা কারণ তখন শুভ ছাড়া আধুনিকভাবে আর কাউকে পাওয়া যায়নি।
আজকের শাকিব খানের যে এত পরিবর্তন ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি সেটা ডিজিটালের প্রথমদিকে ছিল না। তখনও তার এক ঈদে একাধিক ছবি মুক্তি পেত এবং একটা বাদে বাকিগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠত। একজন আরিফিন শুভ ঐ সময়টিতে শাকিবের থেকেও এগিয়ে ছিল এবং সেটাও আধুনিকতায়। এরপর আসল বডি ট্রান্সফরমেশনের বিষয়টি। আমরা দেখেছি বলিউডে বডি বানানোর বিষয়টি নব্বই দশক তো দূরের কথা ধর্মেন্দ্রর সময় থেকেও ছিল, নব্বইতে সুনীল শেঠিকে দেখে আমরা বডি বিল্ডার হিরোর যে ইমেজ সেটা বুঝতে পারি তারপর তার চেয়েও আধুনিকভাবে এটিকে প্রেজেন্ট করেছে সালমান খান এবং তারপর ঋত্বিক, শাহরুখ, অজয় দেবগনরা। আমাদের এখানে প্রথম বডিবিল্ডার হিরো বলা হত ওয়াসিমকে। সেটা তাঁর যুগের জন্য ঠিক ছিল কিন্তু আধুনিকতার কথা ভাবলে একুশ শতকের চাহিদামতে আরিফিন শুভই প্রথমবার এটি করে দেখিয়েছে। ‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবির সময় শুভ এ চ্যালেঞ্জটি নিয়েছিল এবং সাকসেসফুল হয়েছে। অনেকে বলতে পারে বডি বানিয়ে চলচ্চিত্রে তার ব্যবহার ককটুকু করতে পেরেছে। এটার উত্তরও সহজ আমাদের দেশে এমন ফিটনেসের নায়ককে যথার্থভাবে ব্যবহার করার মতো নির্মাতাই বা কয়জন আছে! হাতেগোনা দু’একজন ছাড়া। কিন্তু এটা করার পর শুভ যতগুলো ছবি করেছে তাকে দেখতে বলিষ্ঠ, সুন্দর লেগেছে, স্টাইলিশ লেগেছে। লুকের দিক থেকে আধুনিক বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে ফুটে উঠেছে সাফল্য তো সেখানেই।

তারপর আসবে অভিনয়ের বিষয়টি। অভিনয়ে শুভকে আমরা কিছু ছবিতে দুর্বলভাবে পেয়েছি যেটি অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। কিন্তু ‘নিয়তি, ছুঁয়ে দিলে মন, ঢাকা অ্যাটাক, মিশন এক্সট্রিম, ব্ল্যাক ওয়ার, মুসাফির’ ছবিগুলোতে শুভর ডেডিকেশনও আমরা দেখেছি ভালো অভিনয়ের পাশাপাশি। ‘মুজিব’-এ তার ওভারঅল পারফরম্যান্স নিয়ে মতভেদ আছে সেটি ভিন্ন কথা। এছাড়া টলিউডের ‘আহারে’ ছবিতে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে শুভ। শুভ বর্তমানে অভিনয়ে নির্ভর করার মতো অবস্থায় পৌঁছেছে।
এরপর আসবে কমার্শিয়াল ছবিতে অত্যন্ত জরুরি টপিক গান। গানের আধুনিকতার কথা বললে আরিফিন শুভ দারুণভাবে এগিয়ে। গানে নাচটা তো ভীষণভাবে প্রভাব ফেলে শুভ এখানেও এগিয়ে। তার ড্যান্স স্কিল ডিজিটাল সময়ের ইন্ডাস্ট্রিতে ওয়ান অফ দ্য বেস্ট। নাচের জন্য ‘ঢাকাই শাড়ি (নিয়তি), রং (মুসাফির), তুই আমার ফেসবুকেও নাই (, শূন্য থেকে আসে প্রেম (ছুঁয়ে দিলে মন), ও আকাশ বলে দে না রে (ছায়াছবি)-সহ আরো কিছু গানে দারুণ ড্যান্স স্কিল দেখিয়েছে শুভ। মোস্তফা কামাল রাজের ‘ছায়াছবি’ ছবির গানগুলো সেই সময়ের জন্য অনেক আধুনিক ছিল এবং গানগুলো ওয়ার্ড অফ মাউথ ছিল। ওয়ার্ড অফ মাউথ ছাড়া তো গ্রহণযোগ্যতা আসে না। ছবিটি সে সময়ে মুক্তি পেলে ব্যবসায়িকভাবেও সাফল্য পেত। এ ছবির পাশাপাশি আরো কিছু ছবিতে শুভর গানের কোয়ালিটি সময়ের চাহিদামতে শতভাগ ঠিকঠাক। বাছাই করা কিছু গান দেখা যাক যেগুলোতে শুভ অসাধারণভাবে আধুনিক ছিল— দ্বিতীয় ভালোবাসা – ছায়াছবি, পথ জানা নেই, ছায়াছবি টাইটেল ট্র্যাক, মন যা বলে বলুক – ছায়াছবি, আয়না বল না, আমি বাংলার হিরো – অস্তিত্ব, শুধু একবার বলো, আলতো ছোঁয়াতে – কিস্তিমাত, ঢাকাই শাড়ি – নিয়তি, টুপটাপ – ঢাকা অ্যাটাক, ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও, তুমি ছুঁয়ে দিলে এই মন, ছুঁয়ে দিলাম – ছুঁয়ে দিলে মন ও আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো জানো না – পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী।
আরিফিন শুভ-র পরে সিয়াম, শরিফুল রাজ-রা ডিজিটাল ছবিতে এসে ভালো কাজ ইতোমধ্যে দেখিয়েছে কিন্তু শুভই ডিজিটাল ফরমেটে প্রথম আধুনিক নায়ক হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তাই সেই আধুনিকতার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যও একজন আরিফিন শুভকে ইন্ডাস্ট্রিতে দরকার। এছাড়া শাকিব খানের হিউজ স্টারডমের পর তার পরে যাদেরকে দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে নেয়া সম্ভব তাদের মধ্যে শুভ অন্যতম প্রধান। এজন্যও তাকে আমাদের দরকার। আসুন উপলব্ধি করি।