আনন্দবাজারে খবর দিয়েছিল কে?
২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, হুমায়ূন আহমেদ বায়োপিক বানিয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ইন্দ্রনীল রায়ের ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল— ‘হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রে ইরফান? কিন্তু এতো লুকোছাপা কেন?’ এ খবরের সূত্র ধরেই বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় ওঠে প্রথম। তৈরি হয় তুমুল বিতর্ক। প্রতিবাদ করেন মেহের আফরোজ শাওন।
সম্প্রতি ‘ডুব‘ তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রিভিউ কমিটিতে জমা পড়ে। একই সময়ে মেহের আফরোজ শাওন একটি আপত্তিপত্র দেন কমিটিতে। এর প্রেক্ষিতে ছবিটি মুক্তির বিষয়ে আপাতত স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় কমিটির পক্ষ থেকে। ওই সময় ফারুকী গণমাধ্যমকে বললেন, “মেহের আফরোজ শাওন ‘ডুব’ নিয়ে আপত্তি জানানোর কে?”
ঠিক সে সময় ঢাকার বাংলা ট্রিবিউন যোগাযোগ করে আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে। শনিবার দুপুরে প্রতিবেদক ইন্দ্রনীল রায় বলেন, ‘ফারুকীর ছবিটির গল্প হুমায়ূন আহমেদের জীবন থেকেই নেওয়া, এ বিষয়ে দ্বিধার কোনও অবকাশ নেই। কারণ, আনন্দবাজারে যে প্রতিবেদনটি আমি করেছি, সেটার খবর পরিচালক ফারুকী নিজেই আমাকে জানিয়েছেন। তিনি না জানালে বাংলাদেশের খবর আমি পাবো কোথা থেকে?’
তিনি আরো বলেন, ‘যদি ছবিটির গল্প হুমায়ূন আহমেদের জীবন থেকে নেওয়া না হতো, তাহলে এই খবর এতোটা গুরুত্ব পেতো না আমাদের কাছে। আমি তো পাগল নই, কোনও নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়া এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট কেন করবো? পরিচালকের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়েই রিপোর্টটি করেছি।’
পাল্টা প্রশ্ন ছিল তাহলে ফারুকীর উদ্ধৃতি দিয়ে কেন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেননি? জবাবে ইন্দ্রনীল বলেন, ‘ফারুকী তখন এই বিষয়ে তার নাম সরাসরি প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি আমাকে এটাও বলেন, সরাসরি তার মন্তব্য প্রকাশ করলে ছবিটা নিয়ে ঝামেলা হতে পারে।’
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ফারুকী। “ডুবে ইরফান খান’, ‘হুমায়ূন আহমেদের জীবনী নিয়ে ছবি’ এবং ‘সাসপেনশন’—এই ছবির সব সংবাদই কেন বাইরের দেশের মিডিয়ায় আগে যাচ্ছে? এর নেপথ্য কারণটা কী বলবেন?”— কালের কণ্ঠের এমন প্রশ্নের উত্তরে ফারুকী বলেন, “আনন্দবাজার’কে আমি নিউজ দিইনি। ‘ভ্যারাইটি’ বা ‘হলিউড রিপোর্টার’ আমার ছবির ব্যাপারে আগ্রহী। ইরফান খানও একটা বিষয়। আর দেশের মিডিয়া এই অভিযোগ করতেই পারে না, কারণ কোনো সংবাদ দিলে তারা খুবই হেলাফেলা করে সেটা ছাপে। মাত্র দুই লাইনেই নিউজ করে অনেকে। আমি যেখানে প্রায়োরিটি পাব সেখানেই তো নিউজ দেব, নাকি?”
এছাড়া গুজব উঠেছে সিনেমার প্রচারণার জন্যই এত কাণ্ড। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ রকম নির্দয় মন্তব্য আর হয় না। আমাকে ছুরিকাঘাত করে বলা হলো, আমি নিজেই নিজেকে ছুরিকাঘাত করেছি—নিষ্ঠুর একটা মন্তব্য। একজন ফিল্মমেকারের ছবি যখন আটকে যায়, তখন তার হৃদয়ে কতটা রক্তক্ষরণ হয় সেটা অন্যরা বুঝবে না। যারা এ ধরনের কথা বলে তারা হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর। মেহের আফরোজ শাওন বা সরকার কি আমার কথামতো চলবে?”
এছাড়া দীর্ঘ স্ট্যাটাসে রোববার ফেসবুকে ফারুকী লেখেন- “আসেন আরেকটু স্কুপ দেই। লেখার ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের মধ্যে আনন্দবাজারের আগেও একটা বিখ্যাত ইংরেজী পত্রিকার একজন সাংবাদিক আগস্ট বা সেপ্টেম্বরের দিকে এই গুজব বিষয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেন। তখন উনার সাথে প্রায় ঘন্টাখানেক আকুতি মিনতি ঝগড়া করে তাঁকে এই রিপোর্ট করা থেকে বিরত রাখি। কিন্তু আনন্দবাজারে কেনো গুজব গেলো, এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, ছবির তো একটা প্রযোজক আছে কোলকাতায়, নাকি? সব কিছু কি আমার কথা মতো চলবে? তার পরেও অফিসিয়ালি আমার বক্তব্য কি সেটা আনন্দবাজারকেও বলা হয়েছে যে, এটা বায়োপিক না। এবং সেটাই ছাপা হইছে।
কিন্তু এখন তো ছবিই তৈরি। আনন্দ অথবা বেদনার বাজারে বায়োপিক বলা হইছে কি হয় নাই সেটা কষ্ট করে খোঁজার দরকার কি? ছবিতেই তো উত্তর আছে। ছবিটা জাভেদ হাসান, সাবেরী, মায়া, এবং নিতুর ।
ডিসক্লেমারে পরিষ্কার বলা হয়েছে, এটা একটা ফিকশনাল স্টোরি। এর সাথে জীবিত অথবা মৃত কারো কোনো সম্পর্ক নাই।
আর এতে কাউকে ছোটো করা হইছে না বড় করা হইছে সেটা তো ছবি দেখলেই বোঝা যাবে। দর্শকরা যার যার বিচার বুদ্ধি খাটিয়েই বুঝতে পারবে। জীবনের জটিল অংক, অসহায়ত্ব এই সবে অবগাহন করার মতো ম্যাচুরিটি এবং সেন্সিবিলিটি আমাদের দর্শকদের আছে। লেট দেম ওয়াচ এন্ড ফিল।
আমাদের তো ছবি দেখাইতে কোনো ভয় নাই। হুমায়ূন ভক্তদেরও নিশ্চয়ই ছবি দেখতে ভয় নাই।
তবে ভয়টা কার? কেনো?
সিনেমা সকল আইন কানুন মেনে দর্শকের জন্য বানানো হইছে তারা দেখবেই । এবং এই বৈশাখেই দেখবে।
পাদটীকা: আমার ছবির বাইরে একটা অপ্রাসঙিক আলোচনা করি। আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলো দেখলে মনে হয় হুমায়ূন আহমেদের জীবন শুরু হইছে পঞ্চাশ বছর বয়স থেকে । তার কোনো অতীত নাই। আগের কোনো স্মৃতি নাই। ভাইরে, পঞ্চাশের পরে যেমন তার একটা জীবন আছে, পঞ্চাশের আগেও একটা আছে। এই স্মৃতিমোচন প্রকল্পের অংশীদার হওয়াটা ঠিক না মনে হয়।”
আরেকটা কথা, হুমায়ূন কারো স্বামী হইতে পারেন, বাবা হইতে পারেন, কিন্তু হুমায়ূন নামে যে বিশাল আকাশ আমাদের ঘিরে রাখছে, এইটার মালিক কেউ না। জগতে সকল কিছুর মালকিন হওয়ার চেষ্টা করা বোকামি।