Select Page

আফসানা মিমি যেন একটা কবিতা

আফসানা মিমি যেন একটা কবিতা

‘বাতাসে ছোঁয়ায় তার ভালোবাসা এসে লাগে
দৃষ্টি আড়ালে গেলেও তার সৌরভ জড়িয়ে থাকে’…♥♪

আফসানা মিমি নামটি নিলেই শৈশব-কৈশোরের দিনগুলোতে ‘মেরিল ট্যালকম পাউডার’-এর বিজ্ঞাপনের এই জিঙ্গেলটাই সবার আগে স্মৃতিতে আসে। কী সুন্দর স্নিগ্ধতায় ভরা মিমি! ক্যাটওয়াকের মধ্যেও যে আর্ট থাকতে পারে মিমির হাঁটার স্টাইলে বোঝা যায় এ বিজ্ঞাপনে।

মিমির নাটকের জন্য স্পেশালভাবে অপেক্ষা করতাম। তার নাটকের কথা তো শুধু কথা ছিল না। তার কথা যেন কবিতা! আহা কী সুন্দর করে সংলাপ বলত যেন কবিতা শুনছি। সেই কবিতাময় সংলাপগুলো শোনার নেশায় মিমির নাটকের অপেক্ষা করতাম। ‘নক্ষত্রের রাত, সবুজ সাথী, বন্ধন, বেদনার রং নীল, বিবর্ণ ভালোবাসা, শেষ চিঠির পরে, ঝিনুক নীরবে সহো’-র মতো স্মৃতিময় সব নাটকে মিমি নস্টালজিক করে দেয় আজও। টনি ডায়েসের সাথে মিমিকে বেশি ভালো লাগত কারণ টনি ছিল অভিনেতার পাশাপাশি আবৃত্তিশিল্পী তাই দুজনকে একসাথে পেলে দ্বৈতভাবে কবিতার মতো সংলাপে নাটক দেখতে পেতাম।

‘চিত্রা নদীর পাড়ে’ ছবিতে আফসানা মিমি ও রওশন জামিল

‘চিত্রা নদীর পারে’ ছবিতে মিমির স্নিগ্ধ সৌন্দর্য আর মন ভরিয়ে দেয়া অভিনয় ভুলতে কি পারি! এত কোমলভাবে কথা বলত যেন কথাই শুনি সারাদিন। তৌকীর আহমেদের বিপরীতে মিমির রোমান্টিক সংলাপগুলো শুনতে এত ভালো লাগত মনে হত প্রেমিকা থাকলে মিমির মতোই থাকা দরকার যেন তার কথার প্রেমেই বারবার পড়া যায়। তৌকীর আন্দোলনে শহীদ হলে মিমির জীবনের যে বাস্তবতা শুরু হয় সেই কোমল কথা বলা মেয়েটির মন খারাপের বিষণ্ন অভিনয় অশ্রুসিক্তও করে দেয়। এ ছবির মিমিকে ভোলা যাবে না।
‘নদীর নাম মধুমতী’-তেও সেই কথার সৌন্দর্য দেখতে পাই।
নাঈম-শাবনাজের ‘দিল’ ছবিতে মিমির ‘ওগো মা তুমি শুধু মা, পৃথিবীতে নেই তুলনা’ গানটির কথাও কে ভুলতে পারে! মিষ্টি হাসির মিমি।
আর শাবনাজের ডাবিং-এ মিমির কণ্ঠ অনেক ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছে শুধু ঐ একটা কারণেই মিমির কথা শুনতে মিষ্টি লাগত তাই।

অনেকদিন পর একদম সমারোহ দেখিয়ে আফসানা মিমি ‘উৎসব’ ছবিতে হাজির। এখানেও যথারীতি মিমির কথার সৌন্দর্য রয়েছে। ছবিতে এত এত অভিনয়শিল্পীর ভিড়ে মিমির চরিত্রটি আলাদাভাবে আকর্ষণ করার কারণও এটাই। মার্জিত, কোমল স্বরে কথা বলার সেই পুরনো সৌন্দর্যটা আজও রয়েছে মিমির। জাহিদ হাসানের সাথে তার সিকোয়েন্সগুলোতে ছবির গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা থেকে যায় যেখানে দর্শক নতুন করে জানবে দুজনকে। মিমির চরিত্রটি যেমন ভালো লাগা দেয় আর মনও খারাপ করে দেয়।

সাফিয়া চরিত্রে আফসানা মিমি

একজন আফসানা মিমিকে আমরা আরও দেখতে চাই চলচ্চিত্রে। তার কথার সৌন্দর্যকে আরও শৈল্পিকভাবে দেখতে চাই। নব্বই দশকীয় প্রজন্মের কাছে যে আবেগ-অনুভূতির জায়গায় একজন আফসানা মিমি আছে সেই জায়গা থেকে হলেও তাকে নিয়ে আমরা আজও নতুন করে গর্ব করতে চাই নতুন সব চলচ্চিত্রে। এ প্রজন্মের অভিনয়শিল্পীরাও শেখার যে সুযোগটা পাবে মিমির কাছে তার জন্য হলেও চাই।

আফসানা মিমি নামটি অতীত ও বর্তমান মিলিয়ে একটা কবিতার মতো সুন্দর থেকে যাক।


About The Author

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

Leave a reply