Select Page

অন্তর্জাল: বিষয় নতুন আদলটা পুরোনো

অন্তর্জাল: বিষয় নতুন আদলটা পুরোনো

সকাল থেকে গ্রিন ব্যাংকের কাউন্টার ও এটিএম বুথের সামনে দীর্ঘ লাইন। কারণ, ব্যাংকের সার্ভারে গন্ডগোল দেখা দিয়েছে। লেনদেন বন্ধ। সবার ব্যালান্স শূন্য। এ নিয়ে জনরোষ চরমে। তদন্তে নামে সিআইডি। দৃশ্যে হাজির হয় সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট নিশাত (মিম)। সে খুঁজে বের করে, হ্যাকাররা ব্যাংকের সার্ভার ওভারল্যাপ করে ফলস ইন্টারফেস বসিয়ে দিয়েছে। ব্যাকআপ সার্ভারও আক্রান্ত। নিশাতের অনুমান, ‘এটা স্রেফ জ্বর, অসুখটা আরও বড়।’

সেই ‘বড় অসুখ’ আসলে কত বড়, সেটা গল্পের জার্নির সঙ্গে ক্রমে প্রকাশ্যে আসতে থাকে। একসময় হ্যাকাররা বন্ধ করে দেয় দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন। দাবি করে, পিএলএস ৭১ নামক গ্রুপের সদস্যদের তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সারা দেশ তন্ন তন্ন করে তিনজনকে পাওয়া যায়—লুমিন (সিয়াম), প্রিয়ম (সুনেরাহ) ও সাদাফ (ইনান)। এরপর গল্প গড়ায় থাইল্যান্ডে। সেখানে আরও কিছু নাটকীয়তা শেষে জানা যায়, হ্যাকারদের মূল টার্গেট ব্যাংক কিংবা মোবাইল অপারেটর কোম্পানি নয়, পিএলএস ৭১-ও নয়; টার্গেট অন্য কিছু। সেটা উদ্ধার করা এবং রক্ষা করার মিশন পরের অংশজুড়ে।

মোটাদাগে এটাই দীপংকর দীপন পরিচালিত ‘অন্তর্জাল’ সিনেমার গল্প। বর্তমান বিশ্বে যেভাবে ইন্টারনেট প্রভাব ফেলেছে জনজীবনে, নিয়ন্ত্রণ করছে অর্থনীতি থেকে বিনোদন, রাজনীতি থেকে সমাজকাঠামো, বদলে দিচ্ছে সংস্কৃতি, অভ্যাস; তাতে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, অন্তর্জালই এ সময়ের সবচেয়ে বড় শক্তি। তবে সবকিছুর তো উল্টো দিক থাকে, ভালোর বিপরীতে থাকে মন্দের অবস্থান। ইন্টারনেট দুনিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। এই ভালো ও মন্দের সংঘর্ষই অন্তর্জাল সিনেমার অবলম্বন।

বাংলা সিনেমার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্জালের বিষয় নিঃসন্দেহে নতুন। তবে এই নতুন বিষয়কে উপস্থাপনের ভঙ্গিটা, খোলসটা পুরোনো। অন্য সিনেমায় নায়ক ও ভিলেনের লড়াই হয় অস্ত্র দিয়ে। এ সিনেমায় অস্ত্রের বদলে আছে প্রোগ্রামিং। পার্থক্য এটুকুই। তবে অস্ত্রবাজিও আছে এতে। মারামারি আছে। আর আছে দেশপ্রেমের আবেগ। যদিও গল্পের সঙ্গে আবেগটা ঠিক খাপ খায় না। আলাদা কোনো অনুভূতি কিংবা স্তর তৈরি করে না। অথচ এই আবেগের ওপর ভর করে অনেক মুহূর্ত তৈরির চেষ্টা করেছেন নির্মাতা। বেশির ভাগ সময় তা মূল গল্প থেকে খসে পড়েছে।

সিনেমার পরতে পরতে আছে অতিনাট্যের ঝোঁক। ইনানের সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্ক, লুমিনের প্রতি প্রথমে প্রিয়মের বিরুদ্ধ অবস্থান এবং পরে প্রেম; বিদেশে এএসপি রায়হানের (সুমন) মিশন, মধ্য আকাশে চার্টার্ড প্লেন ছিনতাই—বিশ্বাসযোগ্যতার খামতি সব খানেই। সবচেয়ে বড় খামতি ব্যাংক, মোবাইল ও বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হওয়ার মতো এত বড় ঘটনা ঘটিয়েও জনজীবনে তার ব্যাপক প্রভাব দেখাতে না পারা। দুর্বল কিছু প্লট তৈরি করে এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে অনর্গল উচ্চ শব্দের মিউজিক দিয়ে দায়সারাভাবে বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন নির্মাতা।

দুর্বল চিত্রনাট্যের খাদে পড়ে পথ হারিয়েছেন অভিনয়শিল্পীরাও। মিম তো পুরো সিনেমায় অধীনস্থকে ঝাড়ি দেওয়া, বসের ঝাড়ি শোনা আর মাঝেমধ্যে অতি খুশির এক্সপ্রেশন দেওয়া ছাড়া করার মতো কিছুই খুঁজে পেলেন না। প্রধান চরিত্রে উতরে গেছেন সিয়াম। রোবোটিকস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সুনেরাহ কিংবা গেম ডেভেলপার হিসেবে ইনান আলাদা ছাপ ফেলতে পারেননি। এত নেতিবাচকের ভিড়ে অন্তর্জালের ইতিবাচক দিক—সিনেমার বিষয়টা নতুন।

*রিভিউটি আজকের পত্রিকায় পূর্ব প্রকাশিত


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সমাজকল্যাণ বিষয় নিয়ে। তবে বর্তমানে যুক্ত সাংবাদিকতার সঙ্গে। কাজ করেছেন জনকণ্ঠ, কালেরকণ্ঠ; বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরে, বর্তমানে আজকের পত্রিকায়। চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ আছে, আলাদা করে, সব সময়। লেখেন গল্প-কবিতা। টিভি নাটকের চিত্রনাট্যও।

মন্তব্য করুন