
আফসোস রেখে দারুণ বাস্তবতার গল্প ‘দাগি’
স্টার সিনেপ্লেক্সে আগে কখনো ৬০০ টাকা দিয়ে বাংলা সিনেমা দেখিনি। একই হলরুমে একই সিটে দিনের দুইটা শো যেখানে ৫০০, বাকি দুইটা শোর দাম হয়ে যায় ৬০০ টাকা। জানি না, ঈদ মৌসুমে এভাবে ব্যবসা করার কী ব্যখ্যা দেবে স্টার সিনেপ্লেক্স।
হাউজফুল এক শোতে ‘দাগি’ দেখলাম। মানুষ শিহাব শাহীনের সিনেমা খুব জমিয়ে দেখলো, মন খারাপ করলো, হাসলো। খেয়াল করলাম, ২ ঘণ্টা ২২ মিনিটের সিনেমার মধ্যে ১২-১৫ মিনিট অতিরিক্ত থাকার একটা আফসোস আমার মতো অনেকেই করছে। বিজিএমও খুব আনকোরা, হরহামেশা ব্যবহারের মতো লাগলো। কেন যেন ঈদে অনেক তাড়াহুড়ো করেই কাজ শেষ করা হলো ‘দাগি’র। তবে এসভিএফ, চরকি, আলফা আইকে ধন্যবাদ শাকিব খানের বাইরে গিয়ে নিশোকে নিয়ে এগোচ্ছে তারা, ভবিষ্যতে সিয়াম-শুভদের নিয়েও ইনভেস্ট করবে আশা রাখি।

সিনেমা শুরু তো, গল্পে ঢোকা শুরু। শিহাব শাহীন এখানে এক মিনিটও সময় নেননি। কেউ হলে দেরিতে ঢোকা মানে ‘দাগি’র গুরুত্বপূর্ণ শুরুটা মিস করে যাওয়া। জেলজীবন না দেখিয়েই নিশানকে দেখা যায় বিজয় দিবসের দিনে ভালো আচরণের জন্য আটমাস আগেই জেল থেকে বের হচ্ছে। ১৪ বছর খুনের মামলায় সাজা খেটে নিশানের মন আর ভঙ্গিতে এসেছে পরিবর্তন। শুধু জেল খেটে নিজেকে নির্দোষ না ভাবা নিশান চায় তাকে পরিবার, সমাজের সবাই মাফ করে দিক। কিন্তু জেলের দাগ একবার লেগে যাওয়া ‘দাগি’কে কি সবাই সহজে মাফ করতে পারে?
‘দাগি’র সবচেয়ে বড় পজিটিভ দিক গল্পের বাস্তবতা ও স্ক্রিনপ্লে। পুরো সিনেমায় একবারও গল্পের রেখা থেকে ছিটকে যাবে না দর্শক। বিশেষ করে বিরতির আগে শিহাব শাহীন একজন জেলফেরত মানুষের সাথে সমাজ ও পরিবার কীভাবে আচরণ করে, তা দুর্দান্তভাবে দেখালেন। একইসাথে এর নেগেটিভ দিক – সেকেন্ড হাফ। যে ফ্লোতে গল্প এগোচ্ছিলো, বিরতির পর সেটা অনেকটাই খেই হারিয়ে ফেলে।
আফরান নিশো ‘সুড়ঙ্গ’র পর আবার সময় নিলেন, দারুণ গল্প নিয়ে ফিরেও আসলেন। ‘নিশান’ চরিত্রে নিশো খুব ভালো রোল প্লে করেছেন। যেমন লুক, কস্টিউম তেমনি এক্সপ্রেশন আর ডায়লগ, নিশোর পারফরম্যান্স দর্শক মন্ত্রমুগদ্ধ হয়ে দেখেছে। ভালো করেছেন তমা নির্জাও। ‘সুড়ঙ্গ’র এই জুটি ভালো ওয়ার্ক করেছে। তবে নিশান আর তমার ‘জেরিন’ ক্যারেক্টার দুইটার প্রেমের সম্পর্ক দেখানো উচিৎ ছিলো আরেকটু আগে থেকেই, সম্ভব হলে ওদের অন্তরঙ্গতা শৈল্পিকভাবে দেখানো যেতো।
শহীদুজ্জামান সেলিম মাড়োয়ারী হিসেবে হিন্দিতে ভালোই বললেন, অ্যান্টি রোলে ছিলেন চমৎকার। তবে তার চরিত্রটা খুব একটা কনভিন্সিং না। রাশেদ মামুন অপুও সমানতালে অ্যান্টি রোলে বদগিরি দেখালেন, ফাদারহুড অ্যাঙ্গেলে ভালো করেছেন নিজের এলাকার ভাষায় বলতে পেরে। আফসোস লেগেছে সুনেরাহর জন্য। এত ভালো একটা কেমিস্ট্রি বিল্ড আপ কিংবা টেনে নিয়ে যাবার জায়গা থাকলেও সে আসলো আর বিদায় নিলো। মনিরা মিঠু, গাজী রাকায়েত, মনোজ প্রামাণিক সবাই এনাফ গুড।
সিনেমার গানগুলো দৃশ্যে ভালো সিঙ্ক করেছে। ‘আমায় দিও’ হলে শুনতে ভালো লেগেছে। তবে বিজিএমে আলাদা কোন ওয়ার্ক কানে আসেনি, কেমন যেন দায়সারা। খুব একটা অ্যাকশন নেই, নিশো তাতে খুব সাবলীল না।
নেগেটিভ দিক এর স্ক্রিনপ্লের শেষাংশ। আরো টাইট হতে পারতো। গল্পে যেহেতু খুব জোর দেয়া হয়েছে, অ্যাকশন পার্ট আরো শর্ট করা যেত। বর্ডারে গোলাগুলির যে দৃশ্য দেখানো হয়েছে, তা খুব খেলো মনে হলো অথচ ব্যাপারটা এত সিম্পল না। প্রতিটা বাড়িই বলতে গেলে পুরনো ধাঁচের দেখানো হলো, সৈয়দপুর রাজশাহীতে নতুন বাড়ির এত অভাব জানতাম না। ভালো লাগেনি নিশো আর সুনেরাহর না জমা অংশটা। দুইটা ডায়লগের জন্য পুলিশের ব্যবহার না করলেও হতো।
‘দাগি’ গল্পটা খারাপ লাগবে না। শিহাব শাহীন কিছু জায়গায় এখনো সিনেমাটিক হয়ে উঠতে পারেননি তবে এটাকে কোনভাবেই ওয়েবফিল্মের কাতারে ফেলা যাবে না। ঈদের তুমুল প্রতিযোগিতায় ভায়োলেন্স, অতিরিক্ত নাচানাচি কিংবা মাসালা ফাইট সরিয়ে ভালো গল্পের সিনেমা দেখতে চাইলে ‘দাগি’ ভালো লাগবে।