Select Page

আবুল হায়াত/ কলকাতার সিরিয়াল দেখে বাংলাদেশে কাজের মেয়েরা আসকারা পেয়ে যাচ্ছে

আবুল হায়াত/ কলকাতার সিরিয়াল দেখে বাংলাদেশে কাজের মেয়েরা আসকারা পেয়ে যাচ্ছে

সম্প্রতি কলকাতায় ‘নায়করাজ রাজ্জাক অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা আবুল হায়াত। ৮ জুন সন্ধ্যায় মধ্য কলকাতার স্প্রিং ক্লাবে এক জমকালো অনুষ্ঠানে তার হাতে এই পুরস্কার দেয়া হয়। ‘বেঙ্গল ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন চেম্বার অফ কমার্স’ এর উদ্যোগে, ষষ্ঠ বিএফটিসিসি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে পুরস্কারস্বরূপ হায়াতের হাতে তুলে দেওয়া হয় উত্তরীয়, মেমেন্টো, ফুলের তোড়া, সনদ ও নগদ অর্থ।

সম্মাননা পেয়ে আবুল হায়াত বলেন, ‘এটি চমৎকার একটি ব্যাপার। রাজ্জাক ভাই একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিল। তার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। হায়াত সাহেব বলে আমাকে কাছে ডেকে নিত, আড্ডা হতো। যখন কলেজে পড়তাম তখন রাজ্জাক সাহেবের বই দেখতাম কিন্তু আমি কোনদিনও যে চলচ্চিত্রে আসবো তা ভাবিনি। এই বাংলার মানুষ আমাকে চেনে, আমি যে কাজটা করি সেটা জানে। এটা অত্যন্ত আবেগ আপ্লুত ব্যাপার।’

এদিকে অনুস্থানস্থলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পশ্চিমবঙ্গে টিভি সিরিয়ালের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এ অভিনেতা।

তার স্পষ্ট বক্তব্য, ‘এখানকার টিভি সিরিয়াল দেখে ওখানকার কাজের মেয়েরা খুব বেশি আসকারা পেয়ে যাচ্ছে। এটা তো আমরা দেখছি। এটা তো সত্যিকারের ঘটনা। এটাতো অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।’ 

তিনি অবশ্য জানালেন, আমি ঘরে বসে টিভি সিরিয়াল দেখি বটে, তবে না দেখার মতোই।

সিরিয়াল কেমন লাগে! সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘না দেখাটাই ভালো। বিশেষ করে এই সিরিয়ালের মেকিং একেবারেই ভালো না। লাইন করে দাঁড় করিয়ে ক্যামেরা ধরলেন, ভালো ভালো সাজ পোশাক পরিয়ে দিলেন…. এতো ভালো ভালো অভিনেতাকে মিস ইউজ করার কোন অর্থ হয় না।’

তার সমসাময়িক অভিনয়, শালীনতা, কাহিনী বর্তমানে দেখা যায় না- এটা নিয়ে আবুল হায়াত বলেন, পৃথিবী অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলছে। মানুষের পরিবর্তনটা খুব দ্রুত হচ্ছে। মানুষ খুব সহজে নাম করতে চায়, খুব সহজে অর্থ উপার্জন করতে চায়। তার জন্য যত রকমের পন্থা অবলম্বন করতে হয় মানুষ সেগুলোর দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়েছে। আমার মনে হয় আগেকার স্ক্রিপ্ট এবং এখনকার স্ক্রিপ্ট এর মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। আমরা অনেক কথাই আগে বলতে পারতাম না, ক্যামেরার সামনে করতাম না। কিন্তু এখন সেগুলো করা হচ্ছে, বলা হচ্ছে। তাদের লাইক অ্যান্ড ভিউজয়ের পিছনে মানুষ দৌড়াচ্ছে। এই দৌড়ানো যতদিন বন্ধ না হবে ততদিন নাটক বা সিনেমার মান ভালো হবে না।’

চিত্রনাট্যে জীবনমুখী কাহিনীর অভাব আছে কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে আবুল হায়াত বলেন, ‘অভাব নেই, তবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে। যারা অর্থবান, তারা জীবনমুখী কাহিনীর পিছনে ব্যয় করতে খুব একটা উৎসাহী হচ্ছে না।’

দুই বাংলার চলচ্চিত্র শিল্প যে জায়গায় পৌঁছানোর কথা ছিল সেই জায়গায় কি এখনো পৌঁছানো গেছে? তা নিয়ে হায়াত বলেন, আমি বহুদিন ধরেই চলচ্চিত্রের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি, একটা সময় মঞ্চে কাজ করতাম। তারপর চলচ্চিত্র ব্যস্ত ছিলাম, পরে টেলিভিশন মিডিয়া আমার জায়গা হয়ে উঠে।

দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনায় যে ছবি নির্মিত হচ্ছে- তা খুবই ভালো উদ্যোগ বলে মনে করেন হায়াত। ‘আমরা মুখে বলি দুই বাংলা, কিন্তু মনে মনে প্রাণে কি আমরা দুই বাংলা? এক বাংলা থেকে যখন কেউ অপর বাংলায় যায় তখন কেউই মনে করে না যে আমরা বিদেশে এসেছি।’

ঢাকাই সিনেমার উন্নতি হচ্ছে না কি অধঃপতন? এই প্রশ্নের উত্তরে আবুল হায়াত বলেন, ‘আমি ঠিক বলতে পারবো না। তবে আমি যতটুকু দেখি বা পড়ি তাতে বোঝা যায় যে উন্নতি হচ্ছে। টেকনিক্যালি অনেক উন্নত হচ্ছে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে সিনেমা অনেকটা এগিয়েছে। তবু চেষ্টা করছি মুম্বাইয়ের কায়দায় কিছু ছবি তৈরি করার।’

তার অভিমত ‘আমি কন্টেন্টে বিশ্বাস করি না। আমি নাটক লিখি। আমার নাটকে যখন অভিনেতারা অভিনয় করে তখন তারাই বলে যে আপনার নাটকের মধ্যে দিয়ে মনে হয় আমরা বাড়ির সাথে কথা বলছি। আমি এখনো সেটাতেই বিশ্বাস করি। তাছাড়া আমি গত ৩০ বছর ধরে নাটক লিখছি, রচনা করছি এবং পরিচালনা করছি।’

এসময়ই পশ্চিমবঙ্গের নাটকের হাল-হকিকত নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, এখানকার নাটকের পরিস্থিতি কেমন, সেটা আমার জানা নেই। পশ্চিমবঙ্গের মঞ্চ নাটক দেখেই আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, স্বাধীনতার পর নাটক শুরু করেছি। একাত্তরের পরবর্তী সময়ে আমাদের যেসব বন্ধু-বান্ধব কলকাতায় ছিল তারা এখানে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তম কুমার শম্ভু মিত্র তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বাধীনতার পরপরই আমরা শুরু করলাম। এরপর নাটক তৈরি হয় এবং আমাদের সুপারহিট নাটক বাদল সরকারের ‘বাকি ইতিহাস’ তৈরি হয় এবং সেই নাটকের হিরো আমি।

তবে এই সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে মেয়ে অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতের সাথে কোন আলোচনা হয় না বলে জানালেন আবুল হায়াত। কারণ মেয়ে বিপাশা অনেকটা উচ্চমার্গের। তাছাড়া তিনি বর্তমানে ইউএসএ থাকেন। খবর বাংলাদেশ প্রতিদিন


মন্তব্য করুন