Select Page

আমার একান্ত জসিম

আমার একান্ত জসিম

আমার একান্ত জসিম সেই জসিম যার অনেক বড় ভক্ত আমি। ইউটিউবে যাদের ছবি এখনো নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে জসিম একজন। জসিমের অভিনয়, পার্সোনালিটি, প্রভাব সবকিছু মিলিয়েই তাঁর ভক্ত আমি।

আমার একান্ত জসিম বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অ্যাকশনের প্রতিষ্ঠা। এটি ভাবলেই শান্তি লাগে ভাবতে যে অ্যাকশনধর্মী ছবি এত এত নির্মিত হয়েছে আমাদের চলচ্চিত্রে তার শুরুটাই হয়েছে তাঁর হাতে। গর্ব হয় ভাবতে এমন একজন নায়কের ভক্ত হতে পেরে। যে অ্যাকশন ‘রংবাজ’ ছবিতে শুধু মুখের সাউন্ডে শুরু হয়েছিল পরে তা আধুনিকায়ন হবার পেছনেও তাঁর অবদান ছিল। ‘জ্যাম্বস ফাইটিং গ্রুপ’ দিয়ে যার সূচনা হয়েছিল। তাঁর অ্যাকশন দৃশ্য, পাঞ্চিং সাউন্ডের নিজস্বতা, বডি ল্যাংগুয়েজ বাকি সব অ্যাকশন হিরোর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।এই আলাদা জসিম আমার একান্ত প্রিয় অ্যাকশন হিরো।

আমার একান্ত জসিম সিনেমার পর্দায় লাজবাব প্রতিবাদী নায়ক। যে প্রতিবাদী ভূমিকা আমরা মান্নার ছবিতে অনেক পাই তাঁরও আগে জসিম সে প্রতিবাদী নায়ক হয়ে উঠেছিল। ‘কাজের বেটি রহিমা’ ছবিতে কাজের মেয়ের উপর নির্যাতনের যে বাস্তবতা দেখানো হয়েছে যা আজও এদেশে চলমান সেই নির্যাতনকারীদের উপর শাস্তির প্রতিবাদ দেখিয়েছেন জসিম। যে বোনকে রাস্তায় অপমান ও অসম্মান করার দুঃসাহস দেখিয়েছিল গুণ্ডারা তাদের জন্য সাক্ষাৎ যমদূত হয়ে জসিম গিয়েছিল উচিত শিক্ষা দিতে। শ্রমিকের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের দাম যারা দিতে চায় না সেই জুলুমবাজ মালিক বা চাঁদাবাজদের জন্যও জসিম আতঙ্কের নাম ‘গরিবের ওস্তাদ’ ছবিতে। বস্তি দখল করতে আসা দখলদার গোষ্ঠীর জন্য জসিম একাই একশো ‘লালু মাস্তান’ ছবিতে। প্রতিবাদী জসিম এভাবে অসাধারণ।

আমার একান্ত জসিম ভিলেন থেকে নায়ক হয়ে ওঠা এক অভাবনীয়, অবিশ্বাস্য ঘটনার জন্মদাতা। সাদাকালো সময়ে যে জসিম ভিলেন হিসেবে জনপ্রিয় ও আইডলে পরিণত হয়েছিল সেই জসিমই নায়ক হয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছিল অবিশ্বাস্যভাবে। ভিলেন হয়ে যেমন ফ্যানবেজ তৈরি করেছিল পাশাপাশি নায়ক হয়েও কোটি দর্শকের মনে জায়গা করেছিল।

আমার একান্ত জসিম বীর মুক্তিযোদ্ধা। অস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে ভূমিকা রেখেছিল। এফডিসিতে তাঁর নামে ‘মুক্তিযোদ্ধা জসিম ফ্লোর’ নামটা দেখলে গর্বে বুক ভরে যায়, এই গর্ব তো তুলনাহীন।

আমার একান্ত জসিম এক দরদী ভাই। বোনের জন্য যে নিজেকে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত। যার কণ্ঠে আসে এ গান –
‘ও তুই কাঁদিস না রে বোন আমি সইতে পারি না
তুই কেন বুঝিস না
তিনটি ভাইয়ের তুই এক বোন।’ (গরিবের সংসার* ছবি)
সেই বোনের জন্য জসিম নিজেকে উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করে না। ‘ভাইজান’ ছবি যার সেরা উদাহরণ। বোন শাবানার সুখের জন্য সারাজীবন সাধনা করে যায় জসিম। শেষ পর্যন্ত নিজের বাড়ি, সম্পত্তি সব বোনের নামে লিখে দিয়ে নিজের পুরনো পেশা চানাচুর বিক্রেতা হয়ে যায়। বোনের জন্য ভালোবাসার অনন্য নজিরের ছবি এটি। ‘গরিবের ওস্তাদ’ ছবিতে শ্বশুরবাড়িতে বোনকে যাতে নির্যাতনের শিকার হতে না হয় সেজন্য পেটের ভাত ঘুষি মেরে বের করে দেয় জসিম তাদের ইচ্ছামতো। দৃশ্য যতই সাদামাটা হোক না কেন এর গভীরতা অনেক। আজকালকার স্বার্থপর সমাজে ভাইবোনের সম্পর্কও ভেঙে যাচ্ছে সেটি খেয়াল করলে জসিমের নিঃস্বার্থ ভাই হয়ে ওঠা বড় কিছু।

আমার একান্ত জসিম লটারি জিতেছে কিছু ছবিতে, ঠেলাগাড়ি চালিয়েছে, পরিশ্রম করে বড়লোক হয়েছে এবং এ নিয়ে ট্রল হয়েছে অতি সচেতন দর্শকের কাছে, হাসির পাত্র হয়েছে, মিমসের শিকার হয়েছে কিন্তু আমার কাছে এই জসিম গর্বের। পরিশ্রমের মাধ্যমেই যে বড় হওয়া যায়, পেশা যত ছোটই হোক না কেন সততা থাকলে যে একদিন বড় কিছু করা যায় তারই উদাহরণ জসিমের এ চরিত্রগুলো। এই জসিম বাস্তবসম্মত।

আমার একান্ত জসিম চিরকাল প্রিয় থেকে যাবে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস লিখতে গেলে যাকে লাগবেই লাগবে।


About The Author

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

Leave a reply