Select Page

দাগ হৃদয়ে লাগেনি……

দাগ হৃদয়ে লাগেনি……

দাগ হৃদয়ে
পরিচালনা : তারেক শিকদার
অভিনয়ে : বিদ্যা সিনহা মিম, আঁচল, বাপ্পী চৌধুরী, রীনা খান, অরুণা বিশ্বাস, লিনা আহমেদ, শতাব্দী ওয়াদুদ, সেলিম আহমেদ, ডিজে সোহেল, রতন
রেটিং: ১/ ৫

‘যেন অনেক দিনের চেনা’-এই ছোটগল্প থেকে টেলিফিল্ম হবার কথা ছিল। আমরা পেলাম চলচ্চিত্র। সেন্সরে জমা দেবার আগ পর্যন্ত ছবির নাম ছিল ‘দাগ’। (পরবর্তীতে নাম বদল হয়ে) আমরা পেলাম ‘দাগ হৃদয়ে’।

প্রযোজক কামাল আহমেদ নিজে গল্প লিখেছেন, সেই গল্পে ছয় মাস ধরে রং ছড়িয়েছেন বরেণ্য গীতিকবি, চিত্রনাট্যকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মিম, আঁচল, বাপ্পীর মত মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির জনপ্রিয় তারকারা-একটি ছবির ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলবার জন্য এই কারণগুলোই যথেষ্ট ছিল। যদিও ছবির প্রচারণায় তারকা তিন শিল্পী কিংবা খোদ পরিচালককেও দেখা যায়নি।

তাতে কি? বাংলা সিনেমার প্রতি অমোঘ দরদ থেকে মুক্তির প্রথম দিনই দেখে এসেছি ‘দাগ হৃদয়ে’। যদিও আজ থেকে তিন বছর আগেই এ ছবির শেষ দৃশ্যটি ফেসবুকে দেখেছিলাম। সংশ্লিষ্ট ‘জিনিয়াস’ (!) সহকারী পরিচালক নায়িকা আঁচলের মাটিতে লুটিয়ে পড়ার রক্তাক্ত দৃশ্যটি সেলফি তুলে জগতবাসীকে দেখিয়েছিলেন। তখন থেকেই জেনে নিয়েছি, দুই নায়িকার মধ্যে ত্যাগী চরিত্রটি করছেন আঁচল। বোনের জন্য গল্পে জান কুরবান করবেন। ব্যাপারটিতে নতুনত্ব না থাকলেও যেহেতু চাষী নজরুল ইসলামের মত কিংবদন্তী পরিচালকের শিষ্য এ ছবিটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই তারেক শিকদারকে নিয়ে আশায় বুক বেধেছিলাম।

কিন্তু সব আশায় গুড়ে বালি করে দিয়েছেন পরিচালক নিজেই। গুরুর নামের প্রতি অবিচার করেছেন ছবিটি তাকে উৎসর্গ করে। ‘দাগ হৃদয়ে’ দেখা শেষ করে একটি কথাই বার বার ভাবছিলাম, এ ছবির একটি দৃশ্যও কি আমাদের মন ছুঁয়ে যেতে পেরেছে? একটি দৃশ্যও কি অতিরঞ্জিত না করে স্বাভাবিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে? প্রতিটি উত্তরই হবে নেতিবাচক। ছবিটি দেখতে গিয়ে মনে হয়েছে-পরিচালক তো বটেই, অভিনয়শিল্পী থেকে চিত্রগ্রাহক সবাই কেমন যেন দ্বিধাদ্বন্দ্বের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিলেন।

পেইন্টার কিংবা পাহাড়ি এলাকায় একজন দুঃখী মেয়ের জীবন নিয়ে বাণিজ্যিক ছবির গল্প ফাঁদবার ভাবনাটি ছিল চমৎকার। নি:সন্দেহে প্রযোজক কামাল আহমেদের ছোট গল্প ছিল আগ্রহ জাগানিয়া, বেশ চমৎকার। তবে এই গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে তারেক শিকদার কখনো কাকরাইল পাড়ার কথা মাথায় রেখেছেন, যার কারণে নায়িকা আঁচলের দেহাবয়বের ওপর অশ্লীলভাবে (যাকে অনেকে কমার্শিয়াল শট বলেন) ক্যামেরা ঘুরিয়েছেন, আবার কখনো বোদ্ধা দর্শকের জন্য চিত্রকলা কিংবা জীবনবোধ নিয়ে বড় বড় সংলাপের আয়োজন করেছেন।

দিন শেষে ‘দাগ হৃদয়ে’র টার্গেট দর্শক কে বা কারা বোঝা গেল না। সব শ্রেণীর দর্শককে তুষ্ট করতে গিয়ে গল্পই যে প্রতিটি দৃশ্যে ফিকে/ কৃত্রিম/ জগাখিচুড়ি হয়ে যাচ্ছিলো, সে খেয়াল কি কেউ করেছেন? এ ছবির চিত্রনাট্য কিংবা সংলাপে আধুনিকতার ছোঁয়া পাইনি। চিত্রনাট্যকারের ওপর অভিযোগ নেই। কারণ একজন চিত্রনাট্যকার হিসেবে আমি জানি একটি ভালো স্ক্রিপ্ট কিভাবে দুর্বল হাতে পড়ে বিনষ্ট হয়। তবে সংলাপে আরো ধার, আধুনিকার স্বাদ থাকতে পারতো। দর্শক এখন বইয়ের ভাষার সংলাপ শুনতে অভ্যস্ত নন। সময় বদলে গেছে।

প্রবাদ আছে, বাংলার সিনেমার গল্পে গরু গাছে চড়ে। কিন্তু এ সিনেমার চরিত্রগুলো যে শূন্যে ভাসে, অলৌকিক ক্ষমতার দাপটে সবকিছু বুঝে যেতে পারে-এটি সচক্ষে না দেখলে বড় ধরনের ‘মিস’ হয়ে যেত। লন্ডনে পড়ুয়া বাংলাদেশি ছেলে সোহাগ (বাপ্পী) সেখানকার এক আর্ট গ্যালারিতে বাংলাদেশের এক অখ্যাত চিত্রশিল্পীর কিছু ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন দেখে মুগ্ধ হন। অতপর দেশে এসে মায়ের সাথে কোনোমতে দেখা করেই ছুটে যান সিলেটে, নারী চিত্রশিল্পীর খোঁজে। তার ধারণা: যে মেয়ে রংতুলিতে এত নান্দনিক রং ছড়াতে পারে, না জানি তার মনটাও কত নরম হবে!

প্রথম কথা হচ্ছে: আমি কস্মিনকালেও জানতাম না একটি শিল্পকর্ম দেখে কখনো ধারণা করা যায় সেটি পুং নাকি স্ত্রীলিঙ্গের সৃষ্টি। বিষয়টি ভয়াবহ। দ্বিতীয় আতংক: বাংলাদেশে এত জেলা থাকতে সিলেটেই যে সেই চিত্রশিল্পী রয়েছেন, সেটি নায়ক কী করে বুঝলেন? বাটি চালান করেছিলেন? যদি করেও থাকেন, সে দৃশ্যটি দেখা থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হলো কেন? তৃতীয় আতংক: সেখানে গিয়ে চিত্রশিল্পীকে প্রাথমিকভাবে খুঁজে না পেয়ে বদমেজাজী আরেক নায়িকা নাবিলা (আঁচল)-এর বাড়িতেই কেন তাকে গাড়িচালকের চাকরি নিতে হলো? একটি দৃশ্য কিংবা সংলাপ দিয়েও কি সেটি দর্শকদের বোঝানো যেতো না? ধনী মায়ের ওপর এত ক্ষোভ তার? দীর্ঘদিনের জন্য মায়ের সাথে সব যোগাযোগ ছিন্ন করে, ব্যংক অ্যকাউন্ট থেকে কোনো প্রকার অর্থ লেনদেন না করে সিলেটের মাঝে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিলেন? তাছাড়া যে দুনিয়া কাঁপানো চিত্রকর্মের জন্য লন্ডন থেকে সিলেট ছুটে আসা, নায়িকা সোহানার (মিম) চিত্রকর্মগুলো কি দেখে কি সেই মানের মনে হলো?

এ ছবির প্রতিটি শাখা-উপশাখায় অসঙ্গতি। শুরুতে বসন্ত উৎসব হুট করে দেখানো হলো কেন? উত্তর নেই। গল্পের প্রেক্ষাপট সিলেটে। কিন্তু অনেকে সেখানে নোয়াখালীর ভাষায় কথা বলেন। কেন? ময়মনসিংহের ভাষা বলবার জন্যও প্রস্তুত একজন। একমাত্র রাজা (ডিজে সোহেল) ছাড়া কাউকেই তো সিলেটি ভাষায় কথা বলতে দেখলাম না! খল চরিত্র নিপুর (শতাব্দী ওয়াদুদ) বাড়িতে চিত্রশিল্পীর খোঁজ করতে চান যান সোহাগ ও তার বন্ধু। নিপু তাদের সাথে কথা বলেন, চা খাওয়ার নিমন্ত্রণ জানান। অথচ নিচে যে সোফাসেটগুলো নীরবে কাঁদছিল, সে খেয়াল কারো ছিলনা। একবারও কি অতিথিকে বসতে বলা যেতো না?

নায়িকা আঁচলের ভাইয়ের শিক্ষক (রতন) ও নায়ক রাতে ঘুমুতে গিয়ে মশারি টানাবার জন্য ‘সাপোর্ট’ খোঁজেন। কিছু না পেয়ে অবশেষে ‘বুদ্ধির জাহাজ’ নায়ক সামনে থাকা আঁচলের অর্ন্তবাসের (ব্রা) শরণাপন্ন হন। আমজনতাকে সুড়সুড়ি দেয়ার জন্য এ ধরনের দৃশ্য থাকতেই পারে। তবে প্রশ্ন হলো, শিক্ষক ও ড্রাইভারের ঘরের সামনে ধনীর দুলালী নায়িকা কেন ব্রা শুকাতে দিয়েছিলেন? তাও রাতের বেলায়? এত বড় বাড়িতে আর কোনো জায়গা ছিল না? নাকি আঁচল সারা বাড়িময় তার ব্রা ছড়িয়ে রেখে রাতে ঘুমুতে যান?

এ ছবির গল্পে পথে চলতে গিয়ে নায়ক নায়িকার ভাইয়ের একটি জটিল অঙ্কের সমাধান করে দেন। ব্যস! পরের দৃশ্যে বাবা-মা খোশগল্পে মুখর হয়ে ওঠেন, নায়ক নাকি আজ পড়িয়েছে। কিন্তু কখন? পথিমধ্যে একটি অঙ্কের ফয়সালা করে দেয়া আর পড়ানো কি এক হলো?

এ ছবিতে খল চরিত্রগুলো রাতে নায়কের হাতে মার খেয়ে রক্তাক্ত হয়। কিন্তু পরের দিনও নায়কের প্রতি অদম্য ভালোবাসা জিইয়ে রাখবার জন্য সেই রক্তের দাগগুলো লালন করে মুখে, শরীরে। কারণ কী? বাড়িতে পানি ছিল না? রক্ত ধুয়ে ফেলার কোনো ব্যবস্থা ছিল না? দোকান থেকে অন্তত মিনারেল ওয়াটার কিনে আনা যেত না? পরিচালক জানেন।

এ ছবিতে নায়ক ঘর থেকে বের হন এক পোশাকে, পথের মাঝে কোথায় কি করেন সেটি তো আর আমরা জানিনা, আমরা যেটি জানি ও দেখি তা হলো পরের দৃশ্যে নায়কের পোশাক ও চুলের স্টাইল পরিবর্তন। এভাবেই আঁচলের সাথে তার প্রথম দেখা হয়। শুধু কি তাই? ছবি জুড়ে মুহূর্তে মুহূর্তে নায়কের চুল অতিবর্ধনশীল/ অতি ক্ষুদ্রকার আকার ধারণ করে। এই বিষয়টি তাও না হয় কষ্ট করে মেনে নিলাম। কিন্তু যা কোনোভাবেই মানতে পারিনি তা হলো, পুরো ছবির গল্প সিলেটে হওয়া সত্ত্বেও গান করতে নায়ক-নায়িকাকে বার বার কক্সবাজার যেতে হয় কেন? সিলেটেই তো কত নয়নাভিরাম দৃশ্য রয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি গান করবার সময় অতিথি পাখির মত নায়কের ঠোঁটের ওপর গোঁফ চলে আসে কোন দৈবশক্তির ওপর ভর করে? গানের আগেও গোঁফ নেই, পরেও নেই। কিন্তু প্রতিটি গানেই গোঁফ। ইটজ ম্যাজিক, সত্যিই !!!

ম্যাজিক অবশ্য আরো রয়েছে। এ ছবিতে আঁচলের দাদীর বাড়িতে বাপ্পী আসেন ২০১৬ সালে। অর্থাৎ আমরা বুঝে নিয়েছি পুরো ঘটনাটি ২০১৬ সালের। কিন্তু তার কয়েকটি দৃশ্য পরেই জানতে পারি, ঘটনাটি আসলে জুলাই-আগষ্ট, ২০১৭ সালের (যখন রাজার বাবা নায়িকাদের বাবাকে ফোন করেন)। পুরো ব্যাপারটিই আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন পরিচালক এবং শিল্প নির্দেশক তারেক শিকদার পেছনে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে। কতটা অসতর্ক হলে এমন দৃশ্য দেখতে হয়, ভাবছিলাম। শুধু তাই নয়, সিলেটে আঁচলের সাথে বিয়ে দেয়ার জন্য মা রীনা খান যখন হয়রান, তখন তার মেয়ে আঁচল বাপ্পীর হাত ধরে ঢাকার বসুন্ধরা সিটির লনসিং ফুট ওয়্যার থেকে জুতো কেনায় ব্যস্ত। জুতো কিনে সেই প্যাকেট নিয়ে আবার তারা সিলেটে চলে আসেন। পরিচালক ও সহকারী পরিচালকদের কাছে প্রশ্ন, বসুন্ধরা সিটির প্যাকেটটিই দিতে হবে আপনাদের? অন্য কিছু হাতে ধরিয়ে দেয়া যেতো না? দর্শকদের আপনারা কি ভাবেন? অক্ষরজ্ঞানহীন? জোন নির্বাচন, দৃশ্য এবং কস্টিউমের ধারাবাহিকতা এসব নিয়ে কোনো দর্শকই মাথা ঘামাবেন না? এড়িয়ে যাবেন? যদি এটি ভেবে থাকেন, তাহলে ভুল করবেন। বিশ্বাস করুন, শুধুমাত্র আপনারা দর্শকদের এরকম ভাবেন বলেই আমাদের ২০১৯ সালে বসে ‘দাগ হৃদয়ে’র মত চলচ্চিত্র দেখতে হয়! সম্ভব হলে দর্শকদের একটু সম্মান করুন। গল্পকার ও চিত্রনাট্যকারের গল্পকে সততার সাথে (কাকরাইল অথবা বোদ্ধাপাড়ার চাওয়া-পাওয়া মাথায় না নিয়ে) নির্মাণ করুন, দেখবেন চলচ্চিত্র বদলে যাবে। দর্শক দু হাত ভরে সে চলচ্চিত্রগুলো গ্রহণ করবেন।

এ ছবির আরো বেশ কিছু দৃশ্য আপত্তিজনক। যেমন: মা রীনা খান তার পছন্দ করা পাত্র ডিজে সোহেলকে ইঙ্গিত করে নিজের পেটের মেয়ে আঁচলকে ধর্ষণ করতে/ জড়িয়ে ধরতে। কী ভয়াবহ! এসব দৃশ্য সেন্সর হয় কী করে? পরিচালক এ ছবিতে টাকার বান্ডেল দেখিয়েই সারা। কিন্তু ভেতর থেকে যে সব ধবধবে সাদা কাগজগুলো বেরিয়ে এসে দাঁত কেলাচ্ছে, সেই খেয়ালটুকুও অন্ধ সহকারী পরিচালকরা খেয়াল করেননি। নায়ক মারপিট করতে গেলে তার ক্লিভেজ বেরিয়ে যায়। অন্ধ সম্পাদক, অন্ধ পরিচালক কিংবা অন্য সবাই এই ইউনিটে যারা ছিলেন, সবাই অন্ধ। কেউ এসব খেয়াল করেননি। বুলেট নিক্ষেপের ভিএফএক্স তো নিম্নমানের কার্টুন ছবিকেও হার মানাবে। তার চেয়ে বিস্ময়কর বিষয়, গুলি গায়ে লাগবার পরও খল চরিত্রগুলো নাচতে নাচতে দৌঁড় দেয়। এত বেদনাহীন বুলেট কোথায় পেয়েছেন নির্মাতারা?

মিমকে একা পেয়ে ভিলেনরা তাড়া করলেন। পেইন্টিং ছিনতাই করতে চাইলেন। অথচ মারপিট পর্ব শেষ হবার পর নায়ক চা বাগানে নায়িকাকে একা ফেলে রেখে চলে যাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। এ কেমন কাপুরুষ নায়ক? অবশ্য যুক্তি দাঁড় করিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছি, নায়ক হয়তো এ দৃশ্যে নায়িকাকে চিনতে পারেননি। মিমের ডাবিং যে তখন অন্য ডাবিং আর্টিস্ট করেছিলেন! এ ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন, মানানসই কণ্ঠ কি নির্বাচন করা যেতো না?

ছবিতে মিম ফোনে বাপ্পীর সাথে কথা বলেন ফোনে ম্যাসেজ অপশন ওপেন করে। স্পষ্টভাবে দেখা গেছে বিষয়টি। পরিচালক, চিত্রগ্রাহক, সম্পাদক এসব দৃশ্য কী করে ‘ওকে’ করেন? যেমন খুশি তেমন কাজ করার অধিকার কে তাদের দিয়েছেন?

আঁচলের মনের মানুষ বাপ্পী ঢাকা চলে গেলে সেটি শুনে মিম কেন মূর্ছা যান? উত্তর নেই। ডাক্তারকে নিয়ে ওষুধ আনতে গেলে গুন্ডারা তাড়া করে আঁচলকে। ফুলনদেবীর ভূমিকায় তখন ‘ঢিশক্যাঁও’ অ্যাকশনে মেতে ওঠেন আঁচল। সুপুরুষ ডাক্তার কেন তখন গাড়ির ভেতর বসে ছিলেন? এ ছবিতে সবকিছুই খুব কৃত্রিম। বিমানের ইনসার্ট হাস্যকর, কৃত্রিম। লন্ডন ব্রিজের প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা/ বিতর্ক খুব কৃত্রিম। মিম কেন কাঁদে তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই, বেশ কৃত্রিম। মিম-বাপ্পী যে পরস্পরকে মন দিয়েছে, এ বিষয়টি শেষ দৃশ্য পর্যন্তও জানতে পারেনা আঁচল। এই বিষয়গুলো নিয়ে চিত্রনাট্যে খেলা যেতো। গল্পের সে সম্ভাবনা ছিল।

বিরতির দৃশ্যটিও ছিল বেশ পানসে। মিম ও আঁচলের চরিত্র দুটি নিয়ে অন্তত শেষ দিকে অনেক আবেগী একটি গল্প সমান্তরালে চলতে পারতো। কিন্তু পরিচালক ভুল করেও সেই চেষ্টা করেননি। একটা সময় মনেই হয়েছে, এ ছবির বুঝি কোনো পরিচালক নেই। বিশেষ করে সহকারী পরিচালক নেই। যে যা খুশি, তাই করছে। আর এ কারণেই এক নায়িকা যখন পৃথিবী থেকে বিদায় নেন, আমাদের মন কাঁদে না। মনে হয় ছেড়ে দে মা। আমরাও প্রেক্ষাগৃহ থেকে বিদায় নিয়ে বাঁচি। ২০১৯ সালের চলচ্চিত্র, অথচ এখনো পুলিশ শেষ দৃশ্যে ঘটনা সম্পন্ন হইবার পরে হাজির হন। শুধু তাই নয়, এখনো নায়ক-নায়িকা অনর্গল ‘শেট আপ, শেট আপ’ বলে মস্তিষ্কের বেদনার উদ্রেক করেন। নায়কের মা নিজেদের ‘ধনী’ বোঝাবার জন্য ‘ড্যাডি ড্যাডি’ করে অস্থির করেন। শেষ ক্লাইমেক্সে নিম্ন মানের কার্টুনের মত বন্দুক, শর্টগানের ব্যবহার চোখে এবং মনে পীড়া দিয়েছে। গল্পের চরিত্রের সাথে এই ক্লাইমেক্স কোনোভাবেই মানানসই মনে হয়নি। বিশেষ করে নায়ক তার মায়ের কাছে ফিরে আসবার পর থেকে যা যা হয়েছে, সবকিছুই অবাস্তব, অর্থহীন। এই দৃশ্যগুলোতে ধৈর্য্যরে অসীম পরীক্ষা নেয়া হয়েছে দর্শকদের।

‘দাগ হৃদয়ে’ ছবিতে প্রতিটি অভিনয়শিল্পীই হৃদয়ে দাগ কাটতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর সিংহভাগ দায় পরিচালকের। ডিরেক্টর্স মিডিয়াতে পরিচালক ব্যর্থ হলে, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কতটুকুই বা নিজেদের সামাল দিতে পারবেন? পুরো ছবি জুড়েই অভিনয়শিল্পীদের দেখে মনে হয়েছে অথৈ জলে উদ্দেশ্যহীনভাবে অসহায়ের মত ছুটছেন।

মিমকে বরাবরই মত অনিন্দ্য সুন্দরী লেগেছে। সোহানা চরিত্রে তিনি মানিয়ে গেছেন। তবে তার নামের উচ্চারণ শোহানা না বলে সোহানা বললেই বোধ হয় ভালো হতো। কারণ সোহানা শব্দের উৎপত্তি হিন্দি সুহানা থেকে। তাছাড়া ‘সুইটহার্ট’ কিংবা ‘আমি তোমার হতে চাই’ ছবিতে বাপ্পী-মিম জুটির যে রসায়ন পাওয়া গেছে, এ ছবিতে তার ছিঁটেফোটাও পাওয়া যায়নি। মিমের ক্লোজ শট এবং বাপ্পীর সাথে টু-শটে ধারাবাহিকতা ছিল না বেশ কয়েকটি দৃশ্যে।

মিম একজন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী। কিন্তু একের পর এক ছবিতে মিমের অপব্যবহার দেখে সত্যিই আমি হতাশ। হয় নির্মাতাদের মিমকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে হবে অথবা মিমকে তার চলচ্চিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরো কৌশলী হতে হবে, নিজেকে নিয়ে নিরীক্ষা করে নতুনভাবে পর্দায় ফিরে আসতে হবে।

নায়িকা আঁচলকে দীর্ঘদিন পর বড় পর্দায় পেয়েছি। অভিনয়ে মন্দ নয়। দেখতেও বেশ লেগেছে কিছু দৃশ্যে। নাচের দৃশ্যেও সাবলীল। তবে নির্মাতা মীমকে রুচিশীল দেখাতে গিয়ে আঁচলকে বাণিজ্যের অনুষঙ্গ/ লক্ষ্মী মনে করে বেশ কিছু অনর্থক অশ্লীল/ কমার্শিয়াল শট নিয়েছেন। এ ধরনের গল্পের ছবিতে এসব দৃশ্যের প্রয়োজন ছিল না। এটি ২০১৯ সাল। আঁচলকে দিয়ে ‘আমি ঝাকা নাকা’ গানের সাথে নাচ করিয়ে গল্পের চরিত্র বদলে ফেলার কোনো দরকারই ছিল না। তাছাড়া যে মেয়েটি এত বদরাগী বলে শুরুতে উপস্থাপন করা হলো, তাকে তো বাকিটা সময় তেমন রাগ-ই করতে দেখলাম না। যে মেয়েটি তার বোনের জন্য এত পাগল, তাকেও বোনের সাথে খুব বেশি দেখা গেলো না। দুই বোনের সম্পর্কের রসায়ন ফুটে ওঠেনি এতটুকু। আঁচলের বেশির ভাগ পোশাক নির্বাচন ও তার মেদবহুল শরীর দৃষ্টিকটু লেগেছে। এত স্থূল শরীর যার, তাকে দিয়ে ব্যায়ামের দৃশ্যটি রাখা কি খুব দরকার ছিল? অন্য কিছু করানো যেতো না?

ভাস্কর্যের সামনে নায়কের সাথে কথা বলার দৃশ্যে ‘ডাবল চিন’-এর আঁচলকে তো চেনাই যায়নি। এই ধারাবাহিকতার ব্যত্যয় গল্পকে ব্যাহত করেছে পদে পদে। সবচেয়ে যা কানে লেগেছে, তা হলো উচ্চারণ। ধ্রুবকে আঁচল কেন দ্রুব বলেন? জাজমেন্টকে কেন ঝাজমেন্ট বলেন? তাছাড়া আঁচলকে দিয়ে কেন অনর্গল ইংরেজি পড়াতে হবে? শুয়ে শুয়ে বই পড়ার দৃশ্যটি যে কী ভয়ানক ছিল, না দেখলে কেউ বুঝতে পারবেন না।

তবে ভুল উচ্চারণের দিক দিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন খোদ নায়ক বাপ্পী চৌধুরী। যেহেতু তিনি চলচ্চিত্র মুক্তির আগে গণমাধ্যমে বলেছেন, আগে ছবি দেখুন। তারপর সমালোচনা করুন। ভুল ধরুন। আমি শুধরে নেবো। বাপ্পীর নিজেকে উত্তরণের এই চেষ্টাকে ভীষণভাবে স্বাগত জানাই। আর তাই ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছি অকপটে-বাপ্পী একটি দৃশ্যে ডি জে সোহেলকে বলেন: উচ্চারণটি হবে অ্যানসাইক্লোপিডিয়া। কিন্তু প্রকৃত অর্থে উচ্চারণটি: এনসাইক্লোপিডিয়’। অ্যা এবং এ-এর পার্থক্য বুঝতে হবে। বাংলা, ইংরেজি দুটি ভাষার উচ্চারণেই বাপ্পীর দুর্বলতা আগেও ছিল। তবে এ ছবিতে খুব বেশি কানে লেগেছে। পুরো ছবি জুড়ে বাপ্পী ল্যান্ডস্কেপ কে লেন্ডইস্কেপ, নেচারকে ন্যাচার, এক্সিবিশনকে অ্যাক্সিবিশন, মিস্ট্রিয়াসকে মিসটেরিয়া, নিশিথে কে নিশিতে, বন্ধকে বন্দ, এক্সিলেন্টকে অ্যাক্সিলেন্ট, আর্টিস্টকে আর্টিশ্ট, লান্ডান কিংবা লন্ডনকে ল্যান্ডান, দুগন্ধকে দুর্ঘন্ধ, মনের (মোনের) অজান্তেকে ‘ম’নের অজান্তে, ব্যাপারকে বেপার, গ্র্যাজুয়েশনকে গ্র্যাজ্জুয়েশন, ইনফরমেইশানকে ইন-ফরমেশন বলে নাস্তানাবুদ করেছেন দর্শকদের। নায়কের ডাবিং অন্য কাউকে দিয়ে করানো যেতো। যেমন: ‘সুইটহার্ট’-এ অন্য শিল্পী ডাবিং করাতে অসাধারণ লেগেছিল বাপ্পীর অভিনয়। পৃথিবীতে অনেক বিখ্যাত শিল্পীর ডাবিং অন্য শিল্পীরা করেছেন। ১৯৬৭ সাল থেকে অভিনয় করলেও শ্রীদেবী প্রথম নিজের কণ্ঠ দেন ১৯৮৯ সালে ‘চাঁদনী’ ছবিতে। তার আগে জনপ্রিয় নায়িকা রেখাও শ্রীদেবীর হয়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে ডাবিং করেছেন, ‘আখরী রাস্তা’ তার মধ্যে অন্যতম। টাবুর মত অভিনেত্রী ‘জুড়ুয়া’ ছবিতে ডাবিং করেছেন। মোনা শেঠি ‘গুলাম’ ছবিতে রানী মুখার্জির ডাবিং করেছেন। আমাদের দেশের দিকেই তাকান। দীপা খন্দকার ‘চোরাবালি’ ছবিতে পিয়ার ডাবিং করেছেন, যে ছবিতে অভিনয় করে মেরিল প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কারে পিয়া মনোনয়নও পেয়েছিলেন। শাকিব খানের সাথে তিন্নির ‘সে আমার মন কেড়েছে’ ছবিতে নায়িকা শাবনাজের বোন অভিনেত্রী মৌ ডাবিং করেছেন। শাবনূর, শাবনাজের কয়েকটি ছবিতে তারিন, ঈশিতা ডাবিং করেছেন। পপির অনেক ছবিতে আফসানা মিমি ডাবিং করেছেন। অপু বিশ্বাসের অসংখ্য ছবি আছে (দেবদাস-ও তার মধ্যে অন্যতম) যে ছবিগুলোতে তিনি ডাবিং করেননি। এমনকি ২০০৩ সালে হেলাল খান ‘জুয়ারী’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন, অনেকেই জানেন না সে ছবিতে হেলাল খানের ডাবিং করেছিলেন অভিনেতা শিবা শানু। এরকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। ডাবিং না করে যদি ছবির সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়, ইগো ধরে না রেখে সেটিকে মেনে নেয়াই কি মঙ্গল নয়? বাপ্পীর উচ্চতা নায়কোচিত, নাচেন মন দিয়ে। তার ওপর ভক্তদের আশাও অনেক বেশি। শুধু সীমাবদ্ধতার জায়গাগুলো শাণিত করলেই তিনি তার ভক্তশ্রেণী আরো বৃদ্ধি করতে পারবেন। হাঁটা, পর্দা ব্যক্তিত্ব, কথা বলার ধরণ, ভয়েস মড্যুলেশন-এসব ব্যাপার নিয়ে এখন থেকেই বাপ্পীকে আরো কঠোরভাবে অনুশীলন করতে হবে। ক্যারিয়ার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ দর্শক একবার-দুইবার ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু বার বার ক্ষমা করবেন না। ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য আছে। বাপ্পী মীমকে চা বাগানে ‘নির্জন’ বলে ডাকবেন। ছবির ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি দৃশ্য। ঐ একটি দৃশ্যে বাপ্পী অভিনয় দিয়ে গল্পটি নিজের আয়ত্বে আনতে পারতেন। কিন্তু সেই দৃশ্যেও ভীষণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন বাপ্পী। এর পেছনে কিছুটা দায় যায় পরিচালকেরও। তিনি পরিচালকদের কাছ থেকে অভিনয় বের করে আনতে পারেননি।

অন্যান্য অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে কেউই উত্তাপ ছড়াতে পারেননি কিংবা সুযোগ পাননি। শতাব্দী ওয়াদুদের মত অভিনেতাকে ‘মিসকাস্ট’ মনে হয়েছে। অসহায় মনে হয়েছে। অরুনা বিশ্বাসের করার কিছুই ছিল না। রীনা খান বরাবরের মতই উচ্চকিত। রতনও বরাবরের মতই, অতি অভিনয়ে দুষ্ট। সে তুলনায় ডি জে সোহেল অন্যান্য ছবির তুলনায় এখানে মানানসই, বিশ্বাসযোগ্য, ভুলভাল ইংরেজি বলেননি। বিশেষ করে সিলেটি ভাষা আয়ত্তে ছিল বলে তিনি উতরে গেছেন।

কারিগরী দিক দিয়ে এ ছবির ব্যর্থতা আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়। চিত্রগ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা, সম্পাদনা, নৃত্য পরিচালনা, রূপসজ্জা, অ্যাকশন দৃশ্য পরিচালনা, শব্দগ্রহণ, রং বিন্যাস প্রতিটি বিভাগই হতাশ করেছে। আবহ সংগীতে বাপ্পীর এন্ট্রি দৃশ্যে সেই চিরাচরিত মুখস্ত সংগীত ব্যবহার করা হয়েছে। এই চিরচেনা আবহ সংগীতগুলো এবার ‘রিসাইকেল বিন’-এ ফেলে দেয়া যায়না? তবে এ ছবির লোকেশন নির্বাচন (সিলেট) চোখে আরাম দিয়েছে। সাথে সাথে হতাশও করেছে। একজন দক্ষ নির্মাতার সাথে স্মার্ট চিত্রগ্রহণ থাকলে দেখার জায়গা থেকে ছবিটি কোন উচ্চতায় চলে যেতে পারতো-এটি ভেবে।

সংগীতের দিক দিয়ে এ ছবির একটি গানও হৃদয়ে দাগ কাটেনি। ২০১৯ সালে এসে কেন ’৯০ দশকের আবহে ‘তুমি বাধোনি আমাকে’র মত গান করতে হবে, বোধগম্য নয়। এ গানে বাপ্পী তপ্ত গরমের মধ্যে তিন ধরনের স্যুট-টাই পড়ে কাদা-বালির মধ্যে মিমের সাথে হেসে খেলে গান করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কেন? আমাদের নৃত্য পরিচালক, পোশাক পরিকল্পক ও অভিনয়শিল্পীদের বাস্তবমুখী পোশাক পরিকল্পনা করা উচিত। গানের মধ্যে ইমরান-ঐশীর ‘হৃদয়ে এতদিন’ শ্রুতিমধুর, আধুনিক। তবে এখানেও ছিল পোশাক সমস্যা। চা বাগানে দিনের বেলা নায়ক-নায়িকা কালো রঙয়ের পোশাকের পরিবর্তে যদি সাদা পড়তেন এবং রাতের বেলা সাদা পোশাকের পরিবর্তে যদি কালো পড়তেন তাহলে বোধ হয় দেখতে বেশি ভালো লাগতো। ‘ভালোবাসার বর্ণমালা’ আমজনতার জন্য। কিন্তু যে ছবির বিষয়বস্তু পেইন্টিংয়ের মত নান্দনিক একটি শিল্প, সে ছবির গানের কথা কেন ‘বারুদ ছাড়া কাঠি দিয়ে আগুন লাগালে’ হবে? পরিচালক হয়তো বলবেন, দর্শক এসব কমার্শিয়াল কথা, সুরই খায়। এবার তাহলে বলুন, দর্শক কি এ গান খেলো? তাছাড়া এ গানের আগের দৃশ্যপট ছিল নায়িকা আঁচল ভালোবাসায় গদগদ হয়ে শাড়ি পড়েন। বাপ্পীকে বলেন, এই সাজেই তো তুমি আমাকে দেখতে চাও, তাই না? এরপর নি:শ্বাস-প্রশ্বাস এক করে রাম কোলাকুলি করেন দুজন। ‘ভালোবাসার বর্ণমালা’র যাত্রা শুরু হয় তখনই। এ ধরনের দৃশ্যের পর তো নায়িকার পরণে শাড়ি পর্দায় ডিমান্ড করেছিল। কিন্তু তিনি কি পড়েছেন? অন্যদিকে মুন্নী-ইমরানের গাওয়া ‘মনটা বড় ইঁচড়ে পাকা’র কোনো প্রয়োজন ছিলনা। কথা, সুর, গায়কী, চিত্রায়ণ, নাচ কোনো কিছুই দেখবার কিংবা শুনবার মত নয়। আর আইটেম গানের কথা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। গল্পকার, চিত্রনাট্যকার যে নান্দনিক ভাবনা নিয়ে কলম হাতে তুলে নিয়েছিলেন, এ ধরনের পোশাকী গান সেই সততার শ্লীলতাহানি করেছে। বিষয়টি বেদনাদায়ক।

শেষ কথা: তারেক শিকদারের অভিষেক ছবি বোদ্ধা/ আমজনতা কোনো ধরনের দর্শককের হৃদয়েই দাগ লাগাতে পারেনি। তার কাছে অনুরোধ পরবর্তীতে চলচ্চিত্র নির্বাচনের আগে আর যাই করুন, দয়া করে আপনার গুরুকে উৎসর্গ করবেন না। একবার ভাবুন, তিনি জীবদ্দশায় আপনার এ ধরনের চলচ্চিত্র দেখলে কী মন্তব্য করতেন! নিজেকে না হয় সম্মান নাই করলেন, আপনার দর্শক কিংবা গুরুকে সম্মান করুন।


মন্তব্য করুন