Select Page

আমি তোমার হতে চাই গতানুগতিক ধারার মোটামুটি ভালো ছবি

আমি তোমার হতে চাই গতানুগতিক ধারার মোটামুটি ভালো ছবি

 

আবীর শহরের বড় গ্যাংস্টার। একদিন একটা ইন্সিডেন্টের ফলে মোবাইলে তার সাথে পরিচয় হয় শ্রেয়া নামের অসম্ভব মিষ্টি একটা মেয়ের। আবীর শ্রেয়ার প্রেমে পড়ে। শ্রেয়া যখন জানতে পারে আবীরের ছোট বেলায় গানের শখ ছিলো সে আবীরের গাওয়া গান ইউটিউবে ছেড়ে দেয়। আবীরের গান ইউটিউবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। একটা বিশেষ কারনে শ্রেয়া আবীরের সাথে সামনা সামনি দেখা করতে না চাইলেও আবীরের বার বার অনুরোধে শ্রেয়া আবীরের সামনে আসে। শ্রেয়া আবীরকে তার গ্যাংস্টার জীবন থেকে বেড়িয়ে এসে রকস্টার জীবনকে বেছে নিতে বলে। আবীর শ্রেয়ার কথা মতো তাই করে। তবে সে যখন জানতে পারে শ্রেয়া ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত এবং তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার তখন আবীর জীবনের জটিলতম পরিক্ষার সম্মুখীন। সৎ জীবনে টাকা নেই কিন্তু ভালোবাসা আছে, অসৎ জীবনে টাকা আছে ভালোবাসা নেই। আবীর কোন জীবনটা বেছে নিবে ?

গল্পটা শুনতে খারাপ না। তবে একটা ছবিতে গল্পের চেয়েও চিত্রনাট্যর গুরুত্ব বেশী। চিত্রনাট্যে গল্পের ট্রিটমেন্ট হওয়া চাই ইন্টারেষ্টিং। অনন্য মামুনরা বার বার এই জায়গায়ই ফেইল করেন।

আমি এ পর্যন্ত বেশ কিছু ছবির রিভিউ লিখেছি। কিন্তু এই প্রথমবারের মতো ছবির গল্প রিভিউ-এ লিখেছি। এ ধরনের স্পয়লার দেয়া খুবই অনুচিত কাজ। কিন্তু এই ছবির গল্প প্রকাশ করার বিশেষ কারন আছে।

আমি যেভাবে ছবির গল্পটা লিখেছি তাতে ছবিটি বেশ ইন্টারেষ্টিং লাগে। তবে এই ইন্টারেষ্টিং গল্পকেই নির্মাতা ছবিতে যেভাবে বলেছেন তা মোটেই ইন্টেরেষ্টিং না। গতানুগতিক, প্রেডিক্টেবল এবং বোরিং স্ক্রিনপ্লে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এই মূহুর্তের সবচেয়ে বড় শত্রু।
কথাটা কেন বললাম ?

কারন আমি তোমার হতে চাই ছবিতে সব আছে যা একটা বানিজ্যিক ছবিতে থাকা চাই। শুধু নেই একটা ইন্টারেষ্টিং স্ক্রিনপ্লে। বাংলাদেশী নির্মাতাদের ধারনা চিত্রনাট্য গতানুগতিক না হলে বাংলাদেশের দর্শক ছবি বুঝতে পারবে না। এই ভ্রান্ত ধারনার কারনেই এ বছরের বেশ কিছু ছবি বেশ সুন্দর ভাবে বানানো হলেও গতানুগতিক, বোরিং চিত্রনাট্যের কারনে ছবি গুলো ফেইল করেছে।

তবে আশার কথা হচ্ছে আমি তোমার হতে চাই সেই ধরনের ছবি হলেও সেই ছবি গুলো থেকে নানা দিক থেকেই ছবিটি তুলনামূলক ইম্প্রুভড্‌। বিশেষ করে অনন্য মামুনের আগের ছবি অস্তিত্বর চেয়ে এই ছবি সব দিক থেকেই অনেক বেশী ইম্প্রুভড্‌।

এই মূহুর্তে বাংলাদেশের বানিজ্যিক ছবির নির্মাতাদের মধ্যে অনন্য মামুনের সার্বিক আয়োজন প্রশংসার যোগ্য। আর অনন্য মামুনের সবচেয়ে সেরা কাজ নিঃসন্দেহে আমি তোমার হতে চাই।

অনন্য মামুনের ছবির গল্প কোন না কোন হিন্দী ছবি থেকে অনুপ্রানিত হয় এটি এখন মোটামুটি সবাই জানে। আমি তোমার হতে চাই এর গল্পও বলিউডের এ বছরের আলোচিত রোমান্টিক ছবি ‘’ সানাম তেরি কাসাম ‘’ থেকে অনুপ্রানিত। তবে এবারের অনুপ্রেরনা একেবারেই নির্দোষ অনুপ্রেরনা। কেননা ছবির গল্পে কিছুটা মিল পাওয়া গেলেও চিত্রনাট্য বা উপস্থাপনায় দুই ছবির সামান্য মিল নেই। ফলে এই অনুপ্রেরনায় আমি সামান্য সমস্যা দেখি না।

ছবিটি যতটা নীট এবং ক্লিন ভাবে তৈরী করা হয়েছে তাতে অনন্য মামুন নির্মাতা হিসেবে যে দিন দিন ইম্প্রুভ করছেন তার স্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায়।

ছবির নায়ক চরিত্রে বাপ্পীর কন্ঠ ব্যাবহার করা হয়নি। এটা নির্মাতার সবচেয়ে বিচক্ষন সিদ্ধান্ত। যে কন্ঠ ব্যাবহার করা হয়েছে তা যথেষ্ট সুন্দর ফলে বাপ্পীকে ছবিতে বেশ ভালোই লেগেছে। শুধুমাত্র গানের মধ্যে তাকে ভালো লাগেনি। অন্য দৃশ্যে সুন্দর কন্ঠের ডাবিং বাপ্পীকেও উপভোগ্য করেছে।
মিম দেখতে এতোটাই সুন্দর যে সে পর্দায় আসলে মনে হয় এই দৃশ্য যেন শেষ না হয়। যূগ যূগ ধরে শুধু তাকেই দেখতে ইচ্ছা করে। তবে মিমকে একই ধরনের চরিত্রে বার বার না দেখানোই ভালো। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে তাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা উচিৎ। মিমের মতো সুন্দর নায়িকা থাকলে ছবিতে আর তেমন কিছুই লাগে না। মিমকে দেখে দর্শক মাত্রই তার প্রেমে পড়তে বাধ্য।

সাঞ্জু জনের তেমন কিছুই করার ছিলো না। দিপালীকে অতি মেকাপে জঘন্য লেগেছে। মিশা সওদাগর গতানুগতিক এবং বোরিং।
তবে কমেডি চরিত্রে পিচ্ছি, একটা দৃশ্যে আয়নাবাজির হলিউড স্টুডিওর পিচ্ছি দর্শকদের হাসিয়েছে। মুসাফিরের কমেডিয়ানকে তেমন কিছু করার সূযোগই দেয়া হয়নি।

ছবির গানগুলো শুনতে যতটা ভালো, দেখতে তার চেয়েও ভালো। এতো সুন্দর লোকেশন বাংলাদেশের ছবির গানে এর আগে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। ইউটিউবে গানগুলো দেখতে তেমন ভালো লাগে না। তবে বড় পর্দায় অসম্ভব সুন্দর লেগেছে। তবে রাখি সাওয়ান্তের আইটেম গানটি জঘন্য ছিলো।

ছবির সিনেমাটোগ্রাফী বানিজ্যিক বাংলা ছবির জন্য বেশ ভালোই হয়েছে। সম্পাদনাও ভালো। তবে একশন ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ভালো হয়নি।

সবমিলিয়ে, আমি তোমার হতে চাই বানিজ্যিক মুভি হিসেবে মোটামুটি ভালো একটি মুভি। অনন্য মামুন বেশ ভালো ভাবেই ছবিটা বানিয়েছেন। বানিজ্যিক ছবির নির্মাতা হিসেবে তার ইম্প্রুভমেন্ট চোখে পড়ার মতো। তবে তাকে আরো অনেক দূর যেতে হবে। বিশেষ করে চিত্রনাট্যকে অনেক বেশী গুরুপ্ত দিতে হবে। একটা ইন্টারেষ্টিং চিত্রনাট্য না হলে ছবির আয়োজন যতই বড় থাক, ছবি দর্শকদের মুগ্ধ করতে পারে না।
সুন্দর লোকেশনে সুন্দর গান, কিছু সুন্দর কমেডি আর আমাদের সৌন্দর্যের দেবী মিম এ ছবির ভালো দিক।

আমি ছবিটিকে ১০ এ ৬ দিবো (৩/৫)

দর্শক রেসপন্সঃ শ্যামলী হলে দুপুরের শো এ ২৫-৩০% দর্শক ছিলো যার বেশীর ভাগই অল্প বয়সী পুরুষ দর্শক। অর্থাৎ ছবিটির বেশীর ভাগ দর্শক ছিলো রেগুলার মাস অডিয়েন্স। দর্শকরা ছবিটি শেষ পর্যন্ত দেখেছে এবং মোটামুটি এনজয় করেছে। দর্শকরা খুব সেটিসফাইড না হলেও, হতাশ হয়নি। বাপ্পীর এংরি ইয়ং লুক, মিমের দুষ্টুমী, পিচ্চি কমেডিয়ানদের কমেডি এবং গানের লোকেশন দর্শকরা এঞ্জয় করেছে।

বক্স অফিস প্রেডিকশনঃ মাস অডিয়েন্স ছবিটিকে যেহেতু মোটামুটি এঞ্জয় করেছে সেহেতু ধারনা করা যায় যে ছবির ওয়ার্ড অফ মাউথও মোটামুটি পজেটিভ হবে। ফলে ছবিটি খুব বেশী ভালো না চললেও একেবারে ফ্লপ যাবে না। যেহেতু আয়নাবাজির পরে আর কোন ভালো ছবি মুক্তি পায়নি সেহেতু এই ফাঁকা মাঠে কিছুটা হলেও ব্যবসা করবে ছবিটা। অন্তত পরবর্তী ভালো ছবি না আসা পর্যন্ত তো অবশ্যই। সুতরাং ছবিটি এভারেজ ব্যবসা করবে বলে মনে হচ্ছে।

রমিজ , ১৬/১২/১৬


Leave a reply