আলফার ওমেগা যাত্রা
সবাই খালি ভালো ভালো বলতেছে (যদিও অদ্যাবধি এইটের কোনো রিভিউ আমি পড়ি নাই। কেবল হেডলাইন পড়েছি।) আমিও খারাপ বলতেছি না। তবে নাসির উদ্দিন ইউসুুফ বাচ্চু ভাইয়ের মাপের মানুষের কাছে, যার আবার সব ধরনের সাপোর্ট আছে, দেশের সব থেকে ভালো ক্রিয়েটিভ টিম তার সঙ্গে সেই জায়গায় প্রত্যাশা একটু বেশিই ছিল। যাইহোক, সরাসরি মূল জায়গায় যাই।
আগেই বইলা নিই ‘আলফা‘র কাহিনি নিয়ে আমার কোনো কথা নাই। কাহিনি ভালো। শুধু কাহিনি কী কারণে দাঁড়াইলো না, নেতাইয়া পড়লো সেই বিষয়ে কতিপয় কথা অপচয় কইরা, বড় বড় দুয়েকটা ঝামেলার কথা বইলাই আমি ওমেগা পয়েন্টে চইলা যাবো। ছোটখাটো অজস্র ঝামেলার কথা না বলি। আর এই সব ঝামেলা অন্যদের চোখে কেন পড়ে নাই সেইটা আমার কাছে অত্যাচার্য বিষয়।
শুরুর ধাক্কাটা খাইলাম তাজিয়া মিছিল আসা কারো একটা ছেলে খোয়া যায়। সেই ছেলে এসে ঝাপ দিয়া যার কাছে পড়ে সে আল্লার মাল মনে কইরা রাইখা দেয়। সেই ছেলেরে তার বাপ-মা কিংবা ওই লোকও আশে পাশে থাকা মসজিদের মাইক, মিছিলের মাইক কোথাও বলে না যে একটা ছেলে হারানো গেছে বা পাওয়া গেছে। অথচ মানুষ এত বেকুব না, মাত্র ধরেন কুড়ি বছর আগের ঘটনা, যেহেতু আলফার যৌবন কালে সে বাসে পেট্রোলবোমা হামলা দেখে টেলিভিশনে।
বস্তির মধ্যে মাথার আনুমানিক ১০/১৫ ফিট ওপরে কী জানি একটা কী ফ্যাশনের বিলবোর্ড টাঙ্গাইতে এর আগে কোথাও দেখি নাই। এইসব জামাকাপড় বিলবোর্ড দেইখা বস্তির লোকজন কেমনে কিনবে মাথায় ঢুকে না আমার।
পুলিশ বলে, ‘জানছি সে কোন ধর্মের, জিনিশ কাটা আছে,মিয়া।’ ডোম বলে, ‘ধর্ম কেমনে জানবে, জিনিশ তো কুত্তা বিলাই খাইয়া গেছে।’ পানির মধ্যে কুত্তা বিলাই কেমনে আসে আর উল্টানো লাশের জিনিশ খেয়ে চলে যায়?
বাস পোড়ে, গার্মেন্টেসে আগুন ধরে শিল্পীর সংবেদনশীল মন কাঁদতেই পারে। (প্রথমে ভাবছিলাম তার গার্লফ্রেন্ড পুইড়া মরলো কিনা)। কিন্তু কান্নার জন্যে মঞ্চ বানাইয়া নিতে হবে কেন। মাটিতে ক্যানভাস বিছাইলো তার উপর রং ছিটাইলো। রঙের উপর গড়াগড়ি কইরা চিৎকার দিয়া কাঁদলো।
স্রোতহীন পানিতে উল্টা লাশ খেয়ালখুশি মতো চলাফেরা করে। পুলিশ আইসা লাশ পায় না। সেই লাশের সঙ্গে আলফা কথা বলে। আমি অনেক চেষ্টা নিসি বাচ্চুভাইয়ের পাশে দাঁড়ানোর, ভাবতেছিলাম আলফা যেহেতু ‘আটিস’ মানুষ তার একটা সংবেদনশীল ভাবুক মন, একটা জংলার মধ্যে প্যারালেল জীবন, Apichatpong Weerasethakul-এর সিনেমার মতো স্রেঁত স্রেঁত করে বিজলি চমকানোর ব্যাপার আছে তাই ভাবতে চাইলাম লাশটা আলফার কল্পনা। কিন্তু সেইটাও হইলো না, ঠিকই পুলিশ লাশ পাইয়া গেল।
শীতকালও নয়, তারপরও তিনচারদিন ধইরা লাশ পঁচতেছে না। লাশের গায়ে কোনো গন্ধ নাই।
এটিএমের শামসুর চরিত্রটা একেবাইরে অদরকারি মনে হয়েছে। যেনো কয়েকটা কথা বলানোর জন্যেই তাকে রাখা। ডিরেক্টর মনে হয় লিস্ট করেছিলেন কী কী মোটাদাগের কথা চিপায়-চাপায় ঢুকাবেন।
সোলায়মানের ঘরের দাওয়ায় আলফা ঘুমায় রাতভর হারিকেন জ্বলে মাটির দেয়ালে টাঙ্গানো। ওই লেবেল থেকে সোলায়মানের মুখে আলো পড়ার কথা না। কারণ হারিকেনের আলো পাশে ছড়াবে নিচে অন্ধকার থাকবে। এইটে বলার কারণ হচ্ছে লাইট সোর্স যদি আপনি দেখাইয়া দেন তাহলে আমাকে সেই সোর্স থেকেই আলো দেখাতে হবে। এইটে সরল হিশেব।
আর কথা না বাড়াই। এইবার ওমেগায় চলে আসি। থানার মর্গ থেকে লাশ চুরি করে সেই লাশ গাধা পিঠে রাইখা গান বাজনা আর মিছিল সহযোগে খোয়াজ খিজিরের কাছে নিয়ে যায়, কিন্তু পুলিশ বিষয়টা কিছুই জানতে পারে না।
এইটা কোন জনরার সিনেমা আমার মাথায় ঢুকে না। একটা সিনেমায় ম্যাজিকবাস্তব, পরাবাস্তব-সহ নানা আপাত অ্যাবসার্ড বিষয় থাকতেই পারে। কিন্তু সেইটের প্রয়োগ যদি ঠিকমতো করা না যায় তাহলে বস্তু দাঁড়ায় না। নিশ্চয় নেতিয় পড়া বস্তু অপেক্ষা টান টান দণ্ডায়মান বস্তু শ্রেয়।
——
*(একটানে লেখার খসড়া। তাই ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। তার জন্যে ক্ষমাও চাই, দোয়াও চাই।)