Select Page

আলোচনার টেবিল না পাওয়া অভিনেতা

আলোচনার টেবিল না পাওয়া অভিনেতা

নাসির খান বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ছবির সুপরিচিত অভিনেতা। তিনি এমন এক অভিনেতা যিনি অনেক ছবি করার পরেও আলোচনার জায়গায় আসেন না। তাঁকে নিয়ে লেখালেখি নিতান্তই কম হয়। কিংবদন্তিদের ভিড়ে তিনি হারিয়ে গিয়েও নিজের বর্ণিল ক্যারিয়ার দিয়ে উজ্জ্বল হয়ে আছেন।

জন্ম ১৯৫৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। বরিশালের অন্তর্গত বর্তমানে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার রাজাপুর গ্রামে। তিনি যেখানে জন্মেছেন তাঁর সম্মানে জায়গাটিকে বলা হয় ‘নাসির খানের গলি।’ পড়াশোনা জগন্নাথ কলেজে হিশাববিজ্ঞানে এম কম। জগন্নাথ কলেজের ছাত্র সংসদের কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন।

মঞ্চে কাজ করেছেন তারপর চলচ্চিত্রে আসেন। মঞ্চে অভিনয়ের কারণেই পেশাদার অভিনয়টা জানতেন। প্রথম ছবি ‘চোর’ মুক্তি পায় ১৯৮৫ সালে। উল্লখযোগ্য ছবি : বিক্ষোভ, অন্তরে অন্তরে, দেন মোহর, মায়ের অধিকার, স্বপ্নের নায়ক, এই ঘর এই সংসার, সাক্ষাৎ, দুনিয়ার বাদশা, আকর্ষণ, গরিবের রাণী, রাক্ষস, মাস্তান, গ্রেফতার, সাক্ষাৎ, নিষ্ঠুর, চিরদিনের সাথী, ক্ষুধা, স্ত্রী হত্যা, শাস্তির বদলে শাস্তি, রূপসী রাজকন্যা, মিথ্যা অহংকার, হাঙর নদী গ্রেনেড, ভালোবাসার ঘর, অনুতপ্ত, পাগল মন, বালিকা হলো বধূ, নরপিশাচ, চিরশত্রু, সুপারম্যান, বেদের মেয়ে জোসনা, যোদ্ধা, পালাবি কোথায়, সাক্ষী প্রমাণ, লঙ্কাকান্ড, জোর, মুন্না মাস্তান, বেনাম বাদশা, বেঈমানী, মনের সাথে যুদ্ধ, শঙ্খমালা, সন্ত্রাসী মুন্না, আলিফ লায়লা, সিদ্ধান্ত, শবনম, জীবন এক সংঘর্ষ, টোকাইর হাতে অস্ত্র কেন, আজকের সমাজ, ভাইয়ের শত্রু ভাই, ছোট্ট একটু ভালোবাসা, জামাই শ্বশুর, ভাইয়া, যত প্রেম তত জ্বালা, বোমা হামলা, বিগবস, দাপট, উল্টাপাল্টা ৬৯, মিলন, লাল দরিয়া ইত্যাদি।

নাসির খানের অভিনয়ের স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল তবে ভেরিয়েশন কম। ডায়লগ ডেলিভারি একইভাবে দিতেন। তবে তাঁর ভরাট কণ্ঠের কারণে ডায়লগ ডেলিভারি দর্শককে আনন্দ দিত।

নাসির খান প্রধানত খলনায়ক। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ছবিতে খলনায়কদের কথা বললে তিনি অবধারিতভাবে আসবেন। অনেক ছবিতে খলনায়কের অভিনয় করেছেন। মূল খলনায়কের সহকারী ছিলেন সবচেয়ে বেশি। নিজে মূল খলনায়কের অভিনয় করেছেন এরকম কিছু ছবি – বালিকা হলো বধূ, পাগল মন, মায়ের অধিকার। খলনায়ক হিশেবে ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ ছবিতে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের চরিত্রে ছিলেন। সুচরিতার মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। গ্রামের মানুষ তাঁর ভয়ে তটস্থ থাকত। ‘ক্ষুধা’ ও ‘সাক্ষী প্রমাণ’ ছবিতে খুব স্টাইলিশ খলনায়ক ছিলেন। ভয়ঙ্কর পেশাদার খুনির চরিত্রে ছিলেন ‘বেনাম বাদশা’ ছবিতে।

তাঁর খলনায়কের চরিত্রে জনপ্রিয় সংলাপের মধ্যে আছে :

মুরুব্বিরা যা বলে বুদ্ধিমানরা সেমতোই চলে – এই ঘর এই সংসার
আমার নীতি আছে কিন্তু ঈমান নাই – বিক্ষোভ
আমার দুঃখ আছে কিন্তু কষ্ট নাই – স্বপ্নের নায়ক
কথা কম কাজ বেশি মানুষরে আমি বড় ভালোবাসি – ক্ষুধা
মামা বলত ভাগ্নে বেশি লোভ করিসনে – সাক্ষাৎ
আইল দেইখা পইড়া যাই সড়ক দিয়া হাঁইটা যাই – দুনিয়ার বাদশা
বিশেষণ লাগাতে হবে – রাক্ষস

পজেটিভ চরিত্রে খুব কম অভিনয় করেছেন। পজেটিভ চরিত্রে একটি ছবি – ছোট্ট একটু ভালোবাসা।

তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন সর্বাধিক ভোটে। ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়।

নাসির খান তাঁর সময়ে রাজত্ব করা একজন অভিনেতা। তিনি হুমায়ুন ফরীদি, রাজিব, এটিএম শামসুজ্জামান, আহমেদ শরীফ-দের মতো বাঘা বাঘা খলনায়কদের ছবিতেও নিজের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতেন নিজের মতো করে। নিজের বর্ণিল ক্যারিয়ার গড়েছেন পরিশ্রম করেই। তাঁকে নিয়ে আলোচনার টেবিলে শোরগোল যেন বন্ধ না হয়।


Leave a reply