Select Page

আশিকীঃ একটি কমার্শিয়াল প্যাকেজ

আশিকীঃ একটি কমার্শিয়াল প্যাকেজ

Ashiqi (2)

আশিকী’ যৌথ প্রযোজনার নাকি যৌথ প্রতারণার, আপাতত সে বিতর্কে যাচ্ছিনা। আর তেলেগু মুভি ‘ইশক’ কিংবা বাপ্পি-মিষ্টি’র ‘লাভ স্টেশন’ও দেখা হয়নি। জাজের ‘আশিকী’তে যা দেখলাম সেটাই কিঞ্চিত আলোচনা করতে চাই। হলভর্তি দর্শকের আনাগোনা। এর আগে অঙ্কুশের ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’, ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ও দেখেছি। কিন্তু এত দর্শক চোখে পড়েনি। বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশে অঙ্কুশ দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।

কাজের কথায় আসি, লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া দুই বাঙালি ছেলে-মেয়েকে ঘিরে ছবির কাহিনী গড়ে ওঠেছে। রাহুল ও শ্রুতি। শ্রুতিকে পেছন থেকে দেখেই রাহুলের পছন্দ হয়ে যায়। শ্রুতিও কম যান না, তিনিও এককথায় ফিদা!

‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ ছবিতে দেখা যায় শাহরুখ-কাজল প্রথম মুখোমুখি হয় ট্রেনে। জাজের আশিকীতেও রাহুল-শ্রুতি প্রথম মুখোমুখি হয় ট্রেনে, প্রায় একই স্টাইলে। ছবি মুক্তির আগে থেকেই টিজার/ট্রেলার দেখে বিষয়টা আমরা কমবেশ আঁচ করতে পেরেছি। সে যাই হোক। পরস্পরে খুনসুটি, কিছু মজাদার চিত্রনাট্যের পর প্রেম। এরপর কাহিনী মোড় নেয় অন্যদিকে। গতানুগতিক বাংলা ছবির মতোই, তাদের মিল হওয়া অসম্ভব। অনেক ধানাই পানাই শেষে তাদের সম্পর্ক হ্যাপি এন্ডিংয়ের দিকে এগিয়ে যায়, এরপর ছবি শেষ।

কাহিনীবিন্যাসে নতুনত্বের ছোঁয়া আছে। পরিচালকদ্বয় কোথাও গোঁজামিল দেয়ার চেষ্টা করেনি। অঙ্কুশ ফারিয়ার রসায়নটা বেশ উপভোগ্য ছিল। চিত্রনাট্য, সংলাপ স্ট্রং ছিল। অংঙ্কুশ বরাবরই ভালো করেছে। এক্সপ্রেশনও ন্যাচারাল ছিল। তবে, মাঝে মাঝে কিছুটা মেকি মেকি ভাবও মনে হচ্ছিল। আর নবাগত নুসরাত ফারিয়ার থেকে প্রত্যাশাটা একটু বেশিই ছিল। মোটামুটিভাবে উৎরে গেছে। নতুন বলে হয়তো পাশ মার্কও পেয়ে যাবেন। এক্সপ্রেশনে আরও স্বাভাবিক হতে পারতো। সংলাপ ডেলিভারীতে নুসরাত ফারিয়া একদমই দুর্বল, যা খুবই হতাশাজনক। পর্দায় মৌসুমির উপস্থিতি বেশি না হলেও চরিত্রটি বেশ গুরত্বপূর্ণ ছিল। চাইলে আরো কিছুটা বাড়ানো যেত।

এ ছবির প্রধান আকর্ষণীয় দিক হলো ঝকঝকে মনোমুগ্ধকর ফরেন লোকেশন। স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ডে চিত্রায়িত গানগুলোর চিত্রায়ন অসম্ভব ভালো ছিল। চোখকে কিছুটা আরাম দেয়। তবে, অঙ্কুশের আগের ছবির তুলনায় এ ছবির গানগুলো বেশি শ্রুতিমধুর ছিল না। ‘বৃষ্টিভেজা’ আর ‘আশিকী’র টাইটেল সঙটা মোটামুটি। গানের কথাগুলোও বেশি ভালো ছিল না। ড্যান্সে অঙ্কুশ বরাবরই একধাপ এগিয়ে, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আনাড়ি হিসেবে নুসরাত ফারিয়া মোটামুটি চলনসই।

সাধারণ কমার্শিয়াল মুভি হিসেবে ধরলে ছবির নির্মাণশৈলীটা দুর্দান্ত। কোরিওগ্রাফ, কস্টিউম, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস, সিনেমাটোগ্রাফসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিচালক দু’জন বেশ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।

একটা কমার্শিয়াল ছবিতে যা যা দরকার নাচ, গান, ফরেন লোকেশন, কমেডি, অ্যাকশন সবই আছে। এত কিছুর মাঝেও কিছু বিরক্তিকর বিষয় ছিল। যেমন, অত্যাধিক ইংরেজি, হিন্দি সংলাপের ব্যাবহার। তবে, কলকাতার কিছু থার্ড ক্লাস কমেডি থাকলেও দশর্ক ভালোই উপভোগ করেছে। মুহূর্মুহূ করতালি আর উল্লাসে অন্তত তাই বোঝা যায়। সাথে কিছু অ্যাকশন, সাধারণ বাংলা ছবি থেকে শতগুনে ভালো ছিল।

সর্বশেষ একটা কথা বলতে পারি, সাধারণ দর্শককে দুই/আড়াই ঘন্টা হলে বসিয়ে রাখার মতো আশিকী একটি মসলাদার কমার্শিয়াল প্যাকেজ।
ছবি শেষে হল থেকে বেরুনোর সময় কিছু দর্শককে সমস্বরে ‘তোর আশিকী… পাগল করেছে আমায়’ জোরে জোরে গাইতে দেখলাম। মনে মনে বুঝে নিলাম, তৃপ্তির ঢেকুর তোলছে!


Leave a reply