আসলেই কি সিনেমা হলের নাম করে রাজ্জাক মার্কেট বানিয়েছেন? উত্তর দিলেন বাপ্পা
শনিবার বিএফডিসিতে নায়করাজ রাজ্জাকের স্মরণে শোকসভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার। এ স্মরণসভায় কিংবদন্তি এ অভিনেতার ছেলে বাপ্পারাজ কথা বলতে গিয়ে বেশ কবারই বাষ্পরুদ্ধ হলেন। আবেগে কাঁদলেন। কখনো কখনো আবেগের সঙ্গে মিশে থাকল ক্ষোভও।
কিছুদিন আগে এফডিসিতে ঘটে এক অপ্রীতিকর ঘটনা। যার সূত্রপাত পরিচালক বদিউল আলম খোকনের মন্তব্য ঘিরে। তিনি বলেছিলেন, সিনেমা হল করার কথা দিয়ে রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স নির্মাণের অনুমতি পান রাজ্জাক। কিন্তু এ নায়ক তা করেননি। পরে অবশ্য বিষয়টি মিটমাটের জন্য রাজ্জাকের বাড়ি যান পরিচালক সমিতির নেতারা।
শনিবার বাপ্পারাজ বললেন, উত্তরায় রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণার কথা, ‘একটা ভুল ধারণা আছে যে, উনি সিনেমা হলের নাম করে মার্কেট করেছেন। অনুমতিটা সিনেমা হলের নাম করে নিয়েছেন। না, মার্কেটের কথা বলেই অনুমতি নেওয়া। মার্কেটটা ওখানে মার্কেট হিসেবেই তৈরি করা হয়েছিল। পরে আমরা সিনেমা হল করার চেষ্টা করেছিলাম, রাজউক থেকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
এ ক্ষেত্রে মার্কেটটির নকশাও একটা বাধা ছিল বলে জানালেন বাপ্পারাজ, ‘ওই ভবনটায় অনেক পিলার ছিল। সেটা ভেঙে জায়গা বের করে সিনেমা হল করার কোনো উপায় ছিল না। করা হয়নি। পরে ওপরে সিনেমা হল করার চেষ্টা করেছিলাম, তখনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিছুদিন আগেও ওখানে বিসিকের একটা অডিটোরিয়াম ছিল, ওটাও আমরা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম সিনেমা হল করার জন্য। উত্তরার একটি স্কুলের পাশে হওয়া সেটাও করা যায়নি। এই হলো ঘটনা।’
বাপ্পারাজ বলেন, ‘এটা নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা আছে, আমি পরিষ্কার করে দিলাম। রাজ্জাক সাহেব দুই নম্বরি করে মার্কেট বানাননি, রাজ্জাক সাহেব সৎ থেকে মার্কেট বানিয়েছেন। রাজ্জাক সাহেব যদি দুই নম্বরি করে বানাতেন, তাহলে উত্তরায় আরও চার-পাঁচটা মার্কেট থাকত। করেননি।’
সৎ থাকার কারণে নিজেদের বাড়ির একটা অংশ বিক্রি করে দিতে হয়েছিল জানিয়ে বাপ্পারাজ বলেন, ‘আমাদের এত বড় একটা বাড়ি ছিল, ব্যবসায় ক্ষতি করার পরে ব্যাংকের মাত্র চার কোটি টাকা ঋণ ছিল। লাখ লাখ, কোটি কোটি টাকা মানুষ মেরে দেয়, আবুল-করিম-গফুররা এমন করে, কোনো কথা ওঠে না কখনো। কিন্তু রাজ্জাক সাহেবের নামে আসবে, রাজ্জাক সাহেব চার কোটি টাকা মেরে দিয়েছেন, ব্যাংকে ডিফল্টার। আমরা আমাদের বাড়ি বিক্রি করে লোন শোধ করে দিয়েছি। আমরা অসৎ হলে মেরে দিতে পারতাম ওই টাকা। আরও বাড়ি করতে পারতাম, ডেভেলপার দিয়ে ফ্ল্যাট বানাতাম। এই ফ্ল্যাটগুলো কিন্তু আমাদের না, সেগুলো আমরা বিক্রি করে দিয়েছি। ওখানে আমাদের কোনো ফ্ল্যাট নেই।’
শোকসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সুচন্দা, সুজাতা, রোজিনা, আলমগীর, ফেরদৌস, নূতন, ওমর সানী, মিশা সওদাগর, সম্রাট, আমজাদ হোসেন, এফডিসির এমডি তপন কুমার, শাহনূর, চম্পা, জায়েদ খান, বাপ্পী, প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার আহমেদ নওশাদ, প্রযোজক খসরু প্রমুখ। তবে আসেননি শাকিব খান।
গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন বাংলা চলচ্চিত্রের এ কিংবদন্তি অভিনেতা।
দুই দফা জানাজা শেষে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নায়করাজ রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪২ সালে কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় আসেন তিনি। এরপর জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্রের সঙ্গে। প্রথমে দু’একটা সিনেমায় ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করার পর ৬৭ সালে মুক্তি পায় নায়ক হিসেবে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘বেহুলা’। সেই থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার জনপ্রিয়তায় এতটুকুও ভাটা পড়েনি কখনো।
সূত্র : প্রথম আলো