Select Page

আসিফের ‘নকল গান’ শুনে মৌলিক গানের প্রস্তাব, এরপর ইতিহাস

আসিফের ‘নকল গান’ শুনে মৌলিক গানের প্রস্তাব, এরপর ইতিহাস

সিনেমার জন্য নকল গান রেকর্ড করছিলেন আসিফ আকবর। আর বারান্দায় বসে তার ভরাট কণ্ঠ শুনে চমকে যান সংগীত পরিচালক ইথুন বাবু, যিনি নিজেও তখন নকল গান করে জনপ্রিয়। তিনি আসিফকে প্রস্তাব দেন মৌলিক গানের অ্যালবামের। ঝুঁকি নিয়ে করা সেই ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ বাংলাদেশের গানের ইতিহাসে অন্যতম হিট অ্যালবাম।

ইথুন বাবু ও আসিফ আকবর

২০০২ সালের ৩০ জানুয়ারি অ্যালবামটি রিলিজ হয়। দুই দশক পূর্তিতে সেই ঘটনা শেয়ার করা হয় আসিফ আকবরের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে।

সেখান বলা হয়, ১৯৯৯ সালের শেষ দিকের ঘটনা। ‘ক্ষ্যাপা বাসু’ মুভির গান রেকর্ড হয়েছে। সেটাই বাজছিল স্টুডিও সাসটেইনে। ‘জ্বালারে, জ্বালা বড় জ্বালা’ এই জাতীয় কথাগুলো বসিয়ে দেয়া হয়েছে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব এ আর রহমানের ‘দিল সে’ গানের সুরের ওপর, হুবহু। বাংলাদেশের যে সঙ্গীত পরিচালক কাজটি করেছেন, তিনিও স্বনামধন্য— আলী আকরাম শুভ। গানের কথা লিখেছেন ছবিরই পরিচালক কমল সরকার।

স্টুডিওর বাইরে বারান্দায় বসে সিগারেট খাচ্ছিলেন আরেক সঙ্গীত পরিচালক ইথুন বাবু। হিন্দী, উর্দু জনপ্রিয় গানের বাংলা ভার্সন (রিমেক) করে তিনি ইতিমধ্যেই রিমেকারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। প্রায় ছয়ফুট উচ্চতার ইথুন বাবু চেয়ারে বসে বারান্দার গ্রীলের ফাঁকে পা তুলে সিগারেট খাচ্ছিলেন। স্টুডিও থেকে ‘জ্বালারে…’ শুনে তিনি পা নামালেন। কান খাড়া করলেন। মনে মনে ভাবলেন— এই কণ্ঠটা দরকার। ভীষণ দরকার। খোঁজ নিলেন ইথুন বাবু। আসিফ নামের এক ছেলে এই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ডাকলেন আসিফকে। লিকলিকে গড়নের একেবারেই সাদামাটা চেহারার একটা ছেলে। এতোই সাদামাটা যে, ইথুন বাবু খানিক অবাক হলেন।

এই শরীর থেকে এমন ভরাট কণ্ঠ! বিশেষ ভনিতা না করে ইথুন বাবু জানালেন, আসিফকে নিয়ে একটা অ্যালবাম করতে চান। মৌলিক গানের অ্যালবাম।

আসিফের হাতে কোনো অপশন ছিল না। অল্প বয়সে বিয়ে-শাদী করে বিরাট দায়িত্বের বোঝা তার কাঁধে। বাবাও হয়ে গেছেন এর মধ্যে। তা ছাড়া টুকটাক শো করে, কিংবা সাউন্ডের বিজনেস করে যেভাবে জীবন যাপন করছিলেন, তা বন্ধ হয়ে গেছে আরেক সঙ্গীত পরিচালক শওকত আলী ইমনের এক ‘অবরোধ’-এ। এই গুণী মিউজিক ডিরেক্টর ‘বিশেষ কারণে’ তার পরিচিত-অপরিচিত সব জয়গায় ‘আসিফ ঠেকাও’ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

বউ-বাচ্চা নিয়ে তখন আসিফ এই ঢাকাতে অনেকটা অসহায় দিন যাপন করছেন।

ঠিক ওই মুহূর্তে ইথুন বাবুর অফার তার কাছে মরুভূমির মধ্যে এক পশলা বৃষ্টির মতো মনে হলো। শুরু হলো ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ অ্যালবামের কাজ। বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসে একটা নতুন অধ্যায়েরও শুরু হলো সেদিন। নানান চড়াই-উৎরাই আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা পেরিয়ে ২০০১ সালের ৩০ জানুয়ারি দেশব্যাপী রিলিজ হলো ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’। তারপরের গল্প তো সবার জানা।


Leave a reply