আয়নাবাজি : লাগ ভেলকি
(৯৯.৯৯% স্পয়লার ফ্রি)
যাদের কাছে আর্ট ফিল্ম বোরিং অথবা কমার্শিয়াল ফিল্ম নাক সিঁটকানোর জিনিস তাদের মতো জাতিসংঘবাদী মনোভাবের মানুষদের পছন্দের মিডেল ট্র্যাক ফিল্ম ‘আয়নাবাজি’।
অভিনয় : চঞ্চল চৌধুরী দশে পাবেন… না থাক! ওই স্কেলে মাপা কষ্টের। রণবীর কাপুরের ‘বরফি’ দেখার পর মনে হয়েছিল ও এটা কেমনে পারল। আর এখন চঞ্চল নিজেকে নিজে অনুকরণ করলেন!
পার্থ বড়ুয়ার ক্যারেক্টারের গুরুত্ব থাকলেও মনে হল তিনি দেখানোর সুযোগ কম পেয়েছেন। তবে তিনি সাবলীল ছিলেন। লুৎফর রহমান জর্জ,বৃন্দাবন দাস-সহ প্রত্যেকেই অসাধারণ।
সবশেষে নাবিলা। তিনি অমিতাভের আবিস্কার। প্রথম অভিনয় হিসেবে ইমপ্রেসিভ। তবে বাজারে শাক কেনার সময় ক্যাটরিনা হওয়ার চেষ্টা করার চিরাচরিত বাংলা ছবির নায়িকাদের রোগ থেকে বুঝি ডিরেক্টর উনাকে বের করতে পারলেন না?
ওহ! একজন কমার্শিয়াল স্টারের আবির্ভাব থাকলেও সেটাকে চমক থাকতে দেয়নি প্রথম আলো। তবে আমার মনে হয়েছে এটা গুরুদক্ষিণা (ইজ ইক্যুয়াল টু ফ্যাক্ট)।
তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার সেরা লেগেছে জনৈক রাজনীতিবিদ সাঈদ নিজাম চৌধুরীর অভিনয়।
কাহিনী ও চিত্রনাট্য : প্রযোজক গাউসুল আলম শাওনের মাথা থেকে এসব কী বের হল! পুরোই দুর্দান্ত আনপ্রেডিক্টেবল ডায়ালগ উইথ হিউমার। লোকটা জিনিয়াস।
সিনেমাটোগ্রাফি : একদম আলাদা লেভেলের। ‘চোরাবালি’তে খায়ের খন্দকারের কাজ করার পর কেউ একজন পত্রিকায় বলেছিল যে বিজ্ঞাপনে আমাদের দক্ষ সিনেমাটোগ্রাফার আছে কিন্তু তারা এই অল্প পয়সার জন্য চকচকে বিজ্ঞাপনী দুনিয়া থেকে ফিল্মে কাজ করতে চায় না। এই ছবির জন্য রাশেদ জামান কত পেয়েছে জানিনা, তবে ওই কথাটার প্রমাণ পেলাম। রিয়েলি ট্যালেন্ট। একটা এরিয়াল শট ছাড়া আর প্রত্যেকটা সিনই আমার দুর্দান্ত লেগেছে। হি ইজ রিয়েলি আ জিনিয়াস ওয়ান।
সঙ্গীত : ছবির গানে হাবিব ওয়াহিদ, ফুয়াদ আল মুক্তাদির, অর্ণব ও চিরকুট। ব্যাকগ্রাউন্ডে ইন্দ্রদীপ ওরফে ভূতো। কিছু বলা লাগে?
লোকেশন : বারবার পুরনো ঢাকা, হাতিরঝিল ও ১০০ ফিটে দৌড়াদৌড়ি করলেও মাঝের ঢাকাকে ভালোই দেখানো হয়েছে। এই শহর আমার!
ছবির পোস্ট প্রোডাকশন আর টেকনিক্যাল কাজগুলো ভারতে করা, এডিট এফএক্স স্টুডিও। ইভেন মেকআপ আর্টিস্টও ইন্ডিয়ান। আর্ট ডিরেকশন একবাক্য অন্য লেভেলের।
অমিতাভ রেজা : মিস্টার অমিতাভ রেজা এতোদিন বিজ্ঞাপনের জগতে কাবাডি খেলার পর পুরো অভিজ্ঞতা ঢেলে দিয়ে বানানো ছবি ‘আয়নাবাজি’। ‘মনপুরা’র পর আরেকটা ছবি যেটা দর্শক আর ক্রিটিকদের কাছে সমান কদর পাবে। আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্যণীয় গত বছরের ‘ছুঁয়ে দিলে মন’র পর আবারো ছোটপর্দা থেকে আসা কোনো ডিরেক্টরের ছবি এতোটা হাইপ তৈরি করতে পেরেছে। মার্কেটিং উনি দারুণ বুঝেন।
এটেনশন প্লিজ
চুম্বন দৃশ্য : হ্যাঁ, বিহাইন্ড দা সিনের পর এই ব্যাপারটি আলাদা একটা প্যারা পাওয়ার অধিকার রাখে। আলোচনা-সমালোচনা- প্রচারণা সবই হয়েছে সমান তালে। চঞ্চল বলেছিলেন উনি চিন্তিত ছবি দেখে দর্শক কী ভাববে। এখন উনি দর্শকদের কাছ থেকে এটা জানতে চাইলে ভালো হয়— ছবি দেখার পর দর্শক এই বিহাইন্ড দা সিন বানানো নিয়ে কি ভাবছে!
একটা প্রশ্ন ছিল : আলুপুরিওয়ালা কি আয়নার সব আগে থেকেই জানত?
পুনশ্চ ১ : আয়নার দ্বিতীয়বার জাহাজ ভ্রমণের সময় চুল ছোট ছিল। কিন্তু জাহাজ যাত্রা শেষে গোসলের সময় চুল বড় হয়ে গেল কিভাবে?
পুনশ্চ ২ : কাল মার্কস, লেনিন নিয়ে কচলানো হল। অমিতাভ রেজার পলিটিক্যাল আইডিওলজি জানি না। তবে আমার আইডিওলজিতে দুটো লাইন মারাত্মক খোঁচা দিয়েছে।
প্রশ্ন : কনডেম সেলে (ফাঁসির আসামিদের রাখা সেল) কি তালা দেওয়া হয় না বা দেওয়া হলেও কারো কাছে দাম না পাওয়া সাধারণ পুলিশের কাছে চাবি থাকে কি?
সবশেষে হালকা স্পয়লার : দীর্ঘদিন ক্যামেরার পেছনে কাজ করে ও অনেক পরিচালকের কাছে অনুরোধ করেও ক্যামেরার সামনে কাজ করা ভাগ্যে জোটেনি অমিতাভ রেজার। তবে এবার ‘আয়নাবাজি’র পরিচালক অমিতাভ রেজা ঐ জনৈক অমিতাভ রেজাকে প্রথমবারের মতো অভিনয় করার সুযোগ দিলেন।