Select Page

ঈদুল আজহা ২০২১: প্রিয় দশ নাটক

ঈদুল আজহা ২০২১: প্রিয় দশ নাটক

করোনায় বন্দী সময়ে আরেকটি ঈদ। বেড়ানো বা ঘোরাঘুরি ততটা ছিল না এবারও। বিনোদনের জন্য বড়পর্দাও অনুপস্থিত। তাই নাটক-টেলিফিল্মের দিকে মনোযোগ ছিল দর্শকের। সেখান থেকে প্রিয় দশ নাটকের কথা জেনে নিন—

১. চিরকাল আজ: অ্যামনেশিয়া নামক বিরল রোগে আক্রান্ত এক মেয়ের গল্প নিয়ে এই নাটক, যার জন্য প্রেমিক, বাবা ও মায়ের জীবন দুর্বিষহ, যার জন্য নেমে আসে কালো ছায়া।

প্রথমত ভিকি জাহেদের এই গল্পটা দারুণ, সঙ্গে মেহজাবীন সম্ভবত এই নাটক দিয়েই নিঃসন্দেহে ঈদের সেরা অভিনেত্রী হয়ে যেতে পারেন, ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অভিনয়। আফরান নিশো যোগ্য সঙ্গ দিয়ে গেছেন, সাবেরী আলম নজর কেড়েছেন। আরো আছেন সৈয়দ নাজমুস সাকিব ও কায়েস চৌধুরী।

বিদ্রোহী দীপনের সিনেমাটাওগ্রাফি, ভিকি জাহেদের নির্মাণ সব মিলিয়ে দারুণ কাজ হিসেবে রয়ে রইলো।

২. পুনর্জন্ম: এই ঈদে ভিকি জাহেদ যেন নিজেকেই ছাড়িয়ে গিয়েছেন। দুর্দান্ত লেগেছে এই নাটক, নির্মাণ ও চিত্রনাট্যে ছিল মুন্সিয়ানা। থ্রিলার ধারার এই নাটকের গল্প তোলা থাক, শুরু থেকেই মেহজাবীনের অভিনয় ছিল চোখে পড়ার মত, তবে শেষে ছক্কা হাঁকিয়েছেন আফরান নিশো। টুইস্টটা অবশ্য বোঝা যায়, তবে তিনি ঘটনা সামলিয়েছেন সেটার জন্য বাহবা দিতেই হয়। এই ঈদের অন্যতম সেরা কাজ।

৩. যদি কোনোদিন: বহুদিন পর দুইজনের দেখা, তবে এই দেখা অনাকাঙ্ক্ষিত। ডা. সানিয়াত হোসেন আর দীনার এক সময় প্রেম ছিল, সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু একটি মৃত্যু ও ভুল বোঝাবুঝিতে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। আবার তাদের দেখা, হাসপাতালে। আবার সানিয়াতের কাছে বিনার কাছের মানুষের সুস্থ করার দায়িত্ব, কিন্তু বীনা! সানিয়াতেরই বা মনে কেমন ঝড় চলছে? মূলত গল্পটা প্রাক্তনের সঙ্গে আবার দেখা হবার হলেও এসেছে স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসা খাতে দুর্নীতির কথাও। 

মিজানুর রহমান আরিয়ানের ছিমছাম চিত্রনাট্য আর সুন্দর নির্মাণে এই নাটকটিও উপভোগ্য। অপূর্বের অভিনয়ের আভিজাত্য এই চরিত্রে বেশ কাজ দিয়েছে, মুখে কোনো সংলাপ নেই, শুধুমাত্র অভিব্যক্তিতে অনুভূতি আদায় করে নিয়েছেন। মেহজাবীনও বেশ ভালো। দুজনেই নীরব অভিব্যক্তিতে দারুণ করেছেন। শেষটাও দারুণ লেগেছে, চিরাচরিত পথে হাঁটেননি। অয়ন চাকলাদের কণ্ঠে ‘বহুকাল’ মুগ্ধতা বাড়ায়।

৪. আপন: বাবা ও ছেলের গল্প। বাবাকে ছেলে বেশ মান্য করে। প্রেমিকাকে বিয়ে করার কথা বাবাকে বলতে পারেন না, এক সময় বিপত্নীক বাবা নিজেই নিজের বিয়ের কথা বলেন, গল্পের মোড় ঘুরে যায়।

কাজল আরেফিন অমির এই টেলিফিল্ম বেশ ভালো লেগেছে, আরো ভালো লেগেছে শেষটা সুন্দরভাবে করার জন্য। যদিও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পিরান খানের গানের কণ্ঠ খুব কানে লেগেছে। আফরান নিশো দারুণ, তাকে এমন চরিত্রেই বেশি ভালো লাগে, তারিক আনাম খান ও মনিরা মিঠু ও বেশ ভালো, তাসনিয়া ফারিন অবশ্য গুরুত্ব পেয়েছেন কম। আরো আছেন শামীমা নাজনীন ও জিয়াউল হক পলাশ।

৫. পারাপার: করোনার সময় চাকরি হারানো একবারে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। মনোজ প্রামানিক চাকরি হারিয়ে অভাব নিত্য সঙ্গী, বাসায় এসে স্ত্রী সাবিলা নূরের সঙ্গে মেজাজ খারাপ দেখায়। দিন দিন অবস্থা আরো খারাপ দেখে উপায়ন্তর না পেয়ে তাহসানের বাসায় পরিচারিকা হিসেবে কাজ করা শুরু করেন সাবিলা নূর। তাহসান বাসায় একাই থাকে, এটা জানতো না মনোজ প্রামানিক। শেষে ঘটনা মোড় দেয় অন্যদিকে। শেষে ফুটে উঠেছে এই সমাজেরই একটা খারাপ চিত্র।

রাফাত মজুমদার রিংকুর নির্মাণে নাটকটা ভালো লাগলো। তাহসান নিজের মত করেই অভিনয় করেছে, সাবিলা নূরের উন্নতি প্রশংসনীয়, গল্পটা তারই লেখা। তবে অভিনয়ে বাজিমাৎ করেছেন মনোজ প্রামাণিক।

৬. যত্ন: এক নবদম্পতির গল্প। পছন্দ করে নয়, পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে। লকডাউনের কারণে তাদের হানিমুনে যাওয়া হয়নি, তাই বাসায় শুরু হয় হানিমুন ফ্রম হোম। একে অপরকে জানা, নতুন কিছু জানা, ভালোবাসা থেকে খুনসুঁটি, মান-অভিমান সব ই এসেছে এই গল্পে।

কিছু নাটক দেখলে ভালো লাগা অনুভব হয়,এটা তেমনই একটা নাটক। সোহাইল রহমানের গল্পে মিজানুর রহমান আরিয়ানের পরিচালনায় এই নাটকে বড় প্রাপ্তি খায়রুল বাসার-সাফা কবিরের রসায়ন। নব দম্পতির চরিত্রে দুজনই ভালো করেছেন। মেনন খানের আবহ সংগীত, তাহসিনের গান তৃপ্তি দেয়। পুরো নাটক এক বাসাতেই করা, যার চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন রাজু রাজ।

৭. শোকসভা: মৃত্যুর পর শোকসভায় এসে পরিচিত মানুষরা এসে মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে স্মৃতিচারণ করে, অথচ তাদের কারো কারো কারণে জীবিত থাকতে অনেক কষ্ট পেয়েছে, প্রতারণার শিকার হয়েছে। কেমন হয় ঐ মৃত মানুষের আত্মা যদি উপস্থিত হয় শোকসভায়!

এমনই গল্প নিয়ে এই ঈদে সঞ্জয় সমদ্দারের একমাত্র নাটক ‘শোকসভা’। গীতিকবি সোমেশ্বর অলির কবিতার অনুপ্রেরণায় নাটকটির রচয়িতা ইশতিয়াক অয়ন। নাটকের গল্প অবশ্যই অন্যান্য সাধারণ নাটকের গল্পের চেয়ে আলাদা, অন্যরকম জীবনবোধ দেখায়। নির্মাণ আরো ভালো হতে পারতো, তবে চিত্রনাট্য সাজানো। সংলাপ বেশ অর্থবহ।

অভিনয়ের কথা বলতে গেলে অপূর্ব ভালো করেছেন বেশ, তাসনিয়া ফারিনের চরিত্র বেশ বাস্তবিক, সেও দারুণ করেছে। তবে সব ছাপিয়ে গেছে মনিরা মিঠুর স্বল্প উপস্থিতি। সন্তানহারা মায়ের ভূমিকায় নীরব অভিব্যক্তিতে যে অভিনয়ের প্রতিভা দেখিয়েছেন তাতে তিনি পুরস্কার প্রাপ্য। রাশেদ মামুন অপুও নজর কেড়েছে, অপূর্বের গলায় গানটাও শুনতে ভালো লাগে।

৮. বাবা তোমাকে ভালোবাসি: তিন বন্ধুর গল্প। পৌঢ় এই তিন বন্ধু ৫০ বছর পর একই জায়গায় দেখা নিয়ে এই নাটকের গল্প, আছে তাদের সন্তান। ভালোবাসা-অভিমান নিয়ে প্রবীর রায় চৌধুরীর এই নাটক। এই নাটকে আবুল হায়াত, মামুনুর রশীদ ও ফজলুর রহমান বাবুর অভিনয় আগে থেকেই আলোচনায় ছিল, সঙ্গে জোভান, ফারিণ ও অথৈ। 

মাহতিম সাকিবের গানটা ভালো লেগেছে। তবে মনে হলো গল্পটা আরো বড় পরিসরে করার জন্য অন্তত টেলিফিল্ম করলে ভালো হত।

৯. নিকষিত: বাবা-ছেলের গল্প, তাদের আদর্শ মেনে চলার গল্প। যার কারণে তাদের আর্থিক অনটন লেগেই থাকে, সুখ সহজে ধরা দেয় না। তবুও তাদের আত্মতৃপ্তি অনেক। সাইফুদ্দিন শাকিলের সরল গল্পে মামুনুর রশিদ তানিমের চিত্রনাট্যে মাবরুর রশিদ বান্নাহর এই নাটক ও এই ঈদের ভালো কাজের একটি। তাহসানের অভিনয়ে ভালো লাগা কাজ করেছে, আরো আছেন ফজলুর রহমান বাবু, মনিরা মিঠু ও চমক।

১০. হ্যালো শুনছেন: মন ভালো করে দেয়া নাটক, রাসায়াত রহমান জিকোর জনপ্রিয় গল্প অবলম্বনে নির্মিত এই নাটক। অনেক সময় এই ধরনের গল্প থেকে ভালো নাটক হয় না, তবে নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান সফল। আফরান নিশো দারুণ, তানজিন তিশার পরিমিত অভিনয়। সবচেয়ে ভালো লেগেছে বৃষ্টির দৃশ্যগুলো, সহসা কোনো নাটকে এমনটা হয়নি। চিত্রগ্রাহকে ছিলেন কামরুল ইসলাম শুভ।

বিশেষ

তপ্ত দুপুর: সুমন আনোয়ারের নাটক, গল্প একজন দরিদ্র জেলে ও তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে। আগের মতো খালে মাছ পাওয়া না যাওয়ায় অভাবে দিন কাটে জেলের, খবর পেয়ে মহাজন তাদের খোঁজখবর নেয়, সাহায্য দিতে থাকে। কিন্তু কেন?

গ্রাম্য নির্ভর নাটকে আজকাল জীবনবোধ পাওয়া যায় না, তবে সুমন আনোয়ার যখন বানাচ্ছেন তখন সেটা দেখতে পাওয়া যায়। যদিও উনার আগের মতো ম্যাজিক নেই, আলোচনাও কম হয় নাটকের। দরিদ্র জেলের চরিত্রে মোশাররফ করিমের অভিনয় অন্যতম প্রাপ্তি, সঙ্গে চরিত্রানুযায়ী সাজ ও পোশাক। এত দারুণভাবে মানিয়েছে। প্রভাও বেশ ভালো করেছেন, সায়কা আহমেদ, হিন্দোল রায় এরাও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র পেয়ে ভালো করেছেন।

এ ছাড়া শেষ প্রান্তে, বদলে যাওয়া মানুষ, মায়ের ডাক, ২১ বছর পরে, রুনু ভাই ভালো লাগার তালিকায় থাকবে।


মন্তব্য করুন