ঈদুল আজহা ২০২৩ : ভালো লাগা নাটকগুলো
বাংলা নাটকের সুদিন এখন অতীত হয়ে গেছে। ওটিটির উত্থান, জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী, প্রখ্যাত নির্মাতাদের অনুপস্থিতি, বাজেট সমস্যা, ভিউয়ের কারণে চটুল নাটকের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলা নাটক যুগ সন্ধিক্ষনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তবুও ঈদে নতুন নাটক দেখা অনেকদিনের অভ্যেস। খারাপ বা এভারেজ নাটকের সংখ্যা অনেক বেশি সত্যি, তবে কিছু নাটক ভালোও হয়েছে।
সেখান থেকে ঈদুল আজহা ২০২৩ এর উল্লেখযোগ্য কিছু নাটক বাছাই করা হলো। তবে ক্রমানুসারে বাছাই করা হয়নি।
এক অসুখে দুইজন অন্ধ: ক্লোজআপ কাছে আসার গল্পে আমরা যার কবিতা শুনতে পাই, সেই কবি পুলক অনিল এইবার নাটক বানিয়েছেন। নাটক পুরোটাই ছিল কাব্যিকতায় ভরা, মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের নাটক মনে করিয়ে দিয়েছিল। ঘটনাক্রমে দেখা হাসপাতালে দেখা দুই তরুণ-তরুণীর ভালোবাসার জটিলতা নিয়েই এই নাটক। এই অস্থির সময়ে এমন নাটক নির্মাণ ভাবনার অতীত। খায়রুল বাসার ও সাফা কবির দুজনই ভালো করেছেন, তবে সব ছাপিয়ে গেছে পুলক অনিলের নির্মাণের আবহ।
বৃষ্টির অপেক্ষায়: কোরিয়ান ড্রামা ‘ওয়েটিং ফর রেইন’ থেকে অনুপ্রাণিত। নির্মাতা এল আর সোহেলের নির্মাণের উপস্থাপনা বেশ ভালো লেগেছে। খায়রুল বাসার-সাদিয়া আয়মান এই মুহূর্তে নাটকে সবচেয়ে সুন্দর জুটি। সঙ্গে বিদ্রোহী দীপনের সিনেমাটোগ্রাফি ও অর্পণের মিউজিক। একটু ধীরগতির, তবে ভালো লাগবে।
কবর: সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত নাটক। অনাগত সন্তানের পৃথিবীতে আগমন নিয়ে দুই স্তরের দুই দম্পতির অপেক্ষা ও প্রত্যাশা নিয়ে এই নাটক। যোবায়েদ আহসানের চিত্রনাট্যে রাফাত মজুমদার রিংকুর পরিচালনায় এই নাটকে তাসনিয়া ফারিণের রূপক চরিত্রে দ্বৈত অভিনয়ের জন্য সাধুবাদ দিতে হয় সংশ্লিষ্টদের, জোভান বেশ ভালো করছে।
সারপ্রাইজ: ২০০০ সালের দিকে বিটিভিতে প্যাকেজ আকারে কিছু পারিবারিক রম-কম হতো, ফেরদৌস হাসানরা বানাতেন, কিছু বছর আগেও আশফাক নিপুণরা বানাতেন। এটা তেমনই নাটক। যদিও গল্পটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে যায় না, তবে উপভোগ্য। সাবিলা নূরের দ্বৈত অভিনয় ও অপূর্বর অভিনয় বেশ হাসিয়েছে। সোহাইল রহমান ও জয়নাল আবেদীনের চিত্রনাট্যে পরিচালক ছিল মাসরিকুল আলম।
সুখ-অসুখ: মেডিকেল পড়ুয়া এক মানসিক রোগী ছেলের গল্প, যাকে গ্রামে আনা হয় বিয়ের জন্য। চাচীর লোভের কারণে বিয়ে ঠিক হয় সাধারণ মেয়ের সাথে। তাদের ভালোবাসা ও সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে এই গল্প। নাসির খানের চিত্রনাট্যে পথিক সাধনের পরিচালনায় অভিনয় করেছে প্রতিশ্রুতিশীল জুটি খায়রুল বাসার-সাদিয়া আয়মান, দুজনই ভালো করেছেন। শিল্পী সরকার অপু নেগেটিভ চরিত্রে দারুণ, গানটাও ভালো।
প্রণয়: নতুন জুটি ইয়াশ রোহান-তটিনীর নাটক। তাদের রসায়ন বেশ ভালো লেগেছে। প্রেমিক-প্রেমিকার পালিয়ে গিয়ে বিয়ের গল্প,তবে শেষটা অন্যরকম। যার জন্য প্লটহোল থাকলেও দেখতে ভালো লেগেছে। এটাও নাসির খানের চিত্রনাট্যে পথিক সাধনের নাটক।
কাছের মানুষ: পারিবারিক নাটক, বাবার মৃত্যুর পর একটা পরিবারে নেমে আসে নানান জটিলতা, যার জন্য সম্পর্কে জটিলতা হয়,দূরত্ব সৃষ্টি হয়। শেষটা তাড়াহুড়ো হলেও অপূর্ব- তৌসিফ-মনিরা মিঠুদের অভিনয় ও চরিত্রগুলোর টানাপোড়েনের জন্য দেখা যায়। তবে তানিয়া বৃষ্টির চরিত্রটি সঠিকভাবে বিকশিত করতে পারেননি নির্মাতা ইমরাউল রাফাত।
জায়গায় খায় জায়গায় ব্রেক: নামটা অদ্ভুত, এই নামের কারণে অনেকেই নাটকটি দেখতে চাইবে না। আমারো প্রথমে ইচ্ছা জাগেনি। প্রিয় মোশাররফ করিমের নাটক, তাই দেখা শুরু করলাম। ভালোই লেগেছে। সাধারণত মোশাররফ করিমের সঙ্গে নতুন অভিনেত্রীরা অভিনয়ে পেরে উঠতে পারেন না, কিন্তু তানিয়া বৃষ্টি পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। জুয়েল এলিনের রচনায় এই নাটকের পরিচালক জাকিউল ইসলাম রিপন।
পুতুলের সংসার: তানজিন তিশার দ্বৈত অভিনয়, গল্পটা মা ও মেয়ের। মেয়ের মাকে খুঁজে বেড়ানোর গল্প। শেষটা তাড়াহুড়ো ও গতানুগতিক হলেও রাফাত মজুমদার রিংকু ভালো করার চেষ্টা করেছেন। তানজিন তিশার অভিনয়ের উন্নতি লক্ষণীয়, চিত্রলেখা গুহকে আঞ্চলিক কমেডির বাইরে দেখতে পেয়ে ভালো লেগেছে। সোহেল মণ্ডল আছেন বিশেষ চরিত্রে।
বুক পকেটে জীবন: আহমেদ তাওকীরের রচনায় মধ্যবিত্ত এক ফটোগ্রাফারের গল্প। মধ্যবিত্ত পরিবারের চিরচেনা দৃশ্যই ছিল প্রতিটা দৃশ্যে। শেষটা ভালো লাগেনি। অনন্য ইমন চেষ্টা করেছেন, তারিক আনাম খান, ইয়াশ রোহান, অলংকার, নিশাত প্রিয়ম, শেলী আহসান ছিলেন অভিনয়ে।
আজ আকাশে চাঁদ নেই: হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখে যারা বড় হয়েছেন তাদের কাছে খুবই পরিচিত ঘরানার নাটক। নির্মাতা মারুফ হোসেন সজীব চেষ্টা করেছেন কিন্তু তখনকার মতো পার্শ্ব অভিনয়শিল্পীরা তো এখন নেই। তবে সংলাপ, সাদিয়া-বাসারের অভিনয়ের জন্য দেখা যায়।
হঠাৎ বৃষ্টি: নাটকের সময়কার ২০০১ সালের পর (‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ অ্যালবাম দেখা গেছে) ততদিনে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র ভিডিও ক্যাসেট বের হয়ে গেছে। তবুও অনেকে না দেখে থাকতে পারেন সেই বিশ্বাসে এই নাটকের গল্প এগিয়েছে। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ সিনেমা নিয়ে পাড়ায় আসা সুন্দরী মায়াবী তরুণী ও সিডির দোকানদারের সম্পর্ক গড়ে উঠা নিয়ে রুবেল আনুশ এই নাটক বানিয়েছেন। ভালো থিম, ভালো দৃশ্যায়ন ও সংলাপ, ইয়াশ- তটিনীর রসায়ন দেখতে ভালো লেগেছে ঠিক; কিন্তু এদের সম্পর্কের এমন পরিণতি দেখানোর পেছনে জোরালো ভূমিকা নেই, আরো গভীরতায় যেতে পারতো।
পুনর্জন্ম অন্তিম পর্ব: ভিকি জাহেদকে স্বাতন্ত্র্য করেছে এই সিরিজ। আফরান নিশো-মেহজাবীন অভিনীত এই ঈদের একমাত্র নাটক, দৈর্ঘ্য সিনেমার মতোই। সিরিজ নিয়ে আগ্রহ থাকলেও দ্বিতীয় কিস্তি থেকেই মান পড়তে থাকে, অন্তিম পর্বটাও বেশ জট পাকিয়ে ফেলেছিল।
আঁধার: ভিকি জাহেদের এই নাটক নিয়ে আলোচনা কম, তুলনামূলক ভালোই। শেষ চমক আগে বুঝতে পারলেও দেখতে আগ্রহ কমে যায় না। তৌসিফ-তানজিন তিশা চেষ্টা করেছেন নিজেদের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতেন।
শেষ ঘুম: পরিচালকের নাম না কেউ দেখলে নির্দ্বিধায় সবাই বলে দেবে এটা ভিকি জাহেদের নাটক। তবে এই নাটকের পরিচালক ভিকি নন, রাগিব আহসান পিয়াল নামের একজন। পুরোটাই ভিকি জাহেদকে অনুপ্রাণিত মনে হলো। তবে ভালোই লেগেছে। তৌসিফ মাহবুব নিজেকে আকর্ষণীয় রেখেছেন, তটিনী অল্পদিনেই কঠিন চরিত্র পেয়ে গেলেন, ফলাফল স্বাভাবিক ভাবেই মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছে।