ঈদ উৎসবকে রাঙিয়ে দিলো ‘উৎসব’

ঈদের তৃতীয় দিন পরিবার নিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম ‘উৎসব’, না গিয়েও বা উপায় কী! উৎসব টিম শুরু থেকেই বলছে ‘পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ’!

যাই হোক, আসল কথায় আসি। উৎসবকে আমি এক কথায় বলব, এবারের ঈদের লম্বা রেসের ঘোড়া। দীর্ঘদিন পর একঝাঁক তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মিলন মেলার পাশাপাশি নব্বই দশকের তাদের জনপ্রিয় নাটকের জনপ্রিয় সংলাপগুলোর রেফারেন্স; সব মিলিয়ে এটা যেন নাইন্টিজ কিডদের জন্য একটা বড় ট্রিবিউট!

তানিম নূরের পূর্ববর্তী কাজকেও অনেক দিক থেকে ছাপিয়ে গেছে ‘উৎসব’। সহজ-সুন্দর সাধারণ একটি গল্পকে প্রাণবন্ত সংলাপ এবং বাস্তবিক হাস্যরসের মাধ্যমে পরিচালক ফুটিয়ে তুলেছেন এজন্য পরিচালকের প্রশংসা করতেই হয়। কোনো ধরনের ১৮+ সংলাপ ছাড়াই কমেডি সেকশন খুব ভালোভাবে ওয়ার্ক করেছে যেটা সচরাচর আজকাল দেখাই যায় না।

প্লট ও সংলাপ

ছবির প্লট নেওয়া হয়েছে চার্লস ডিকেন্সের ‘আ ক্রিসমাস ক্যারল’-এর ছায়া অবলম্বনে। সমাজের একজন বদরাগী, কৃপণ ও নিতান্তই রসকসহীন একজন বয়স্ক মানুষ এবং হঠাৎ করেই তার জীবন বদলে যাওয়া নিয়েই গল্প এগিয়েছে। গল্পকে পরিচালক কোনোভাবেই হেলে পড়তে দেননি; বরং প্রাণবন্ত সংলাপ, দুর্দান্ত কমেডি এবং গল্পের গাঁথুনি দর্শককে এক মিনিটের জন্যও বিরক্ত করেনি। আমার কাছে মনে হয়েছে পরিচালক এই ছবিতে রাজকুমার হিরানির কাজগুলো থেকে প্রভাবিত হয়ে চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন এবং গল্পের বুননে সে ছাপ স্পষ্ট।

অভিনয়

ছবির মূল চরিত্র জাহাঙ্গীরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। দীর্ঘদিন পর যেন সেই কিংবদন্তি জাহিদ হাসানকে খুঁজে পেলাম! অসাধারণ অভিনয়, অভিব্যক্তি দিয়ে যেন সেই নব্বই দশকের জাহিদ হাসানকেই খুঁজে পাচ্ছিলাম বারবার।

জাহিদ হাসানের তরুণ বয়সের চরিত্রের সৌম্য জ্যোতিও করেছেন অসাধারণ অভিনয়। আফসানা মিমির তরুণ চরিত্রে সাদিয়া আয়মান বারবার মুগ্ধ করেই গেছেন যতক্ষণ পর্দায় ছিলেন। বাকি চরিত্রগুলোতে চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান, অপি করিম, আফসানা মিমি, তারেক আনাম সকলেই ছোট ছোট চরিত্রে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন।

গান

পরিচালক তানিম নূর প্রতিবারই তার কাজে জনপ্রিয় ব্যান্ড গান সংযুক্ত করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ছবিতে গান ছিল দুটি; আর্টসেলের ‘ধূসর সময়’ এবং লেভেল ফাইভের ‘তুমি’। পর্দায় গান দুটি যখনই এসেছে, হলে দর্শক জোরে জোরে গাইছিলো গান দুটো। প্লেসমেন্টও ছিলো বেশ ভালো।

সবশেষে বলতে চাই ‘উৎসব’ একটি পরিপূর্ণ ফ্যামিলি কমেডি ড্রামা এবং গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে একটা দুর্দান্ত প্রচেষ্টা। সবাইকে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ‘উৎসব’ দেখার জন্য আমন্ত্রণ রইলো।