Select Page

উড়াল: হাসিকান্নায় ওড়াওড়ি

উড়াল: হাসিকান্নায় ওড়াওড়ি

ওড়াওড়ির দিন আমরা সবাই পেরিয়ে আসি, আমাদের ফেলে আসা দিন একটা সময় স্মৃতির বই হাতে দাঁড়িয়ে থাকে আমাদেরই সামনে। আমরা নস্টালজিক হই, হাসি, কাঁদি, স্মৃতিচারণ করি। সেখানে বন্ধুত্ব, প্রেম, আনন্দ, বেদনা সবই হাত ধরাধরি করে পাশাপাশি থাকে। ওড়াওড়ির সেই দিনলিপির তারুণ্যদীপ্ত ছবি ‘উড়াল’।

তরুণ নির্মাতা জোবায়দুর রহমানের প্রথম ছবি ‘উড়াল’ একটা সরল সুন্দর প্রচেষ্টার ছবি। নির্মাণের প্রচেষ্টার মধ্যে যদি সততা থাকে তবে সে কাজ ভালো হতে বাধ্য। একজন তরুণ নির্মাতার প্রথম ছবি যখন ন্যাচারাল প্রেজেন্টেশনের হয় তখন তাকে অবশ্যই সম্ভাবনাময় নির্মাতা বলা সঙ্গত।

‘উড়াল’ ছবির নামকরণের মধ্যেই একটা তারুণ্য তারুণ্য ব্যাপার আছে। উড়োজাহাজ বা ট্রেনের সাথে তিন বন্ধুর সাইকেল চালিয়ে প্রতিযোগিতা করাটা কোনো সাধারণ দৃশ্যের অবতারণা করা নয়, মূলত এটি একটা বয়সের বাধাহীন স্বাধীনতাকে সিগনিফাই করার মতো একটা ব্যাপার হয়ে ওঠে। তার সাথে আনন্দ-বেদনার গল্পের দারুণ উপস্থাপনা তো আছেই।

গল্পটা সহজ। তিন বন্ধুর স্বাধীন ছুটে চলা জীবন যার মধ্যে অঢেল আনন্দের উপকরণ আছে। তাদের সম্পর্কের সমীকরণ নব্বই দশকীয় প্রজন্মের চিরপরিচিত বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছে। আমরা যারা তখনকার সময়ে বড় হয়েছি তারা যে ধরনের জীবনযাপন করতাম তার ছাপ আছে। বন্ধুত্বে কিছু বিষয় তো চিরকালই কমন তাই সেসব বিষয়ের ছাপ খুব স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে ছবিতে।

ছবির প্রথমার্ধ্বের সাথে দ্বিতীয়ার্ধ্বে গল্পের যে টার্ন ছিল সেটাই এ ছবির প্লটকে শক্তিশালী করেছে। শুধুই আনন্দ দিয়েই তো আর বন্ধুত্ব না, জীবন না সেখানে বেদনাও চিরদিনের সত্য তাই গল্পকে জীবনমুখী করতে এর কোনো বিকল্প ছিল না। পরিচালক খুব ভালোভাবেই সেটা করতে পেরেছেন। ছবির শেষের বিশ মিনিট করুণ বাস্তবতাকে বাস্তবসম্মতভাবে দেখানো হয়েছে। বাস্তব যে কঠিন সেটাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, কোনো আরোপিত বিষয় নেই।

ছবির অভিনয়শিল্পীরা সব নতুন মুখ। তাদের অভিনয়ে প্রথম ও শেষ যে বিষয়টি বলার আছে তা হলো ন্যাচারালিটি। কারো অভিনয়ে কোনো জড়তা নেই। এমন ন্যাচারাল অভিনয় দিয়ে প্রথম ছবির নির্মাণ করতে পারাটা অবশ্যই খুব প্রশংসার বিষয়। রঞ্জু, বাচ্চু, মতি তিনবন্ধুর চরিত্রের অভিনেতারা উদ্দাম ছুটে চলা জীবনের অভিনয়ে যত স্বতঃস্ফূর্ত তেমনি জীবনে পরিবর্তন এলে তাদের অভিনয়ের ধরনেও পরিবর্তন আসাটা বেশ ভালো দিক। নায়িকার বালিকাসুলভ চপলতা আর কঠিন বাস্তবতায় নির্বাক হবার অভিনয় বেশ ভালো ছিল। বাকি চরিত্রগুলোও ন্যাচারাল ছিল। ওভারঅল ভালো অভিনয়ের ছবি হয়ে উঠেছে।

লোকেশনে মফস্বলী পরিবেশ ফুটিয়ে তুলতে দিনাজপুরের পার্বতীপুর, নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের চিত্রায়ণ ছিল ন্যাচারাল। ভাষাগত দিকে এ অঞ্চলের লোকাল অ্যাকসেন্টের ব্যবহার উপভোগ্যভাবে এসেছে। ‘যাওচো (যাচ্ছি), খাওচো (খাচ্ছি), দেওচো (দিচ্ছি), তোমাক (তোমার), মুই (আমি), মোক (আমাকে) – এই রীতি ব্যবহৃত হয়েছে। দৃশ্যায়নে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনো কমতি নেই। বিজিএমও উল্লেখ করার মতো ছিল বিশেষ করে ফিনিশিং-এ বৃষ্টির মিনিংফুল দৃশ্যটিতে বিজিএম ছিল টপনচ।

একজন জোবায়দুর রহমানকে পরিচর্যা করতে হবে আগামী দিনের ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য। ‘উড়াল’ তার প্রথম ছবি হলেও তার কাজ বলে দেয় বেশ অভিজ্ঞভাবেই তার আবির্ভাব ঘটেছে চলচ্চিত্র নির্মাণে। ভালো সাপোর্ট পেলে এমন নির্মাতারা নির্মাণের জগতে যে ভালোভাবেই ‘উড়াল’ দিতে পারে তা অন্তত পরিষ্কার।

রেটিং – ৮/১০


About The Author

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

Leave a reply