উৎসর্গ মিঠুন
কিছু কিছু তারকা সবসময়ই আলোচনার বাইরে থাকেন। তাঁদের নিয়ে লেখালেখিও তেমন চোখে পড়ে না। চলচ্চিত্রের প্রতি ডেডিকেশন থেকে তাঁরা কাজ করেছেন। বিনিময়ে দর্শকের কাছে পাওয়া ভালোবাসা থেকেই তাঁদের লাভটা জুটে যায়।আজকাল প্রচার বেশি পেয়ে যারা অভিনয়ের জায়গাটাই হালকা করে রাখে তাদের লাভের অঙ্কে শূণ্যই জোটে। প্রকৃৃত তারকারা এসবের উর্ধ্বে।
একজন মিঠুন আশির দশকের আলোচিত নায়ক, অভিনেতা, স্ক্রিপ্ট রাইটার, গীতিকার। মূলনাম আবুল কাশেম মিঠুন। ছোটবেলায় বিটিভিতে পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি দেখার সময় তাঁর পুরো নামটা ভেসে উঠত ‘কাহিনী’ অংশে। ১৯৫৮ সালে জন্ম। দেখতে সুদর্শন এবং দেখামাত্রই ভারি ব্যক্তিত্বের ছাপ মেলে তাঁর চেহারায়। আকর্ষণীয় দিক হলো তাঁর ভয়েস। বলিষ্ঠ লাগত শুনতে।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি গল্পও লিখতেন। সেসূত্রে তাঁর ছবির তালিকা দুইভাবে হবে।
* নায়ক/অভিনেতা মিঠুন :
নিকাহ, সাক্ষাৎ, আনারকলি, বেদের মেয়ে জোছনা, চাকর, জিদ, কুসুমকলি, ভেজা চোখ, ত্যাগ, গৃহলক্ষ্মী, বিরাজ বৌ, স্বর্গ নরক, কসম, নরম গরম, চ্যালেন্জ, দিদার, পরিচয়, দস্যুরাণী ফুলন দেবী, সর্দার, চাঁদের হাসি, ত্যাগ, চাকর, জীবনসঙ্গী, মহান বন্ধু, ছোবল, শাস্তির বদলে শাস্তি, মুন্না মাস্তান, বাঘিনী কন্যা, এ জীবন তোমার আমার, বাবা কেন চাকর, ম্যাডাম ফুলি।
* কাহিনীকার মিঠুন:
ঈদ মোবারক, প্রেম প্রতিজ্ঞা, ত্যাজ্যপুত্র, কুসুমকলি, মাসুম, অন্ধবধূ।
মিঠুন অসাধারণ অভিনেতা। তাঁর বলিষ্ঠ অভিনয়ে রোমান্টিক, স্যাড সব ধরনের অভিনয়ে দাপুটে ছিলেন।
‘শাস্তির বদলে শাস্তি’ ছবিতে কাঞ্চনের ডাবল রোল থাকে। বোকা কাঞ্চন মারা যাবার পরে সন্ত্রাসী কাঞ্চনকে গড়ে নেবার দায়িত্বটা আসে মিঠুনের হাতে। দুর্দান্ত ছবি। ‘বাঘিনী কন্যা’ ছবিতেও আহত মৌসুমীকে প্রতিশোধের জন্য প্রশিক্ষণ দেয় মিঠুন। ‘মহান বন্ধু’ ছবিতে ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল চৌধুরী, মিঠুন তিনবন্ধু থাকে। বন্ধুত্বের দিক থেকে চমৎকার ছবি। ‘ভেজা চোখ’ ছবিতে কাঞ্চন-মিঠুন বন্ধুত্বে ‘তুই তো কাল চলে যাবি আমাকে ছেড়ে/পরশু কি হবে দেখা এমন করে’ গানটি বহুল জনপ্রিয়।
‘জীবনসঙ্গী’ ছবিতে জাহিদ হাসানের বাবার চরিত্রে ছিলেন। ‘সাক্ষাৎ’ ছবিতে খলনায়ক ছিলেন। মান্নাকে চাবুকপেটা করাই ছিল তাঁর কাজ। ‘নিকাহ’ ছবিটা ভোলা যায় না। প্যাথেটিক গল্প। সুচরিতার স্বামী থাকে মিঠুন। অকালে মারা যাবার পরে দেবর কাঞ্চনকে দিয়ে নিকাহ হয়। অসাধারণ ফ্যামিলি ড্রামা। শরৎচন্দ্রের গল্প থেকে নির্মিত ‘বিরাজ বৌ’ ছবিটি অসাধারণ কাজ তাঁর।বড়ভাই ফারুককে অবহেলা করত। পরে সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় শাস্ত্রমতে শাস্তি হিশেবে। মৃত্যুর আগে ক্ষমা চায়। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ আর একটা গ্রেট কাজ তাঁর। তবে ‘বাবা কেন চাকর’ তাঁর ভাইটাল কাজ। কারণ বাবা রাজ্জাককে ‘চাকর’ বলা বা বানানোর রোলটা তাঁরই ছিল। মা ডলি জহুর মারা গেলে লাশের কাছে যেতে দেয় না রাজ্জাক। তখন বাবা-ছেলের অভিনয় অনবদ্য লাগে।
মিঠুন ফুল প্যাকেজ অভিনয়শিল্পী। রাজা-বাদশা বা সাপভিত্তিক কমার্শিয়াল ফোক ছবি যেমন করেছেন সিরিয়াস কাজ হিশেবে সাহিত্যনির্ভর ‘বিরাজ বৌ’ করেছেন। নিজেকে অনেকভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন।
২০১৫ সালের ২৪ মে তাঁর মৃত্যু হয়।তাঁকে আগামী প্রজন্মের কাছে পরিচিত করতে লেখালেখি হোক।